প্রাচীনকালে পৃৃথিবীর ভয়ঙ্কর সব শাস্তি

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯
Spread the love

আধুনিককালে  আইন ও এর শাস্তি অনেকটাই মানবিকতার মানদণ্ড নির্ভর করে  প্রণীত হয়েছে।  কিন্তু প্রাচীন যুগে এমন কিছু ভয়ঙ্কর  শাস্তির ব্যবস্থা ছিল যা শুনলে যে কেউ শিউরে উঠবেন।  এগুলো এতোটা্ই   নৃশংস, আমানবিক ও হিংস্র ছিল যে এখনকার সময়ে  তা চিন্তা করাও যায় না। বিশ্বের কুখ্যাত এসব শাস্তি নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে প্রজাদের মধ্যে। আবার আতঙ্ক ছড়িয়েছে মানুষের মধ্যে। ত্রাস সৃষ্টি করেছে, প্রাণ কেড়েছে হাজার হাজার মানুষের।একটা সময় আবার বিলোপ করা হয়েছে  এসব ভয়ঙ্কর শাস্তির বিধান। আসুন ছবিতে আমরা এমন  কিছু শাস্তির কথা বিষয় জেনে নিই আজ।  অনলাইন অবলম্বনে  প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন-   রাকিবুল ইসলাম

ইমপেলমেন্ট 

ইমপেলমেন্ট বা শূলে চড়ানো কথাটা  এখনো অপরিচিত  নয়। এক সময় এই   ভয়ঙ্কর শাস্তির বিধান চালু ‍ছিল ব্যাবিলনে। এখন থেকে  প্রায় তিন হাজার বছর আগে।। একটা ধাতব পিলার বা থাম, যা ক্রমশ সরু আর ছুঁচালো হয়ে ওপরের দিকে উঠে  গেছে। এই থাম-এর ছুঁচালো অংশের ওপর দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বসিয়ে দিলে  ধাতব পিলারের ছুঁচলো অংশটি মাথা ফুঁড়ে বেড়িয়ে যেতো। 

 

গিলোটিন

গিলোটিন (Guillotine)

গিলোটিন (Guillotineকাঠের  লম্বা ফ্রেমের ওপরের দিকে একটি ভারি ধারালো ব্লেড ঝুঁলত। দড়ি বা  শিকল দিয়ে এই ব্লেডের ওঠা-নামা নিয়ন্ত্রিত হত। ফ্রেমের একদম নিচে একটি খাঁজের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হতো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মাথা। তারপর শিকল ছেড়ে দিলেই ধারালো  ব্লেড সজোরে নেমে এসে শরীর থেকে মাথাটা কেটে বিচ্ছিন্ন করে দিত। ফরাসী বিপ্লবের আগে সপ্তদশ শতকে এই মারণ যন্ত্রটির ব্যাপক প্রয়োগ হয়েছিল। পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চালু হয় ১৭০০ শতকে। 

ফ্রান্সে ১৭৮৯ সালে  জোশেফ ইগনেস নামে এক চিকিৎসক প্রথম গিলোটিনের প্রবর্তন করেন। ফরাসি বিপ্লবের  সময় দোষীদের শাস্তি দিতে তিনি এ ভয়ঙ্কর  যন্ত্রটির সুপারিশ করেছিলেন। ইতিহাস বলছে, ফরাসী বিল্পবের সময় ১৭৯১ সালের জুনে ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই ছদ্মবেশে ভার্নেতে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন।  ১৯ মাসের মাথায় ১৭৯৩ সালের ২১ জানুয়ারি রাজা  লুইকে গিলোটিনে চড়িয়েহত্যা করা  হয়েছিল।  ১৭৯২ সালের ২৫ এপ্রিল ডি গ্রিভ শহরের উন্মুক্ত প্রান্তরে গিলোটিন নামে অভিনব এই মৃত্যু যন্ত্রটি স্থাপন করা হয় ও প্রথমবারের মতো একজন `হাইওয়ে ম্যান`-এর শিরশ্ছেদ করার মধ্যদিয়ে এর ব্যবহার শুরু হয়। ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর প্যারিসের ডি-লা কনকর্ডে প্রায় চার হাজার বন্দির শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল

 

