• Home  / 
  • ফিচার  / 

অপ্রতিরোধ্য ‘মানব কল্যাণকামী’ উদ্যোক্তা অ্যালন মাস্ক

ডিসেম্বর ২, ২০১৮
Spread the love

রাকিবুল ইসলাম

বঙ্গবন্ধু-স্যাটেলাইট বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গত এই স্যাটেলাইটটি গত ১১ মে   মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ পৃৃথিবীতে ৫৭ তম স্যাটেলাইট ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে অর্ন্তভূক্ত হয়। মহাকাশ যাতায়াত কোম্পানি স্পেস এক্স” তাঁদের অত্যাধুনিক ‘ফ্যালকন ৯’ রকেটে  এ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ‘স্পেস এক্স’ মহাকাশ ও পৃথিবীর যাতায়াত ব্যবস্থাকে আমূল পাল্টে দিয়েছে। আর এর পেছনে আছেন ৪৭ বছর বয়সী এক দূরদর্শী, অপ্রতিরোধ্য উদ্যোক্তা। শুধু  ‘স্পেস এক্স’ ই নয়, তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন টেসলা মটরস, পেপ্যাল, সোলার সিটি, গিগাফ্যাক্টরি, ওপেন এআই, নিউরালিংকসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

তিনি অ্যালন মাস্ক।একাধারে তিনি একজন উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী এবং প্রকৌশলী। স্পেস এক্স এর “ফ্যালকন ৯” রকেট টি তিনি নিজে ডিজাইন করেন। এছাড়া টেসলা মটরসের প্রধান ডিজাইনার ও সিইও তিনি। তাঁকে ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০১৮ সালে বিশ্বের ২৪ তম প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত করে। ২০১৮ সালে তিনি ২২ দশমিক ৩ বিলিয়ন সম্পদের মালিক হিসেবে পৃথিবীর ৫৪ তম ধনীর তালিকায়  রয়েছেন তুখোড় উদ্যোক্তা অ্যালন।

আরও পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট, মহাকাশে বাংলাদেশের নতুন দ্বার

জন্ম ও পরিবার

 অ্যালন মাস্কের পূর্ণ নাম ‘অ্যালন  রিভ মাস্ক’। তিনি ১৯৭১ সালের ২৮ শে জুন সাউথ আফ্রিকায় জন্ম গ্রহণ করেন। কানাডার মডেল ও অভিনেত্রী মায়ি মাস্ক এবং সাউথ আফ্রিকার ইলেক্ট্রোমেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অ্যারল মাস্কের জ্যেষ্ঠ পুত্র তিনি।   তাঁর ছোট এক ভাই ও এক বোন রয়েছে। ১৯৮০ সালে তাঁর মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদের পরে তিনি পরবরতী দুই বছর তাঁর বাবার কাছে থাকেন। তাঁর বাবা আরেকটি বিয়ে করলে তিনি একা থাকা শুরু করেন।

২০০২ সালে মাস্ক কানাডার লেখিকা জাস্টিন উইলসন কে বিয়ে করেন। মূলত কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই তাঁদের পরিচয় হয় ও পরবর্তীতে তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাঁদের প্রথম সন্তান জন্মের ১০ সপ্তাহ পরেই এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এরপর মাস্ক ও জাস্টিন টেস্টটিউব পদ্ধতিতে ২০০৪ সালে ২ টি ছেলে ও ২০০৬ সালে একই পদ্ধতিতে তিন ছেলের অভিভাবক হন। আট বছরের মত সংসার করার পরে ২০০৮ সালে এই দম্পতির সংসারে ফাটল ধরে।

প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরে মাস্ক তালুলাহ রিলে নামক এক ইংলিশ অভিনেত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ হন। ২০১০ সালে তাঁকে বিয়ে করেন। কিন্তু ২০১২ সালেই মাস্ক তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। তবে ২০১৩ সালে তাঁরা পুনরায় বিয়ে করেন। ৩ বছর পরে ২০১৬ সালে এই দম্পতির সম্পর্কের ইতি ঘটে।

 

