আয়না২৪ ডেস্ক
পৃথিবীর অস্ত্রবাজারের নিয়ন্ত্রণ এখন চীনের কাছে। ধীরে ধীরে এই বাজার সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে চীন। আর এতেই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র কারবারি হয়ে উঠছে দেশটি। শুধু অস্ত্র নয়, সশস্ত্র ড্রোন রপ্তানিতেও বিশ্বের শীর্ষ দেশ এখন চীন। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপরি) সম্প্রতি এমন খবর প্রকাশ করেছে।
সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চীন গত পাঁচ বছরে অন্তত ৫৩টি দেশে অস্ত্র রপ্তানি করছে। পাঁচ বছর আগে দেশটি থেকে অস্ত্র রপ্তানি হতো ৪১টি দেশে।
গবেষকেরা জেনেছেন, ঘাতক ড্রোন রপ্তানিতে বিশ্বের শীর্ষদেশও চীন। গত পাঁচ বছরে চীন অন্তত ১৩টি দেশে রপ্তানি করেছে ১৫৩টি ড্রোন । অথচ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তর অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ আমেরিকা গত ১০ বছরে কেবল ব্রিটেনের কাছে মাত্র পাঁচটি ড্রোন বিক্রি করেছে।
সূত্র বলছে, চীনের ড্রোনের প্রধান ক্রেতা হচ্ছে আরব বিশ্বের দেশগুলো। এর মধ্যে রয়েছে মিশর, ইরাক, জর্ডান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।পাশাপশি মার্কিন অস্ত্রের শীর্ষ তিন আমদানিকারক দেশ হচ্ছে সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সিপরির গবেষক ন্যান তিয়ান বলছেন, চীনের সামরিক প্রযুক্তির কারণেই অস্ত্র রপ্তানি বৃদ্ধি মন্থর।এজন্য দেশটি এখন জোর দিচ্ছে নিজস্ব অস্ত্র উদ্ভাবনের দিকে। দেখা যায়, ২০১৪-১৮ সালের আগের পাঁচ বছরের চেয়ে দেশটির অস্ত্র রপ্তানির হার বেড়েছে তুলনামূলক কম। এটা ছিল মাত্র ২ দশমিক ৭ ভাগ। অপরদিকে, একই সময়ে আমেরিকার অস্ত্র রপ্তানি বাড়ে ২৯ ভাগ।
সিপরির গবেষক ন্যান তিয়ান আরো বলেন, আগে চীনের অস্ত্র শিল্প রাশিয়া, ইউক্রেন ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে এখন তারা নিজস্ব প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকেছে। এরমধ্যে সশস্ত্র ঘাতক ড্রোন হল চীনের অন্যতম প্রযুক্তিগত সাফল্য।
বেজিং জানায়, ২০১৯ সালের জন্য তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো হবে ৭ দশমিক ৫ ভাগ। এতে টানা চার বছর ধরে তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধির হার একক অঙ্কে সীমিত রয়েছে। সংস্থাটির তথ্য, দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানই চীন থেকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কিনছে। চীনা অস্ত্রের মধ্যে ৭০ ভাগ যাচ্ছে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে। আর ৬ দশমিক ১ ভাগ যাচ্ছে আরব বিশ্বে। সম্প্রতি যুদ্ধবিমান তৈরির গোপন বোঝাপড়া হয়েছে চীন–পাকিস্তানের মধ্যে।
চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়, অত্যাধুনিক জেএফ–১৭ যুদ্ধবিমান বানাতে পাকিস্তানকে সাহায্য করছে তাদের দেশ। একইসঙ্গে সামরিক যন্ত্রাংশ তৈরিতেও দুই দেশ হাত মিলিয়েছে।
চীনের যে তিন অস্ত্র রাশিয়া-আমেরিকাকে চিন্তায় ফেলেছে
চীনের সবচেয়ে আধুনিক তিনটি অস্ত্র উদ্ধাবন তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভাবিয়ে তুলেছে। এমনকি দেশটির শত্রুদের মনেও কাঁপন ধরিয়েছে। সেই তিন অস্ত্রের বিবরণ নিচে-
নৌবাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র
