গ্রেটা দ্য গ্রেট!

Spread the love

অনিন্দ্য আফরোজ

 মাত্র ১৭ বছর বয়সে ২০১৪ সালে পাকিস্তানের জঙ্গি হামলার শিকার মালালা ইউসুফজাই শান্তিতে নোবেল  পুরস্কার পেয়ে চমকে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে । এ পর্যন্ত সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল পাওয়ার কৃতিত্ব বা রেকর্ডটা এখনো মালালার ললাটেই ঝুঁলছে। কিন্তু সেই রেকর্ড ভাঙার পারেন আরেক কিশোরী  গ্রেটা থানবার্গ। এরইমধ্যে ষোল বছর বয়সী এই কিশোরী  শান্তিতে নোবেল  পুরস্কার পাওয়ার জন্য মনোনীত করেছে নোবেল কমিটি। গ্রেটা থানবার্গ নোবেল পেলে  সে-ই হবে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল  পুরস্কারপ্রাপক।  

 

কে এই  গ্রেটা থানবার্গ?

২০১৮ সালের আগস্টের কথা। ওই সময়  প্রত্যেক শুক্রবার  স্কুল কামাই করত ১৬ বছরের  এক কিশোরী।তখন সে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী । সপ্তাহের ওইদিন তাকে দেখা যেত সুইডেনের পার্লামেন্টের সামনেে। একা তার হাতে ব্যানার। তাতে লেখা ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট।’ তার নাম গ্রেটা থানবার্গ । পুরো নাম গ্রেটা ইরানম্যান থুনবার্গ। কিশোরী গ্রেটার এই সপ্তাহিক প্রতিবাদ আন্দোলনের সূচনা হয় ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে।   গ্রেটার এই সামাজিক আন্দোলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিতি পায় ‘FridaysForFuture’ নামে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বার্তা  ছড়িয়ে পড়ার পর  গ্রেটা আর একা থাকেনি। তার হাতে হাত বেঁধেছে অনেক কিশোর-কিশোরী এমনকি বয়স্করাও। সুইডেনের  গণ্ডি ছাড়িয়ে ক্রমেই তা ছড়িয়ে  পড়ে সারাবিশ্বে।একশোরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক এই  ছোট্ট কিশোরীর লড়াই। ২০০৩ সালের ৩ জানুয়ারি সুইডেনে জন্ম তার। তার মা সুইডিশ অপেরা গায়িকা মালেন আর্নম্যান এবং বাবা অভিনেতা সভান্ত থুনবার্গ। তার দাদা অভিনেতা ও পরিচালক অলফ থুনবার্গ।

যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন

২০১৮ সালের আগস্ট মাসে শুরু করা গ্রেটার একার এই আন্দোলন  বেশিদিন আর একার আন্দোলন থাকেনি। অল্প দিনের মধ্যেই তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সারা পৃথিবীতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে এক কিশোরীর একার এই অনন্য উদ্যোগের বিষয়টি সাড়া পেলে সবার মধ্যে। কয়েক মাসের মধ্যে তা  দুনিয়ার  ১০৫ দেশের এক হাজার  ৬৫৯টি শহরের জনগণ ও কয়েক লাখ কিশোর-কিশোরী গ্রেটারের শুরু করা আন্দোলনে যোগ দিয়ে সাড়া ফেলে দেয়। 

আরো পড়ুন…..নাদিয়া মুরাদঃ এক অদম্য সাহসীকা

র্লামেন্টে (টেডক্স স্টকহোমে )বক্তৃতা রাখার জন্য। পার্লামেন্টে বক্তৃতা রাখার সময় গ্রেটা সারা বিশ্বের রাষ্ট্রনেতাদের উদ্দেশে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কুফলের কথা তুলে ধরে অনুরোধ জানায়, রাষ্ট্রনেতারা  যেন এই ভয়াবহ বিপদকে কোনোভাবেই এড়িয়ে না গিয়ে তা প্রতিরোধে কাজ করেন। ওই বছরের  ডিসেম্বর মাসে এই কিশোরী জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে ভাষণ দেয় এবং এ বছরের  জানুয়ারিতে  তাকে দাভোসের বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে কথা বলতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এ বছরের  জানুয়ারিতে  তাকে দাভোসের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উদ্দেশে কিশোরী গ্রেটা টার্নবার্গ বলে, বৈশ্বিক উষ্ণয়নের পেছনে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর  অনেকেই জড়িত। এসব ব্যক্তিদের উচিত তাঁদের অর্থনৈতিক স্বার্থকে একপাশে রেখে একটি বাসযোগ্য বিশ্ব নিশ্চিত করতে মনোযোগী হওয়া। 

সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে গ্রেটা আরো বলে,  কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান খুব ভালোভাবেই জানেন উষ্ণায়নের কারনে কী কী অমূল্য সম্পদ আমাদের খোয়াতে হচ্ছে শুধুমাত্র তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আয়ের ইচ্ছে পূরণ করতে গিয়ে। আমি মনে করি, এমন বেশ কিছু ব্যক্তি এখানে উপস্থিত আছেন।’ 

যে জন্য নোবেল

 কিশোরী গ্রেটার এই বক্তব্য  এখন গোটা বিশ্বের কোটি কোটি শিশু-কিশোর এমনকি মানুষের অভিন্ন বক্তব্য। আর কিশোরীর এমন সাহসী ও  অসাধারণ উদ্যোগকে সম্মান জানিয়ে ২০২০–র নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনীত করেছে নোবেল কমিটি। নরওয়ের সমাজকর্মী ফ্রেডি আন্দ্রে গ্রেটার এই সাহসী উদ্যোগের বিষয়ে বলেছেন,  ‘আমরা নোবেল কমিটির কাছে গ্রেটার নাম প্রস্তাব করেছি। কারণ এখনও যদি পরিবেশ বাঁচাতে আমরা সচেষ্ট না হই তাহলে তা যুদ্ধ, বিবাদ এবং আরও শরণার্থীদের জন্ম দেবে এই পৃথিবী। গ্রেটা যে  গণ-আন্দোলনের সূচনা করেছে, আমার মনে হয় বিশ্ব শান্তির পথে এটা এক বিশাল অবদান’।

নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন পেয়ে টুইটারে গ্রেটার প্রতিক্রিয়া ছিল এমন। ‘‌এই মনোনয়নে আমি সম্মানিত এবং কৃতজ্ঞ। আমরা এটা চালিয়ে যাব যতদিন লাগবে ততদিন।’‌ 

 

তথ্যসূত্রঃ  ইন্টারনেট অবলম্বনে-