আমেরিকার ১০ প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট

এপ্রিল ৯, ২০২০
Spread the love

আয়না২৪ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকায় এ বছরের শেষের দিকেই  ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামীতেও কি তিনি প্রেসিডেন্ট হবেন? দেশটির প্রভাবশালী প্রেসিডেন্টের তালিকায় আছেন ১০ জন প্রেসিডেন্ট।  শেষ পর্যন্ত তিনি কি পারবেন ওই ১০ জন প্রেসিডেন্টের মত প্রভাবশালীর তালিকায় নিজের স্থান নির্ধারণ করতে? চলুন জেনে নেই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০ প্রেসিডেন্ট কারা এবং তাঁদের প্রভাবশালী হয়ে ওঠার গল্প।

আব্রাহাম নিংকন : ১৮৬১ সালে আব্রাহাম লিংকন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৮৬৫ সালের এপ্রিল মাসে তাকে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি তার দেশের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নয়, তিনি পুরো বিশ্বের একজন প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাস প্রথার অবসান ঘটান এবং মুক্তি ঘোষণার মাধ্যমে দাসদের মুক্ত করে দেন। দাস প্রথাকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সময় তার অসাধারণ নেতৃত্ব গুন, বাগ্মিতা, দূরদর্শীতার বলে তিনি আমেরিকান গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে সফলভাবে সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে সক্ষম হন। তিনি ব্যাংক, রেলপথ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করেন। কলকারখানার উন্নতির জন্য শুল্ক মঞ্জুর করেছিলেন। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা (government is by the people, of the people & for the people) দিয়ে তিনি আজও অমর হয়ে আছেন।

 জর্জ ওয়াশিংটন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বপ্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন। তিনি আমেরিকার বৈপ্লবিক যুদ্ধের সময় আর্মির চিফ কমান্ডার ছিলেন। তিনি খসড়া সংবিধান প্রতিস্থাপন করেন। তিনি ১৭৬৫ সালের স্ট্যাম্প আইনের বিরোধিতা করেন। তার লক্ষ্য ছিল এমন একটি জাতি গঠনের যা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবে। ১৭৮৮ সালে তিনি সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হন।

জন এফ. কেনেডি : জন এফ. কেনেডি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি আমেরিকার দ্বিতীয় কম বয়সি প্রেসিডেন্ট। তিনিই একমাত্র আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যিনি কিনা পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৩ সালে নিহত হওয়ার আগে পর্যন্ত তার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩ সালের নভেম্বর মাসে আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন। লি হার্ভি অসওয়াল্ডকে এই ঘটনার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। জন এফ. কেনেডির উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে- কিউবার মিসাইল সংকট, আফ্রিকান-আমেরিকান সিভিল রাইটস মুভমেন্ট এবং বে অব পিগস আক্রমণ। এ ছাড়াও তিনি চাঁদে মানুষ পাঠানোর প্রথম উদ্যোগ অ্যাপোলো প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন।

ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট : ফ্রাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ৪ বার নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং মৃত্যুর (১৯৪৫) আগ পর্যন্ত তিনি দেশের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বিশ্বের একজন মূল রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হন যখন সমস্ত বিশ্বে অর্থ সংকট চলছিল। ১৯৩২ সালে তিনি হার্ভার্ট হভারকে পরাজিত করেন। তিনি ১৯৩৩ সালে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য ফেডারেল আমানত বিমা করপোরেশন নির্মাণ করেন। তিনি জাতিসংঘের প্রস্তাবক ছিলেন।

রোনাল্ড রেগন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন রোনাল্ড রেগন। প্রেসিডেন্ট হবার পূর্বে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর (৩৩তম) হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি তার অভিনয় প্রতিভার দরুন সুপরিচিত ছিলেন। ১৯৮৪ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি তার দায়িত্ব খুব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। তার সময়কালে তিনি অর্থনীতিতে স্বচ্ছলতা লাভ করেন।

থিওডোর রুজভেল্ট : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৬তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন থিওডোর রুজভেল্ট। মাত্র ৪২ বছর বয়সে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন তিনি। ১৯০১ সাল থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন। রুশ-জাপান যুদ্ধাবসানে ভূমিকা রাখার জন্য ১৯০৬ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়।

উড্রো উইলসন : উড্রো উইলসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পূর্বে তিনি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন এবং একই সঙ্গে তিনি নিউ জার্সির গভর্নর পদেও নিযুক্ত ছিলেন। তিনি ১৯১২ সালে কংগ্রেস ও হোয়াইট হাউসের নিয়ন্ত্রণ হাতে পান এবং তখন থেকে তার দায়িত্ব পালনের সূচনা হয়। তিনি কিছু প্রগতিশীল আইন প্রণয়ন করেন, যা ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত চলে। ১৯১৬ সালে ‘He kept us out of war’ স্লোগানের মাধ্যমে তিনি পুণরায় নির্বাচিত হন এবং নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।

টমাস জেফারসন : টমাস জেফারসন, যিনি ১৭৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। দেশটির স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের রচয়িতা তিনি। তিনি আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনিই আমেরিকায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রথম কথা বলেন। ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটির ১৩টি অঙ্গরাজ্যের সীমানাও নির্ধারণ করেন জেফারসন। তিনি আগে ভার্জিনিয়া শহরের গভর্নর হিসেবে যুক্ত ছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সেক্রেটারি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

হ্যারি এস. ট্রুম্যান : হ্যারি এস. ট্রুম্যান ১৯৪৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ করে। এর প্রভাব হিসেবে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্কে ফাটল ধরে, যা স্নায়ু যুদ্ধের সূচনা ছিল। ট্রুম্যান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নাৎসি জার্মানি আত্মসমর্পণ করে। জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে তিনি পারমানবিক বোমা নিক্ষেপের অনুমতি দেন। তিনি ১৩ বিলিয়ন ডলারের মার্শাল পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন।

 গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড : গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২২তম এবং ২৪তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি বোরবন ডেমোক্র্যাটের প্রধান নেতা ছিলেন এবং উচ্চ শুল্ক ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি ব্যবসায়ী ও কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যার ফলে তিনি আমেরিকান আইকনে পরিণত হয়েছিলেন।