পৃথিবীর বিস্ময়কর কয়েকটি স্থান

জানুয়ারি ১৭, ২০১৮
Spread the love

বিশেষ প্রতিবেদক

পেইন্টিংয়ে  পরাবাস্তবতা  বা সায়েন্স ফিকশনের কৌতূহলপ্রদ  দৃশ্যাবলীর  মত দেখতে  এমন কিছু জায়গা আছে গোটা পৃথিবীতে।   এসব স্থান দেখতে অনেকটা ভিনগ্রহের মত মনে হলেও এসব স্থান বাস্তবে তা  এই পৃথিবীতেেই দৃশ্যমান। আসুন জেনে নিই এবং দেখে নিই্ আমাদের কিংবা অজানা অথবা আবছা  জানা কিছু স্থানের  কথা।

সালার দে ইয়ুনি

বর্ষার মৌসুমে  দুনিয়ার  সবচেয়ে বড় লবণভূমি পরিণত হয়  পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আয়নায়। প্রাচীনকালে অনেকগুলো লেকের একইসঙ্গে মিলনের কারণে আজকের বলিভিয়ার  সালার দে ইয়ুনির জন্ম। লবণ আর সমতল কিংবা সল্টফ্ল্যাট প্রতিবিম্বের কারণে এই  সল্টফ্ল্যাট খুব স্বচ্ছ আয়নার মত দুর্দান্তভাবে  কাজ করে। কৃত্রিম উপগ্রহের  শক্তি বা সক্ষমতা নির্ণয়ে এই সল্টফ্ল্যাট বা লবণভূমি ব্যবহার হয়ে থাকে।

তিয়ানজি পর্বতমালা

তিয়ানজি পর্বতমালা অবস্থিত চীনে।  খুব দীর্ঘ এবং চিকন  এই পর্বতগুলো দেখে মনেই হবে না যে এগুলো  পৃথিবীর কোনও অংশ। মনে হবে পৃথিবীর বাইরের আশ্চর্য কোনও কিছু। এই পর্বতগুলো এই কারণেই জেমস ক্যামেরনের ‘আভাটার’ ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে সুনিপুনভাবে।  সুদীর্ঘকাল অর্থ্যাৎ ৩৮০ মিলিয়ন বছর আগে এই পর্বতগুলো সমুদ্রের তলদেশে গড়ে উঠে। আর পানি প্রবাহের কারণে তার আশেপাশের বালিতে তৈরি পাথরগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। শুধু শক্ত শিলাগুলো  টিকে থাকে।

 

সেন্টিনেলস অব দ্য আর্কটিক

ফিনল্যান্ডের সেন্টিনেলস অব দ্য আর্কটিক নামে বরফে আচ্ছাদিত এইগুলো হল বড় আকারের কোনও বৃক্ষ।  এই অদ্ভূত বৃক্ষগুলো  শুধু শীতকালেই চোখে পড়বে যখন তাপমাত্রা ৪০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে  তা অবস্থান করে।

 রীড ফ্লুট কেইভস

রীড ফ্লুট কেইভস চীনে অবস্থিত। এটি ২৪০ মিটার একটি গুহা। গত এক হাজার ২০০ বছর ধরে চীনের গুইলিনের সবছেয়ে জনপ্রিয় একটি আকর্ষণীয়  জায়গা এটি। এর অপরূপ  স্টালাকটাইট, স্টালাগমাইট, পিলারগুলো সৃষ্টি হয়েছিল জলের ক্ষয়ের মধ্যদিয়ে।   বর্তমানে এইগুলো বর্ণিল  রঙের আলো দিয়ে হাইলাইটস করা হয়েছে ।  ফলে এটা এখন নান্দনিক এক  সুন্দর  সুররিয়াল  আবহ সৃষ্টি করেছে।  

স্কাফটাফেল আইস কেইভ

স্কাফটাফেল আইস কেইভ, আইসল্যান্ডে অবস্থিত একটি অস্থায়ী বরফের গুহা। পানির  প্রবাহ যখন কোনও হিমবাহের ভেতরে  বড়  গর্ত তৈরি করে তখন হিমবাহের প্রান্তে অস্থায়ীভাবে এই আইস কেইভ তৈরি করে।  বরফের এই গুহার ভেতরটা খুবই আবদ্ধ থাকে। এর ভেতরে খুব স্বল্প পরিমাণে  বাতাস রয়েছে এবং এর দেয়ালগুলো নীল ছাড়া আর সব আলো শুষে নেয়। ফলে এখানের বরফে এক আকর্ষণীয় ও বর্ণাঢ্য রঙের ছটা  দেখা যায়।

নিয়ন, আরিজোনা, আমেরিকাআন্টেলোপ ক্যা

 আন্টেলোপ ক্যানিয়ন, আমেরিকার  আরিজোনায় অবস্থিত এক গিরিখাদ।  এটি কয়েক মিলিয়ন বছর আগে পানির প্রবাহের কারণে সৃষ্টি । আর এর গভীরে  কম আলো পৌঁছানোয়  এটাকে আরো সুগভীর মনে হবে।  এজন্য গিরিখাদটির দেয়াল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রঙে রঙিন হয়।  

