আয়না২৪ প্রতিবেদক
সারা বছরজুড়েই প্রকৃতির নিবিড় ছোঁয়া অনুভূত হবে এখানে এলে। তবে শীতকালে প্রকৃতি এখানে মেলে ধরে তার সব রূপ-লাবণ্য।পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা সংলগ্ন বঙ্গোপপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠা সোনার চর সমুদ্র সৈকতের কথা বলছি।
বঙ্গোসাগরের শো শো গর্জন ধ্বনি আর প্রকৃতির নিপুঁন সাজে সজ্জিত এই দ্বীপটি আরো বর্ণিল হয়ে ওঠে অতিথি পাখির কলকাকলিতে। সাগরের আছড়ে পড়া ঢেউগুলো যেন কোনো চিত্র শিল্পীর রঙ তুলির পরস। ফেনীল নোনা জলে ভেজা তটরেখায় চলে লাল কাঁকড়াদের ছোটাছুটি। সামান্য দূরেই ঝাউ বাগানের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা বাতাসের শন শন শব্দ। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের যাবতীয় আয়োজন রয়েছে এ দ্বীপটিতে।
নদী আর সাগরের জল আছড়ে আছে এ দ্বীপের চারপাশে। সোনারচরের চিকচিক বালিতে যেন ভোরের কোমল সূর্য আলো ছড়ায়। অস্তগামী সন্ধ্যার লালিমা তেমনি মায়া ঢালে নিভৃতে। অপরূপ সোনারচর স্বর্নালী স্বপ্নের মতই বর্নিল শোভায় ঘেরা। অন্তত একবার এসে ঘুরে দেখুন দেশের ভেতর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমী এই দ্বীপে।
প্রকৃতির টানে: সোনারচরের আকর্ষণ যে কোন মানুষকেই কাছে টানে। এখানে এলে তা বোঝার উপায় নেই। প্রায় দশ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আর সৈকতের গা ঘেঁষে জেগে থাকা ঝাউবন এখানকার সৌন্দর্যকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে। হরিণ, বন্য মহিষ, শূকর ও উদসহ নানা প্রজাতির প্রাণী পদচারণা রয়েছে সংলগ্ন বনে। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার এমন সুযোগ আর কোনো সমুদ্র সৈকতে নেই। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুই ই উপভোগ্য এখানে। কুয়াশার চাদরে ঢাকা পূর্ব আকাশের দিগন্ত ছুঁয়ে উঁকি দেয় ভোরের নতুন সুর্য। শেষ বিকেলে রক্তিম সূর্যটা আভা ছড়িয়ে সমুদ্রের বুকে লীন হওয়ার দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর। গোধুলির আচ্ছন্নতায় ম্লান হয় সোনারচরের আলো। নিজের রূপের আয়নায় ঘোমটা টেনে আরেকটি নতুন সকালের অপেক্ষায় ঘুমিয়ে পড়ে সমুদ্রের কোলে জেগে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় সোনারচর।
পাখির গানে ঘুম ভাঙে: কোন দর্শনার্থীকে সকালে ঘুম থেকে ডেকে উঠাতে হবে না। হরেক পাখির কিচির-মিচির শব্দে ঘুম ভাঙে এখানে। এমনকি ঘুম থেকে জেগে ঘড়ির কাটাও দেখতে হবে না। শীত মৌসুমে স্থানীয় পাখিদের দলে যোগ হয় হাজারো অতিথি পাখি। সাইবেরিয়ান হাঁস, সরাইল, গাঙচিলসহ নানা জাতের পাখির কলরবে মুখর হয় এখানের প্রকৃতি।
আয়তন ও আকৃতি: সোনারচরের আয়তন দশ হাজার একর। চরটি দেখতে অনেকটা বাদামের দানার আকৃতির মত। সোনারচর ও এর পার্শ্ববর্তী চর আন্ডার মাঝখানে এক সময় বড় নদী ছিল। চর পড়ে সে নদী এখন ছোট হয়ে গেছে। ভাটির সময় পায়ে হেঁটেই পাড় হওয়া যায়। সোনারচর চ্যানেল সরু হয়ে বনের সৌন্দর্য্য আরও মোহনীয় করে তুলেছে।এ ছাড়াও অগনিত চ্যানেল রয়েছে সোনার চরের আশে পাশে। পর্যটকরা ঘুরতে পারেন নৌকা অথবা ট্রলার নিয়ে। চ্যানেলের দুই পাশ জুড়ে শ্বাসমূলীয় আর ঝাউ বন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে পাশাপাশি চরের কোল ঘেঁষে অবস্থান মৌসুমি জেলে ও শ্রমিকের। শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসার জন্য এই চরটিতে আশ্রয় নেয় অসংখ্য জেলে।
যাওয়ার পথ: ঢাকা কিংবা দেশের অন্য স্থান থেকে লঞ্চ কিংবা সড়ক পথে পটুয়াখালী জেলা সদরে পৌঁছে সড়ক পথে যেতে হবে গলাচিপা উপজেলায়। সেখান থেকে যে কোনো ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলের মাধ্যমে পৌঁছাতে হবে আগুনমুখা নদীর মোহনায়। আগুন মুখার তীরে পৌঁছালে বুড়াগৌরাঙ্গ ও দাঁড়ছিড়া নদী পাড়ি দিতেই দুপাশ জুড়ে ঘন শ্বাসমূলীয় বনের দৃশ্য যে কারো মনকে সতেজ করে তোলে। ট্রলার কিংবা লঞ্চযোগে আগুনমুখার মোহনা থেকে ঘণ্টা দুয়েক এগুলেই চোখে পড়বে মায়াবী দ্বীপ-‘চরতাপসী’। তাপসীর দুই পাশ জুড়ে বিরল দৃশ্য অতিক্রম কালেই সোনার চরের হাতছানি। তাপসী থেকে দক্ষিণে ৩০ মিনিটের পথ এগোলেই সোনারচর। এখানে যেতে স্পীডবোটের ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার। রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও স্পীডবোটে সোনারচর যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর থেকে স্পিডবোটে সোনার চরে পৌঁছাতে মাত্র এক ঘণ্টা সময় লাগবে। আবার কুয়াকাটা থেকে সমুদ্র পাড়ি দিয়েও সোনারচরে যাওয়া যায়।
থাকার জায়গা: সোনারচরে রাত্রিযাপনের জন্য নিরাপদ আরামদায়ক ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। তবে প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ছোট্ট তিন কক্ষের একটি বাংলো। রয়েছে বন বিভাগের ক্যাম্প। এসব স্থানে রাতে থাকার সুযোগ রয়েছে। চাইলে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ট্রলারে মাত্র আধাঘন্টার মধ্যে চরমোন্তাজ ইউনিয়নে গিয়ে থাকার সুযোগ রয়েছে। সেখানে রয়েছে- বন বিভাগ, বেসরকারি সংস্থা স্যাপ বাংলাদেশ ও মহিলা উন্নয়ন সমিতির বাংলো।
সম্ভাবনার হাতছানি : যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে এই চরের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে সোনার চর হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। সোনার চর সংলগ্ন এলাকায় জাহাজমারা, তুফানিয়া ও শিবচরসহ আরো কয়েকটি দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে এখানে।