এরপর ওই বছরই মাস্ক আমেরিকান অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ডের সাথে মন দেওয়া-নেওয়া করেন। তবে এ সম্পর্কও ১ বছরের বেশি টেকেনি। ২০১৮ সালের মধ্যের দিকে মাস্ক কানাডিয়ান সঙ্গীতশিল্পী গ্রিমস এর সাথে নতুন সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছেন।

সবাই মনে করেন কাজপাগল এলন মাস্ক তাঁর সঙ্গিনীদের পর্যাপ্ত সময় না দিতে পারায় এতগুলো বিচ্ছেদ ঘটে। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁকে “সবথেকে খারাপ স্বামী” হিসেবে অভিহিত করেছেন।

শৈশব-কৈশোর

ছোটবেলা থেকেই অ্যালন পড়তে খুব ভালবাসতেন। ১০ বছর বয়সে কম্পিউটারের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মায়। তিনি নিজে নিজে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখেন। ১২ বছর বয়সে একটি ভিডিও গেম বানান যা তিনি ওই সময়ের ৫০০ ডলারে একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেন।

 চুপচাপ  স্বভাবের জন্য প্রায়ই তাঁর সহপাঠিরা তাঁকে আক্রমন করত। তাদের কিল-ঘুষি খাওয়া অ্যালনের  নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠে। কিন্তু তিনি কখনোই প্রতিবাদ করেন নি। একবার কিছু ছেলেরা তাঁকে স্কুলের সিঁড়ি দিয়ে ফেলে দেয়। নিচে পড়ার পরে তাঁকে অজ্ঞান হওয়া পর্যন্ত প্রহার করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

শিক্ষাজীবন

অ্যালন মাস্কের প্রথম বিদ্যালয় ছিল ওয়াটারক্লুফ হাউস প্রিপারেটরি স্কুল। সেখানেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। মাধ্যমিক শেষ করেন ব্রায়ানস্টোন হাই স্কুল থেকে। প্রিটোরিয়া বয়েস হাই স্কুল থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন।

তাঁর বাবা চেয়েছিলেন তিনি যেন উচ্চ শিক্ষার জন্য স্থানীয় প্রিটোরিয়া কলেজে ভর্তি হোন। কিন্তু তিনি আমেরিকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মনে করেন আমেরিকার অনুকূল পরিবেশ তাঁকে পৃথিবীর জন্য কিছু করার সুযোগ করে দিবে। তবে একজন সাউথ আফ্রিকানের জন্য তখন আমেরিকা যাওয়া সহজ ছিল না। একটি পত্রিকার মাধ্যমে তিনি জানতে পারলেন যে, কানাডা থেকে আমেরিকার ভিসা পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ।

অনেক ভেবে-চিন্তে ১৯৮৯ সালে ঠিক তাঁর ১৮ বছর জন্মদিনের আগে তাঁর বাবার অমতে তাঁর মা এর কাছে কানাডা চলে আসেন। সেখানে তিনি কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। তাঁর মা কানাডার নাগরিক হওয়ায় তিন বছরের মধ্যেই তিনি কানাডার নাগরিকত্ব পান।

১৯৯২ সালে তিনি অর্থনীতি ও পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক পড়ার উদ্দেশ্যে কানাডা ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান। তিনি সেখানে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ায় ভর্তি হন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর দ্বিতীয় বিষয় হিসেবে পদার্থ বিজ্ঞানেও তিনি স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।

দুই বিষয়ে স্নাতক শেষ করে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যান। ‘এনার্জি ফিজিক্স’ এ পিএইচডি করার লক্ষ্যে তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেন।

কিন্তু ভর্তির মাত্র দুদিন আগে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তিনি তাঁর প্রথম কোম্পানি ‘জিপ ২’ প্রতিষ্ঠার জন্য সেখানেই লেখা-পড়ার ইতি টানেন।

ক্যারিয়ার

অ্যালন মাস্কের ক্যারিয়ার বৈচিত্র্যে ভরপুর। ছোটবেলা থেকেই তিনি চেয়েছেন পৃথিবীর মানুষের জন্য কিছু করতে। সেই স্বপ্নের অনুপ্রেরণায় তিনি নিজেকে একজন ধারাবাহিক উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

