• Home  / 
  • পরিবেশ  / 

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ পায়রা ও মোংলায় ৭, চট্টগ্রামে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত, ৭ জেলা ঝুঁকিতে

নভেম্বর ৮, ২০১৯
Spread the love

বিশেষ প্রতিনিধি
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’এর শক্তি ক্রমাগত বেড়ে চলায় এবং বাংলাদেশ উপকূলের ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে যাওয়ায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেতের পরিবর্তে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে কক্সবাজারে আগের মতই ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
এ সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছি
সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ কাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে কোনো সময়ে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ সময় সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা পাঁচ থেকে সাত ফুট পর্যন্ত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট ২২টি মন্ত্রলণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ার কারনে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ সব নৌপথের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষাণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা সরকার। একইসঙ্গে ঢাকা থেকে সব পথের নৌ চলাচলও বন্ধ করা হয়েছে। ফলে ঢাকার সদরঘাট থেকে আজ রাতে দূর পাল্লার কোনো লঞ্চ ছাড়েনি। তবে বরিশাল নৌ বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে সব লঞ্চ ছেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, বৈরী আবহাওয়ার পাশাপাশি বরিশাল নদী বন্দরে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সকল পথের ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।
বেশি ঝুঁকিতে ৭ জেলা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে উপকূলবর্তী ৭টি জেলা অতি ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। শুক্রবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী একথা জানান।
অতিঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলো হলো- খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও ভোলা।
দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রস্তুত করা হচ্ছে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো।

বরিশালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন ২৩২টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে। খোলা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজন হলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি সরকারি-বেসরকারি বহুতল ভবন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

আজ দুপুরে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি জরুরি সভায় জেলা প্রশাসক এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে দুপুর ১২টার দিকে এই সভা হয়। সভায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা এবং উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, বরিশাল জেলায় ২৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য বহুতল ভবন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ব্যবহার করা হবে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি), রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও রোভার স্কাউটের সদস্যরাও যেকোনো ধরনের সহায়তার জন্য প্রস্তুত আছেন।

অজিয়র রহমান বলেন, ‘জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২০০ মেট্রিক টন চাল, শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী মজুত আছে। আমরা ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা দেখে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করব। তবে সবার জন্য বলব, কেউ যেন ঝুঁকি নিয়ে অনিরাপদ আশ্রয়ে না থাকেন।’

এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় প্রস্তুতির জন্য যেকোনো সময় জরুরি সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বরগুনায় জেলা প্রশাসক কার্যালয় আজ সকাল ১০টায় এক সভায ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহর সভাপতিত্বে দুর্যোগ ব্যবস্থা কমিটির সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়। এতে জানানো হয়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০৯টি স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বরগুনার ট্রলার মালিক সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, আজ সকাল থেকে সাগর উত্তাল হতে শুরু করেছে। এখন ১০০ ট্রলার নিরাপদ আশ্রায়ের জন্য তীরে আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া বেশি খারাপ হলে ট্রলারগুলো সুন্দরবনের ভেতরে আশ্রয় নেবে।
উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে সকাল থেকেই। দুর্যোগ মোকাবিলায় আজ সকালে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি জরুরি সভা করেছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার ৪০৩টি ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া দুর্যোগ–পরবর্তী চিকিৎসাসেবার জন্য মেডিকেল টিম গঠনসহ দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ–পরবর্তী সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।