• Home  / 
  • বিশ্ব  / 

জেরুজালেম তিন ধর্মের অনুসারিদের কাছে কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ?

ডিসেম্বর ১০, ২০১৮
Spread the love

রাকিব রাহমান

 জেরুজালেম শহর। নামটি বিশ্বের সর্বাধিক পরিচিত, তেমনি নানা ঘটনায় আলেচিত। প্রাচীন এই নগর ঘিরে এযাবৎ নানা সংঘাতের ফলে বিশ্বময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে এই শহর। এটি চলমান বিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয়, জাতিগত ও বৈশ্বিক সমস্যাও। 

 মার্বিন প্রেসিডেন্ট ডোলা ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় এখন এই আলোচনা আরো জোড়ালো হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাজনীতির মাঠও উৎতপ্ত  হয়ে উঠেছে। কিন্তু কি কারনে জেরুজালেম নগরটি এতো গুরুত্বপূর্ন আর পবিত্র? সেই প্রশ্ন অনেকেরই অজানা। 

মুসলিমদের কাছে পবিত্র জেরুজালেম  আল-কুদস, খ্রিস্টানদের কাছে জেরুজালেম, ইহুদিদের ভাষায় ‘ইরুশালাইম’। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, জেরুজালেম হাজার বছর ধরে পৃথিবীর অন্যতম  মর্যাদাপূর্ণ পবিত্র নগরী। ছোট এক ভূখন্ডকে নিয়ে  তিন ধর্মের মানুষের এমন আবেগ, স্মৃতি বা ঐতিহ্য  পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই।  

ধর্মগত দৃষ্টিভঙ্গি তো আছে   ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়ও আছে, ‘ওল্ড সিটি’খ্যাত এই  শহর। এই প্রাচীন শহর বিভক্ত মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান ও আর্মেনীয় বসতিতে; যেখানে আছে বিভিন্ন ধর্মের অনেক পবিত্র স্থাপনা।

পবিত্র এই নগরীর নিয়ে মতভেদ না থাকলেও এর নিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে আছে  নানা সংঘাত, বিতর্ক। আছে   দখল, পুনর্দখল, ধ্বংস আর পুনর্নির্মাণের রক্তক্ষয়ী ও মর্মান্তিক ইতিহাস। এরমধ্যে  সবচেয়ে বেশি সংঘাতের স্থান হচ্ছে  পবিত্র  ‘হারাম আল শরিফ’ ঘিরে।

এই একই স্থানে অবস্থিত, ইহুদিদের পবিত্র ভূমিখ্যাত ‘টেম্পল মাউন্ট’ বা ‘ঈশ্বরের ঘর’, যা মুসলিমদের কাছে পবিত্র ‘কুব্বাত আস-সাখরা’ হিসেবে পরিগণিণত। আর টেম্পল মাউন্ট ঘিরে থাকা ‘ওয়েস্টার্ন ওয়াল’ ইহুদি ধর্মাবলম্কাবীদের কাছে ‘পৃথিবীর ভিত্তিপ্রস্তর’ হিসেবে বিবেচিত।লাখো ইহুদি এখানেেই নিয়মিত প্রার্থনায় অংশ নেন।

আর খ্রিস্টানদের ধর্ম প্রবক্তা  যিশু খ্রিস্টের স্মৃতিবিজড়িত গির্জার কারণে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা পবিত্রতার দিক থেকে সমান গুরুত্বপূর্ণ দেয় এই  জেরুজালেমকে। খ্রিস্টান ধর্মালম্বিবীদের বিশ্বাস, এখানেই তাদের প্রিয় যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে নির্মমভাবে হত্যা করা  হয়েছিল।
 
 মাত্র  ১২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জেরুজালেম  শহরকে ঘিরে  কত ইতিহাস, কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে তার ঠিক-ঠিকানা নেই।  তাই  মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি- এই তিন ধর্মের মানুষের কাছেই হাজার হাজার বছর ধরে জেরুজালেম হলো পবিত্রতম এক স্থান বা পূন্যভূমি।  
হাজার হাজার বছর ধরে অসংখ্য সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সাক্ষীে এই জেরুজালেমকে  নিজেদের রাজধানী দাবি করে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। আর এই দাবিকে এখন তারা জবরদস্তি করে হইদিরা পুরো শহরটিকে দখল করতে কখনো কৌশল, কখনো রক্তক্ষয়, কখনো নিরাপত্তার নামে অবরোধ আবার কখনো জোর করে বসতি স্থাপন করে তাদের সীমানা বাড়িয়েই চলছে।  কিন্তু পূর্ব জেরুজালেম নামে পরিচিত এই শহরের পূর্ব অংশে ইসরাইলিদের দখলদারিত্ব মানতে পারছে না  কয়েকশ বছর ধরে এই অঞ্চলে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি মুসলমানেরা।  শুধু  মুসলমান নন, পুরো জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী করার ব্যাপারে ঘোর বিরোধী খ্রিস্টানরাও।

 ঐতিহাসিক এই মসজিদটির নির্মাণ নিয়ে নানা তথ্য আছে। একদল ইতিহাসবিদের মতে, আল আকসা মসজিদ নির্মাণ  হয় আদম (আ.)-এর মাধ্যমেই তৈরি হয়, যা পরবর্তী নবিরা পুননির্মাণ ও সংস্কার করেন।

তবে আরেক পক্ষের মতে,  হজরত ইবরাহিম (আ.)  কাবা নির্মাণের ৪০ বছর পর হজরত ইয়াকুব (আ.) আল আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন।  খ্রিস্টপূর্ব ১০০৪ সালে হজরত সোলায়মান (আ.) এই মসজিদ পূণর্নির্মাণ করেন।্এরপর ভিন্ন শাসকের শাসনামলে মসজিদের অতিরিক্ত অংশ বাড়ানো  হয়। যেমন গম্বুজ, আঙ্গিনা, মিম্বর, মেহরাব ও অভ্যন্তরীণ কাঠামো।

৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে  বায়তুল মোকাদ্দাস  মুসলিমদের দখলে আসে। এরপর  মুসলিম শাসকেরা বেশ কয়েকবার এ মসজিদের সংস্কার করান। তবে  ১০৯৬ সালে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ক্রুসেডে ফিলিস্তিন দখল করে নেওয়ার পর আল আকসা মসজিদের ব্যাপক পরিবর্তন করে এটিকে গির্জায় পরিণত করে তারা।  মসজিদের গম্বুজের পরে ক্রুশ স্থাপন করে এর নামকেরণ করে – ‘সুলাইমানি উপাসনালয়।’

পরবর্তীতে ১১৮৭ সালে মুসলিম সেনাপতি গাজী সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি জেরুজালেম যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জেরুজালেম পুনরায় দখল করেন।এরপর তিনি পূর্বের নকশা অনুযায়ী আল আকসা মসজিদকে আসলে আদলে ফিরিয়ে আনেন।