বাইগার ওয়াটারফল

বাইগার ওয়াটারফল, রোমানিয়ার আরেক বিস্ময়কর জলপ্রপাত।  এই জলপ্রপাতটিকে বলা হয়ে  থাকে ‘অলৌকিক জলপ্রপাত’। এই জলপ্রপাতে যেসব শৈবালচূড়া পরিভ্রমণ করে এখানে  আসে সেগুলো আট মিটার পর্লযন্ত ।   বাইগার ওয়াটারফলটি  পৃথিবীর অন্যতম সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাতগুলোর  একটি হিসেবে মনে করা হয়।

সী অফ স্টারস, ভাধু আইল্যান্ড

সী অফ স্টারস, ভাধু আইল্যান্ড, মালদ্বীপে অবস্থিত সমুদ্র সৈকত। দিনের আলোয় এই সৈকতকে  স্বাভাবিক দেখালেও, রাতে তা জীবন্ত হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানীদের মতে, এখানে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন নামের একধরনের সামুদ্রিক অণুজীব রয়েছে। যে কারণে এই সৈকত রাতের বেলা জীবন্তু হয়ে  জ্বলতে থাকে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন অণুজীবের  নিঃশ্বাস নেওয়ার  কারণেই এরকমটি ঘটে । ফলে রাতেরবেলা  পুরো সৈকতকে মনে হয় মহাকাশ।

গ্র্যান্ড প্রিসম্যাটিক হট স্প্রিং, উইয়োমিং, আমেরিকা

 

গ্র্যান্ড প্রিসম্যাটিক হট স্প্রিং  হল যুক্তরাষ্টের সবচেয়ে বড় গরম জলের আঁধার। এই জলাশয়ের জল  গাঢ়।  কারণ এই  জলাশয়ের পানিতে রঞ্জক ধরনের  এক প্রকাশেরর অণুজীব রয়েছে। এসব অণুজীব যেসব জলাশয়ে প্রচুর পরিমাণ খনিজ উপাদান আছে, সেসব  জলাশয়ের আশেপাশে জন্মায়।

ডেডভ্যালি

 

ওপরের এই ছবিগুলো  কোনো  পেইন্টিং নয়। এগুলো পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বৈচিত্র্যেরই অংশ ডেডভ্যালি। এটা  নামিবিয়ার এক অপরূপ সৌন্দর্যের এক ধরনের বৃক্ষ।  ডেডভ্যালিতে যে গাছ দেখা যাচ্ছে সেগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বালিয়াড়ির বিপরীতে দাঁড়ানো।  ঐতিহাসিকেরা বলছেন , একসময় এখানে গভীর বন ছিল,  কালেরবিবর্তনে এখন তা মরুভূমি।

টারকুয়োজ আইস, লেক বাইকাল

টারকুয়োজ আইস, লেক বাইকাল হল পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো কিলিয়ার পানির হ্রদ। এটা রাশিয়ায়। শীতকালে এই হ্রদের জল ঠান্ডায় জমে যায়। কিন্তু এই হ্রদের পানি এতটাই স্বচ্ছ  যে বরফের ১৩০ ফুট নিচ অবধি তা পরিষ্কার দেখা যায়।  গ্রীষ্শের শুরুতে বিশেষ করে  মার্চ মাসে  তুষার ও রোদের কারণে  এসব বরফে ফাটল ধরে।  ফলে এসব বরফ থেকে ফিরোজা রঙের আলো  বিচ্ছুরিত হতে দেখা যায়।

সকোটরা

 

সকোটরা দ্বীপ ইয়েমেনে অবস্থিত। এই  দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ উদ্ভিদ এতোটাই বিরল যে তা  পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে  পাওয়া যায়নি। এখানে উদ্ভট প্রজাতির একটি উদ্ভিদ  ড্রাগন ব্লাড গাছ। এই  উদ্ভিদটি দেখতে ঠিক ছাতার মত।

 ঝ্যাংগাই ড্যানজিয়া ল্যান্ডফরম, গানসু, 

 ঝ্যাংগাই ড্যানজিয়া ল্যান্ডফরম, গানসু নামে এই পাথরগুলো  চীনে রয়েছে। কথিত আছে, এই রঙিন পাথরগুলো  ২৪ মিলিয়ন বছর ধরে পড়ে থাকা খনিজ পদার্থ, বালু-পাথরের দ্বারা তৈরি । বাতাস, বৃষ্টি এই পাথরগুলোকেেএমন মোহনীয় ও সুন্দর আকৃতি দিয়েছে।

টানেল অব লাভ, ক্লীভান

টানেল অব লাভ, ক্লীভান ইউক্রেনের একটি রোমান্টিক টানেল। বহু বছর ধরে দিনে তিনবার ট্রেন  চলাচলের  য ফলে আশেপাশের গাছগুলোসহ এই টানেলটি এরকম সুদৃশ্য-সবুজে পরিণত  হয়েছে। এটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এটি দারুণ এক রোমান্টিক স্থান। 

গ্লোওর্ম কেইভস, ওয়াইটোমো

 গ্লোওর্ম কেইভস, ওয়াইটোমো নিউজিল্যান্ডের একটি বিস্ময়কর সৌন্দর্যের গুহা। অসংখ্য জোনাকিপোকা এই গুহার ছাদে  ঝুঁলে থাকে আর তাদের  হাল্কা আলোর বিকিরণ দেয়। এজন্য  এই গুহাটিকে  দেখলে মনে হবে কোনও  সায়েন্সফিকশন সিনেমা।