সিদ্ধ করা

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকেএকটি পানি ভর্তি পাত্রের মধ্যে রেখে   প্রথমে ঠাণ্ডা, তারপর  পাত্রের  নিচে আগুন জ্বেলে দেওয়া হতো। এতে  পানি ধীরে ধীরে গরম হয়তো এবং বন্দী জিবন্ত সেদ্ধ হত। এই ভাবে এক সময় সে মারা যেত।. শাস্তির এই পদ্ধতিটি  চর্চা হত প্রাচীন চীনে। বলা হয় যে, মৃত্যুদণ্ডের এই ভয়ঙ্কর পদ্ধতি পনের শতক পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে  বিদ্যমান ছিল।  জাপান,ফিজি,পাপুয়া নিউগিনিতেও এই শাস্তির তথ্য রয়েছে। এমনকি মোঘল আমলে ১৬৭৫ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলেেএই শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।

দা কফিন ট্র্যাপ

অপরাধীদের একটি ছোট লোহার কফিনের ভেতরে জ্যান্ত ভরে রাখা হতো। এবং এরমধ্যে অপরাধী ব্যক্তি ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তো এবং তার কংকাল পড়ে থাকতো কফিনের ভেতরে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী কফিনের আকার ছোট-বড় হতো। মধ্যযুগের শেষ ভাগে ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে কফিন টর্চা র নামে একই প্রকৃতির আরেক মারণ যন্ত্রের ব্যবহার হতো।  তবে সেটায় কিছুটা ভিন্নতা ছিল।  এখানে একটি লোহার খাঁচার মধ্যে দণ্ডিত ব্যক্তিকে ঢুকিয়ে ওই খাঁচাটিকে শূন্যে ঝুঁলিয়ে দেওয়া হত। এরপর খাঁচার তলায় আগুন লাগিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হতো।

দা ব্রেযেন বুল (Brazen bull)

দা ব্রেযেন বুল (Brazen bull) নামে  ধাতব নির্মিত  ষাঁড়ের ভেতরে অপরাধীতে ভরে  এরপর  ষাঁড়ের নিচ দিক থেকে তাপ নিয়ে মেরে ফেলার এই প্রক্রিয়াটিকে  দা ব্রেযেন বুল বলা হতো। 

দা র‍্যাক

অপরাধীদের এর  ওপর বেঁধে ওপর-নিচ করা হতো। যতক্ষণ তার   অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন না হতো ততক্ষণ এই ওপর-নিচ টানাটানি চলতো।  

দা স্প্যানিশ ডাঙ্কি

 ধারালো কাঠের টুকরোর ওপর অপরাধীকে বসিয়ে  পায়ের সঙ্গে ভারী পাথর বেঁধে দেওয়া হতো। এতে ধীরে ধীরে অপরাধীদের শরীর দ্বিখণ্ডিত হয়ে যেত।

 

বিশেষ অঙ্গ কর্তনের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড

 দেহের বিশেষ  অঙ্গগুলো কেটে মৃত্যুদণ্ড কার্য করের বিধান ছিল। জাপান,ইংল্যান্ড ,নেদারল্যান্ড, বেলজিয়ামে এই পদ্ধতি চালু ছিল। এটি ছিল সবচেয়ে গুরুতর শাস্তি ।  চুরি এবং ব্যভিচারের  শাস্তি হিসেবে এটার প্রচলন ছিল। ইংল্যান্ডে disembowelment বেশিরভাগই ছিল রেওয়াজ । দেহের অত্যাবশ্যক অঙ্গ শরীর থেকে এক এক করে ছুড়ি বা ধারালো কোনো অস্ত্র দ্বারা অপসারণ করা হত বন্দী মারা না যাওয়া পর্যন্ত।

ব্যাম্বু টরচার

এশিয়ার দেশগুলোতে ব্যাম্বু টরচারে শাস্তির প্রচলন বেশি ছিল। অপরাধীকে উলঙ্গ করে বাঁশ বাগানে বেঁধে রাখা হতো। এরপর ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন দিকে বাঁশ ঢুকিয়ে দেওয়া হতো!

নি স্প্লিটার

অপরাধীদের এর ভেতর হাঁটু ঢুকিয়ে দেওয়া হতো এবং স্ক্রুগুলো ধীরে ধীরে পায়ের ভেতর বিধেঁ যেত।

স টরচার

সঅপরাধীদের উল্টো করে ঝুঁলিয়ে দেওয়া হতো এবং বিশাল করাত দিয়ে তাদের শরীরের মাঝখান দিয়ে কেটে ফেলা হতো। এটাকে স টর্চার বলা হতো।পঞ্চদশ শতকের গোড়ার দিকে এই ভয়ঙ্কর শাস্তির প্রচলন হয় ইহুদিদের মধ্যে।এই পদ্ধতিটি  ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ এশিয়তেও চালু ছিল। মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে উল্টো করে দুই পা দুই দিকে ফাঁক করে বেঁধে রাখা হতো। এরপর  ব্যক্তির যৌনাঙ্গ বরাবর করাত রেখে দেহকে মাঝ বরাবর কেটে ফেলা হতো। মধ্যযুগের অমানবিক মৃত্যুদণ্ডের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম।