জিপ টু

মাস্ক যখন আমেরিকায় আসেন তখনই সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিপ্লব শুরু হয়। অনলাইনে শহর খুঁজে বের করার জন্য তিনি একটি সফটওয়্যার ডেভেলপ করেন। এটি বিশেষত সংবাদপত্রের ব্যবহারের জন্য বানানো হয়। তিনি তাঁর কোম্পানির নাম দেন “জিপ টু”। স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে বিনিয়োগ নিয়ে “জিপ ২” এর যাত্রা শুরু হয়।  আমেরিকার প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস ও শিকাগো ট্রিবিউন থেকে তাঁর কোম্পানি কাজ পাওয়া শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যেই তৎকালীন বড় কোম্পানি ‘সিটি সার্চ’ জিপ টু কে অধিগ্রহণ করে।

ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ সালে কম্পিউটার নির্মাতা কোম্পানি “কমপ্যাক” ৩০৭ মিলিয়ন ডলারে ‘জিপ টু’ কে কিনে নিলে মাস্ক সেখান থেকে তাঁর ৭ শতাংশ শেয়ারের বিনিময়ে ২২ মিলিয়ন ডলার লাভ করেন।

পেপ্যাল

প্রথম কোম্পানি বিক্রির এক মাসের মাথায় মাস্ক তাঁর পরবর্তী কোম্পানির যাত্রা শুরু করেন। অর্থনৈতিক লেনদেন সহজ করার লক্ষ্যে  তিনি ইমেইল ঠিকানা নির্ভর অনলাইন লেনদেন প্রতিষ্ঠান ‘পেপ্যাল’ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পিটার থিয়েলকে (ফেসবুকের প্রথম বিনিয়োগকারী)  পান।  তিনি সেখানে সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন সময়ে অর্থ লেনদেনের এ সহজ মাধ্যমটি বেশ সাড়া ফেলে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যেই পেপ্যাল জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

২০০২ সালের অক্টোবর মাসে ইকমার্স জায়ান্ট ‘ইবে’ পেপ্যাল কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। ১.৫ বিলিয়ন ডলারে মাস্ক “ইবে”র কাছে পেপ্যাল বিক্রি করে দেন। ১১.৭% শেয়ারের বিপরীতে সেখান থেকে তিনি ১৬৫ মিলিয়ন ডলায় আয় করেন।

স্পেস এক্স

মঙ্গলে যাওয়ার স্বপ্ন থেকে ২০০২ সালে ‘স্পেস এক্স’ নামে একটি মহাকাশ যাতায়াত কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। পেপ্যাল বিক্রির অর্থ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার তিনি এখানে বিনিয়োগ করেন। তিনি সেখানে সিইও এবং প্রধান টেকনোলজি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মহাকাশে যাতায়াত সহজীকরণে তিনি প্রথমেই রকেট টেকনোলজি নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। সে সময়ে কোন রকেট একাধিকবার ব্যবহারের কোন সুযোগ ছিল না। তিনি এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া শুরু করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন একটি রকেট একাধিকবার ব্যবহার করতে পারলে মহাকাশ যাতায়াত খরচ ১০ ভাগের ১ ভাগ হয়ে যাবে।

তখনকার সকল মহাকাশ বিজ্ঞানী তাঁর এ প্রজেক্টকে অসম্ভব বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় ১৩ বছর ধরে বেশ কয়েকটি ব্যর্থ প্রচেস্টার পরে ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর এলন মাস্কের ফ্যালকন রকেট মহাকাশে গিয়ে আবার ফিরে আসতে সমর্থ  হয়। এদিন তিনি সফলভাবে রকেটকে বেস স্টেশনে ল্যান্ড করান।

এর মাধ্যমে মাস্কের মঙ্গলে যাওয়ার স্বপ্নপূরণ কয়েকধাপ এগিয়ে যায়। তিনি আশা করেন ২০৪০ সালের মধ্যে মঙ্গলে মানুষের কলোনী প্রতিষ্ঠিত হবে। যেখানে একত্রে প্রায় ৮০ হাজার লোক বসবাস করবে।

স্পেস এক্স ইতিমধ্যে একটি মহাকাশযান তৈরি করেছে যা ২০২২ সালে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।

