ভয়াল সেই প্রমোদতরীতে আতঙ্ক আর অপেক্ষা

ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
Spread the love

আয়না২৪ ডেস্ক

মরণঘাতী  করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে জাপানের উপকূলে  ইয়োকোহামা বন্দরে আটকে আছে ডায়মন্ড প্রিন্সেস নামে একটি  বিশাল প্রমোদতরী। এই প্রমোদতরী ২০০ জনেরও বেশি যাত্রী করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার  আরো কিছু যাত্রী নতুন করে সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়েছে।  আন্তর্জাতিক  গণমাধ্যম  বিবিসি এ খবর দিয়েছে।

 ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজটিতে শেফের কাজ করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের বিনয় সরকার। জাহাজ থেকেই তিনি কথা বলেছেন বিবিসি বাংলার সঙ্গে। তিনি বর্ণনা করেছেন ভাইরাস আক্রান্ত জাহাজে আটকে থাকা অবস্থায় কীভাবে  তাদের দিন কাটছে।

বিনয় সরকার বলেন, তিন হাজার ৭০০ আরোহী নিয়ে আমাদের জাহাজটি এখন এক বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে। অনেক কড়াকড়ি করা হচ্ছে। যারা খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন তারা মুখোশ, গ্লাভস, প্লাস্টিকের অ্যাপ্রন ইত্যাদি পরে এ কাজ করছেন। জাহাজে ক্রু আছেন এক হাজার ৪৫ জন।

বিনয় বলেন, জাহাজের বাইরে ৫০টি অ্যামবুলেন্স  প্রস্তুত রয়েছে। চিকিৎসকদের দল, উদ্ধারকারী দল তাদের ভালো হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। মোট ৫৬টি দেশের দুহাজার ৬০০  এর  বেশি যাত্রী আছেন এ জাহাজে। সব যাত্রীকেই এখন আলাদা  রাখা হয়েছে। তাদের কেবিনে তিন বেলা খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, মানসিকভাবে তাদের ভালো রাখার জন্য অনেক কিছুই করা হচ্ছে। এই যাত্রীরা পুরো ভ্রমণের জন্য যত টাকা খরচ করেছেন সব ফেরত দেওয়া হবে। ওয়াইনের মতো পানীয় ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। যে ওয়াইন এক বোতল কিনতে ভারতীয় মুদ্রায় ৮-১০ হাজার রুপি খরচ হতো – সেই ওয়াইন তাদের ঘরে ঘরে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ যাত্রীই শান্ত আছেন। তারা অপেক্ষা করছেন ১৯ ফেব্রুয়ারির জন্য যেদিন কোয়ারেন্টিনের ১৪ দিন পুরো হবে। তার পর সবাই বাড়ি যাবেন, এই অপেক্ষায় আছেন তারা। কিন্তু এর পরও যদি মেয়াদ আরো বাড়ানো হয় তাহলে সত্যি বলছি এই জাহাজে এক বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হবে।

বিনয় আরো বলেন, সবাই পাগল হয়ে যাবে। কী হবে এটা ভবিষ্যৎই বলতে পারে। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা বা ইসরায়েলের মতো দেশের কিছু যাত্রী অসন্তুষ্ট হয়ে আছেন। তারা জাহাজ থেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্রমাগত লিখছেন, আমরা এখানে আটকা পড়ে আছি, উই নিড টু গো। জাপানের চিকিৎসক  এবং সেনাবাহিনীর প্রায় ৫০ জন এখন জাহাজে অবস্থান করছে। এরই মধ্যে ৬০০ যাত্রীকে পরীক্ষা করেছেন তারা। চিকিৎসকেরা  যাত্রীদের বলে দিয়েছেন কারো শরীরে এই করোনাভাইরাস ঢুকে থাকলে ১৪ দিনের মধ্যে তার লক্ষণ দেখা যাবে। কারো যদি জ্বর-শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায় তাহলেই তাদের পরীক্ষা করা হবে।

বিনয়  আরও  বলেন, যাদের এরই মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে তারা খুবই ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন। আমি শুনেছি আমাদের জাহাজের তিন জন ক্রু করোনাভাইরাস পজিটিভ ছিল, তাদের বয়স কম ছিল। চিকিৎসার পর তারা এখন নেগেটিভ হয়েছে অর্থাৎ ভালো হয়ে গেছে। তবে এটাও শুনেছি যে দুই থেকে তিন জন যাত্রী ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছে, হয়তো তারা মারাও যেতে পারে দু-একদিনের মধ্যে। কারণ তাদের বয়স ৭০ এর ওপরে।

তিনি বলেন, আসলে কেউই ভালো নেই। যতই সুবিধা দেওয়া হোক, আপনি চিন্তা করুন, এ অবস্থায় আপনার মনে হবে কালকে আমারও রোগ হতে পারে। ক্রু থেকে শুরু করে যাত্রী পর্যন্ত সবাই মানসিক চাপের মধ্যে আছেন। আমাদের সবার মনেই এই একটাই ভাবনা ঘুরছে আমরা কবে নিরাপদ হবো, কবে বাড়ি যেতে পারবো।

জাপান বলেছে,  ইয়োকোহামা বন্দরে ডায়মণ্ড প্রিন্সেস নামে প্রমোদতরীটি আটকে রাখা হয়েছে সেখানে ৮০ ওপর যাদের বয়স, তারা সংক্রমিত নয় সেটা নিশ্চিত করা গেলে তাদের জাহাজ থেকে নামার অনুমতি দেওয়া হবে। চীনের বাইরে একক কোন জায়গায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে এই জাহাজেই।

জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেছেন, আশি-উর্ধ্ব যাত্রীদের স্থলে কোয়ারেন্টিন অবস্থায় থাকার অনুমতি দেওয়া হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২০ জানুয়ারি জাপানের ইয়োকোহামা থেকে জাহাজটি রওনা দেয়। চিনের বন্দরে নোঙর ফেলেছিল সেটি। সেখান থেকে বেরোনোর পরে মাঝসমুদ্রে খবর মেলে, এক যাত্রীর দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিহ্ন মিলেছে। ২ ফেব্রুয়ারি জাপান সরকারের নির্দেশে টোকিয়োয় ফেরে ওই জাহাজ। তার পর থেকে জাহাজে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।