শনিতে কত ঘণ্টায় দিন?

জানুয়ারি ২৯, ২০১৯
Spread the love

আয়না২৪ প্রতিবেদক

যদি প্রশ্ন করা হয় কত ঘন্টায় একদিন? তবে উত্তর যে ২৪ ঘন্টা সেটা সবাই জানে।  কিন্তু যদি  প্রশ্নটা  এমন হয়, যে শনি গ্রহে কত ঘণ্টায় এক দিন? নিশ্চয়ই প্রশ্নের জবাব সহজ নয়। কারণ, শনির দিনের হিসাবটা কেবলই উদঘাটন করেছেন বিজ্ঞানীরা।গেল শনিবার শনিতে সেই অংকের হিসাব মিলিয়েয়েছে নাসার বিজ্ঞানীরা। তাহলে উত্তরটা কী?  চলুন জেনে নিই।

যুক্তরাষ্টের মহাকাশ সংস্থা নাসার ক্যাসিনি নামে একটি মহাকাশযান  দীর্ঘদিন ধরে শনি গ্রহের বলয় ধরে গবেষণা এই হিসাবই কষছিল। কিন্তু মহাকাশে ক্যাসিনি দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় সেই হিসাব কষার কাজ  পিছিয়ে যায়। নাসার বিজ্ঞানীরা  জানাচ্ছেন, শনি গ্রহের দিনরাতের দৈর্ঘ্য পৃথিবীর চেয়ে অনেকটাই কম। পৃথিবীতে যেমন ২৪ ঘণ্টায় এক দিন, সেখানে শনি গ্রহে মাত্র সাড়ে ১০ ঘণ্টায় একদিন।  সুস্পষ্টভাবে বললে – ১০ ঘণ্টা ৩৩ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডে একদিন।

মহাকাশ সংস্থা নাসার গবেষক ক্রিস্টোফার ম্যানকোভিচের ভাষায়, ক্ষণ গণনার হিসাবটা জটিল হয়ে যাচ্ছিল শনির বলয়ের জন্য। পৃথিবী বা জুপিটারের অক্ষ বরাবর কাজ করে চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি। কিন্তু শনির চারপাশে অসংখ্য বলয়  থাকায়, কোন বলয় বরাবর অক্ষের ঘূর্ণন হয়, সেটা বোঝা মুশকিল ছিল। কেননা গ্রহের আবর্তনের সময় বলয়ের সঙ্গে অক্ষের ঘূর্ণন মিশে একাকার হয়ে যায়। ক্যাসিনি থেকে পাওয়া তথ্যগুলো নিয়ে তিনি শনির একটি মডেল তৈরি করেন। এতে চৌম্বক ক্ষেত্রকে ধরেই সঠিক অক্ষ খুঁজে পান তাঁরা। এরপরই তাঁরা অংকের উত্তর মিলিয়ে ফেলেন। এই গবেষণার আরেক  সদস্য  লিন্ডা স্পিলকার। তিনি বলেন, ‘ওই বলয়গুলোর  মধ্যেই লুকিয়ে ছিল সমস্ত অংক। বলয়ের একেকটি কণার কম্পন ধরে তাঁরা হিসাব এগিয়ে নেন। সে অনেক দীর্ঘ পদ্ধতি ছিল। হবেষণার  এই  ফলাফলে ত্রুটি নগণ্য বলেই মনে করছেন তাঁরা।  

নাসার পক্ষ থেকে শনির দিন-রাত নিয়ে সদ্যপ্রাপ্ত এমন তথ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের বিস্তারিত অংক, পদ্ধতিসহ প্রকাশ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে শনি গ্রহ সম্পর্কিত গবেষণার ক্ষেত্রে এই মৌলিক বিষয়টি সকলের কাছে থাকে। নাসার পক্ষ থেকে ক্যাসিনি নামে মহাকাশযানটি গত ১৩ বছর ধরে শনি গ্রহে ঘুরেফিরে তথ্য সংগ্রহ করছিল। মহাকাশ যান থেকে পাঠানো তথ্য থেকে এর আগে বলয় সম্পর্কেই ধারণা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট  বিজ্ঞানীরা।

কিন্তু ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে, মহাকাশযান ক্যাসিনির জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় মাঝপথে ভেঙে পড়ে। তাতেই কিছুটা বিপত্তি ঘটে এই গবেষণায়। তবে হাল ছেড়ে দেননি  তরুণ গবেষক ক্রিস্টোফার ম্যানকোভিচ। তাঁর দৃঢ়তা, সফল  উদ্যোগ, পরিশ্রমের ফলে শনির মডেল তৈরি হওয়ায় এবং ক্যাসিনির পাঠানো তথ্য হাতে থাকায় তা পরবর্তী সময়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। দিন-রাতের এই হিসাব স্পষ্ট হওয়ার বিষয়টি নাসার কাছে বড় সাফল্য। প্রাথমিক এই তথ্যের ফলে শনি সম্পর্কে পদার্থবিজ্ঞানের আরো কিছু অংকের উত্তর সহজে মিলবে বলে আশা করছেন এর গবেষকেরা।  শনির এই তথ্য পাওয়ার ফলে  মানুষের সাধারণ জ্ঞানের পরিধি কিছুটা বাড়ল।