গেল বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত কিছু ছবি দেখে ধারণা করা হচ্ছে, চীন সম্ভবত, যুদ্ধজাহাজে স্থাপন উপযোগী এমন অস্ত্র তৈরি করেছে যা শব্দের পাঁচগুণ গতিতে (হাইপারসনিক স্পিড) গুলি ছুড়তে সক্ষম। বহুদিন ধরেই বিশ্বের অনেক দেশ এমন অস্ত্র তৈরির জন্য জোড়ালো চেষ্টা করছে। ‘রেলগান’ নামে এই অস্ত্রটি প্রতি সেকেন্ডে আড়াই কিলোমিটার গতিতে গুলি ছুড়তে সক্ষম, যা ২০০ কিলোমিটার দূরে কোনো লক্ষবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
২০১৮ সালের জুনে সিএনবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই অস্ত্রটি ২০২৫ সালের মধ্যে যুদ্ধের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এ ধরনের অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে । ইরানেরও এই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ রয়েছে। হয়ত চীনই প্রথম দেশ হিসেবে তাদের যুদ্ধজাহাজে এমন অস্ত্র সংযোজন করবে। বিবিসি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এমন ছবি প্রকাশ করে। যাতে অস্ত্রটি সাগরে পরীক্ষা চালাতে দেখা যায়। তবে ছবির সত্যতা যাচাই করেনি বিবিসি। চীনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা গ্লোবাল টাইমসের তথ্য মতে, চীনে তৈরি প্রথম ১০ হাজার টন ক্লাস মিসাইল ডেস্ট্রয়ার জিরোফিফটিফাইভে ওই অস্ত্রটি প্রথম স্থাপন করা হবে।
হাইপারসনিক অস্ত্র
২০১৮ সালের আগস্টে চীন ঘোষণা দেয়, তারা এমন একটি হাইপারসনিক বিমান পরীক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে, যেটি বিশ্বের যে কোনো মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করতে সক্ষম। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রকাশ করা খবর অনুযায়ী, এটা এমন একটি ‘ওয়েভ রাইডার’ বিমান, যেটি নিজের তৈরি করা শব্দের ধাক্কা ব্যবহার করে বায়ুমণ্ডলে দ্রুত গতিতে ভেসে বেড়াতে পারবে।
জিংকং-২ (আকাশের আতংক) নামের ওয়েভ রাইডার ওই বিমানটি ৩২০ কিলোমিটার উঁচুতে উঠে ঘণ্টায় ৭.৩৪৪ কিলোমিটার গতিতে ভেসে বেড়াতে সক্ষম। তবে এটাই চীনের প্রথম হাইপারসনিক আবিস্কার তা কিন্তু নয়। ২০১৪ সাল থেকেই দেশটি বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকা বিমান পরীক্ষা করে যাচ্ছে কিন্তু এই প্রথমবার তারা এমন একটি বিমান তৈরি করেছে যেটা ওয়েভ রাইডার প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশটি।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ওয়েভ রাইডারগুলো যখন পুরোপুরি প্রস্তুত হবে, তখন এই ওয়েভ রাইডারগুলো বোমা নিয়ে বর্তমান বিশ্বের যে কোনো মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে পারবে।
সব বোমার মা
গত ডিসেম্বরে চীন নতুন ধরণের এক বিশাল বোমার প্রদর্শন করেছে ।চীনের ‘সব বোমার মা’ বলা হচ্ছে এই বোমাকে। এটাকে বর্ণনা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসিভ অর্ডিন্যান্স এয়ার ব্লাস্টের মতো। । প্রচারণা ভিডিওতে চীনের প্রধান অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি নোরিনকো দেখিয়েছে, এইচসিকে নামের বোমারু বিমান থেকে নতুন এই বোমাটি ভূমিতে ফেলা হচ্ছে এবং বড় বিস্ফোরণ ঘটছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, নতুন এই বোমাটি চীনের পারমাণবিক অস্ত্রের বাইরে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং এটা এতটাই বিশাল যে, একটি এইচসিক্সকে বোমারু বিমানে একটি মাত্র বোমা বহন করা যায়।