র‍্যাট টরচার

অপরাধীদের তলপেটে  খাঁচায় রাখা হতো এবং তাতে ইঁদুর  থাকতো। এরপর খাঁচায় তাপ প্রয়োগ করা হতো। ফলে ইঁদুরগুলো পাগল হয়ে যেতো এবং অপরাধীদের পেট ছিঁড়েখুঁড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করত। এভাবে অপরাধীদের মৃত্যু  হতো।

দা হেড ক্রাশার

 অপরাধীদের মাথা এই যন্ত্রের ভেতর ঢুকিয়ে, মাথা নিচের খোপে ঢুকিয়ে আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামানো হতো। ফলে অপরাধীদের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসতো, চোয়াল ভেঙে  পুরো চেহারা বিধ্বস্ত হয়ে যেত।

চাইনিজ ওয়াটার টরচার

 অপরাধীদের বেঁধে  একটানা ঠাণ্ডা বা গরম জল ঢালা হতো। ফলে অপরাধী ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত।

দা লিড স্প্রিংকলার

স্প্রিংকলার নামে এই মৃত্যুযন্ত্রটি  গলিত সিসা, গরম তেল অথবা অ্যাসিড দিয়ে পূর্ণ থাকত। এরপর তা অপরাধীর শরীরে জ্যান্ত অবস্থায় ঢুকিয়ে দেওয়া দিয়ে হত্যা করা হতো।

দা জুডাস ক্রাডেল

অপরাধীকে  ধাতব পিরামিডের ওপর বসিয়ে চারদিক থেকে  দড়ি দিয়ে বাঁধা হতো। এরপর ধীরে ধীরে দড়ি নিচের দিকে নামানো হতো। এরপর  তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হতো।

দা ব্রেস্ট রিপার

নারী অপরাধীদের জন্য এই যন্ত্র দিয়ে  স্তন ছিঁড়ে ফেলা হতো।  যন্ত্রটি ব্যবহারের সময় গরম করে নেওয়া হতো। 

দা আয়রন মেইডেন

এটা   একটি ধাতব কফিন। এর  ভেতরে সব কাঁটা। অপরাধীকে এতে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হতো। 

দা স্কল্ডস ব্রিডেল

এটা ধাতব মুখোশ। অপরাধীর মুখে বাঁধা হতো এবং এর চারপাশে কাঁটা থাকতো।

দা চাইনিজ টরচার চেয়ার

এই চেয়ারটির সমস্ত পৃষ্ঠের ওপর ধারালো কাঁটা এবং ব্লেড দিয়ে সংযুক্ত করা থাকত। এটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শাস্তির মধ্যে একটি।

দা টাব

 অপরাধীকে এই টাবের মধ্যে বসিয়ে  সারা শরীরে দুধ এবং মধু মাখানো হতো। ফলে মাছি তাদের দিকে আকর্ষিত হতো। এরপর অপরাধীকে একটানা খাওয়ানো হত এবং সেখানেই তারা মল ত্যাগ করতে বাধ্য হত। এরপর শূককীটগুলো অপরাধীকে জীবন্ত অবস্থায় খেয়ে ফেলতো।

গিলোটিন

এটা  প্রাচীনকালের সবচেয়ে মানবিক শাস্তি  মনে করা হয়। কারণ এর অত্যন্ত ধারালো ব্লেডের কারণে এক সেকেন্ডের মধ্যে  অপরাধীর মাথা দেহ থেকে  আলাদা হয়ে যেত।

ক্রোকোডাইল শিয়ারস

প্রথমে এটি গরম করা হতো এবং তারপর এটা  দিয়ে অপরাধীর দেহ  বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হ

রিপাব্লিকান ম্যারেজ

সন্ন্যাসী এবং পুরোহিতদের জনসন্মুখে উলঙ্গ করে বরফ ঠাণ্ডা জলে চুবিয়ে  শাস্তি দেওয়া হতো। 

 

 

হেরেটিক্স ফর্কস্‌

 ধাতু দিয়ে তৈরি এই যন্ত্রটির উভয় প্রান্তে দুটি ধারালো কাঁটাচামচ থাকে।অপরাধীদের গলায় একটি প্রান্ত থাকত এবং আরেক প্রান্ত থাকতো চোয়ালে। ঘাড় উপর নিচ করলেই মৃত্যু নিশ্চিত।