টেসলা মটরস

পৃথিবীর যানবাহনসমূহের জালানীর কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয়টি মাস্ক কে ভাবিয়ে তোলে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন তাঁকে কিছু একটা করতেই হবে। ২০০৪ সালে তিনি টেসলা মটরস শুরু করেন। যদিও এটি ২০০৩ সালে অন্য দুজনের মাধ্যমে শুরু হয় কিন্তু মাস্ক আসার পরে টেসলায় একটি নতুন যোগ শুরু হয়। এখানে তিনি জ্বালানিবিহীন ইলেকট্রনিক গাড়ি তৈরি শুরু করেন।

বরাবরের মত এবার ও সবাই তাঁকে অবাস্তবিক এ প্রজেক্টের জন্য সমালোচনা করে। তবে তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, যে তিনি পারবেন। টেসলা মটরসে তিনি নিজে গাড়ির ডিজাইন ও উন্নয়ন করেন। এসময় তিনি সিইও হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৮ সালে টেসলা দুইজন যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন   ‘টেসলা রোডস্টার’ নামে প্রথম ইলেক্ট্রিক স্পোর্টস গাড়ি বাজারে আনে।  খুব ই অল্প সময়ের মধ্যে ৩১ টি দেশে ২৫০০ টি গাড়ি বিক্রি হয়ে যায়।

মাস্ক শুধু স্পোর্টস গাড়িতে সীমাবদ্ধ থাকতে চান নি। তিনি সাধারণ মানুষের জন্য ইলেক্ট্রিক গাড়ি বানানোর জন্য মনোনিবেশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে ‘মডেল এস’ ও ‘মডেল এক্স’ বাজারে আনে। যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমাদৃত হয় এবং সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপোযোগী হয়।

মাস্ক ভেবেছেন যে, কিভাবে তিনি সকলের জন্য জ্বালানির পরিবর্তে ইলেক্ট্রিক গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারেন। একা পৃথিবীর সকলের জন্য হয়ত ইলেক্ট্রিক গাড়ি বানাতে পারবেন না- এই ভাবনা থেকেই তিনি গাড়ির পাশাপাশি গাড়ির ‘ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন’ ব্যবসায়িক ভাবে উৎপাদন শুরু করেন। অন্যান্য বড় বড় গাড়ি কোম্পানি গুলোকে তিনি ইলেক্ট্রনিক গাড়ি তৈরির জন্য আহবান জানান। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বর্তমানে গাড়ি নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান ‘মার্সিডিজ’ ও ‘বিএমডব্লিউ’ টেসলার ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন ব্যবহার করে গাড়ি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ শুরু করেছে।

সোলার সিটি

বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর লক্ষ্যে ইলেক্ট্রিক গাড়ি তৈরির পাশাপাশি তিনি তাঁর চাচাতো দুই ভাইকে দিয়ে ২০০৬ সালে ‘সোলার সিটি’ নামক সৌরশক্তি নিয়ে কাজ করার একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করান। তিনিই সেখানে পুরো বিনিয়োগ করেন ও উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন।

২০১৩ সালে সোলার সিটি যুক্তরাস্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম সৌর প্যানেল নির্মাতা ছিল। ২০১৬ সালে এলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান ‘টেসলা’ সোলার সিটিকে অধিগ্রহণ করে। এলন মাস্ক ঘোষণা দেন যে, এরপর থেকে এই দুই প্রতিষ্ঠান সৌর শক্তি নির্ভর গাড়ি উৎপাদনে কাজ করবে।

হাইপারলুপঃ

মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে মাস্ক তাঁর হাইপারলুপ প্রজেক্ট শুরু করেন। এখানে তিনি টানেল ভিত্তিক এমন একটি দ্রুতগতির পরিবহনব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছেন, যেখানে মানুষ প্রতি ঘন্টায় ১২০০ কিলোমিটার যাত্রা করার সুযোগ পাবে। বর্তমানে  মাস্ক নিউ ইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত একটি টানেল নির্মানের কাজ করছেন।

ওপেন  এআই

‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স’ বা ‘এআই’ তথা “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা” প্রযুক্তি এখন সর্বক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস- মোবাইল, টিভি থেকে শুরু করে কৃষি পর্যন্ত সর্বত্র এ প্রযুক্তির ব্যাবহার হচ্ছে।

রোবটিক বিজ্ঞানের সর্বত্র এ ব্যবহার মাস্ককে ভাবিয়ে তোলে। এ প্রযুক্তির অপব্যবহার রুখতে তিনি ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ওপেন  এআই’ শুরু করেন। সরকার বা কোন কোম্পানি যাতে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মানুষের কোন ক্ষতি না করতে পারে, তা নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান কাজ করে।

নিউরালিংক

মানুষের মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য এবং মানুষের চিন্তার সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যোগ করার জন্য  মাস্ক নিউরালিংক প্রতিষ্ঠা করেন। নিউরালিংক সাধারনত নির্দিস্ট কিছু ডিভাইস তৈরি করে যা মানুষের মস্তিস্কের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। একই সময়ে এই ডিভাইসগুলো সফটওয়ারের সাহায্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে সংমিশ্রিত হয়।

মাস্ক আশা করেন, এই প্রজেক্টের মাধ্যমে তিনি মানুষের মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সমর্থ হবেন।

দি বোরিং কোম্পানিঃ

২০১৬ সালের ১৭ ই ডিসেম্বর লস অ্যাঞ্জেলসে একটি ট্রাফিক জ্যামে বসে বিরক্ত হয়ে টুইটারে মাস্ক নতুন একটি কোম্পানি শুরু করার ঘোষণা দেন। সাধারণ সড়কব্যবস্থার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে তিনি ভূ-গর্ভস্থ্য টানেলে সড়ক বানানোর জন্য এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এ কোম্পানির নাম দেন- দি বোরিং কোম্পানি।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাস্ক তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘স্পেস এক্স’ এর ক্যাম্পাসে পরীক্ষামূলক ৩০ ফুট প্রস্থ ও ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি ভুগর্ভস্থ টানেল নির্মান করেন এবং তাঁর আইডিয়ার কার্যকরন পরীক্ষা করেন।

বর্তমানে বোরিং কোম্পানীর আওতায় মাস্ক লস এঞ্জেলস, শিকাগো, বাল্টিমোর সহ বেশ কয়েকটি শহরে টানেল নির্মান করছেন।

pravduh.com

কাজকে ভালবাসা মাস্ক বিভিন্ন সময়ে তাঁর কাজ কিংবা আচরণের জন্য মিডিয়ায় আলোচিত হয়েছেন। একবার তো হঠাত তিনি তাঁর ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দিয়ে ফেসবুক কেনার ঘোষণা দেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন যে, তাঁর মনে হয় প্রকৃতপক্ষে ফেসবুক কোন কাজে আসছে না। মার্ক জাগারবার্গ তাঁর নিকট ফেসবুক বিক্রি করলে তিনি ফেসবুক কে উৎপাদনক্ষম একটি প্ল্যাটফর্মে পরিনত করবেন।

কিছুদিন পরে দেখা যায় তাঁর বিরুদ্ধে অনেক মিডিয়া অনেক কাল্পনিক, ভুয়া ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করছেন। এ ধরনের সংবাদের বিরুদ্ধে কিছু একটা করার ঘোষণা দেন তিনি। এ জন্যই মূলত তিনি pravduh.com ওয়েবসাইট শুরু করেন, যেখানে তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ দেয়া থাকবে এবং সাধারণ জনগণ সেখান ভোটের মাধ্যমে সেখান থেকে ভুয়া এবং বানোয়াট খবর চিহ্নিত করতে পারবে।

অ্যাওয়ার্ড

স্টিভ জবসের পরেই  মাস্ককে সব থেকে বেশি দুরদর্শী সম্পন্ন উদ্যোক্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর এসকল উদ্যোগের জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে অনেক অ্যাওয়ার্ড ও পেয়েছেন। ২০১৩ সালে ফরচুন ম্যাগাজিন তাঁকে ‘বিজনেস পারসন অব দ্য ইয়ার” হিসেবে ঘোষণা দেয়। ২০১৭ সালে মাস্ক ‘অসলো বিজনেস ফর পিস’ পুরস্কারে ভূষিত হন। ইনক ম্যাগাজিন তাঁকে ২০০৭ সালের সেরা উদ্যোক্তা হিসেবে মনোনীত করে। এছাড়াও তিনি প্রায় অর্ধশতাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হন।

 

Comments are closed