সহজ প্রযুক্তিতে আর্সেনিক মুক্ত পানি

ডিসেম্বর ২২, ২০১৮
Spread the love

আয়না ২৪ টেক

পানিতে আর্সেনিক যেমন দেখা যায় না তেমনই এর গন্ধও পাওয়া যায় না। আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রথম টের পাওয়া যায় যখন সংক্রমণের ফলে চামড়ায় ক্ষত দেখা দেয়। আর্সেনিক দূষণ থেকে হৃদরোগজনিত বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি  দেখা দিতে পারে ক্যানসারের মতো রোগও। চামড়ার কুষ্ঠরোগীদের মতো দাগ দেখা গেলে অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তিকে সমাজে একঘরে করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। আর্সেনিক দূষণের ফলে সিয়াতন নেসার চামড়ায় ঘা দেখা দিয়েছে। পঞ্চাশ পার হওয়া সিয়াতন নেসা বলছেন, এই সংক্রমণ তার পরিবারকে প্রায় ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচের সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিবছর অন্তত ৪৩,০০০ মানুষের মৃত্যু হয় আর্সেনিকজনিত সংক্রমণের কারণে।

বাংলাদেশ সরকার এই কুয়াগুলির পরিবর্তে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করলেও বহু গ্রামে এখনও এগুলোই পানীয় জলের একমাত্র উৎস। গ্রামাঞ্চলে বহু বাড়িতে নিজেদের খোঁড়া কুয়ার জলই ব্যবহারের রেওয়াজ রয়েছে।

রজন দিয়ে তৈরি এই বলগুলো দেখতে সাধারণ মনে হলেও এগুলোই বাঁচাতে পারে ভারত ও বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ সঙ্কটাপন্ন মানুষকে। কারন এই রজনই একমাত্র পানি থেকে আর্সেনিক শুষে নিতে পারে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়ার্চের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে অন্তত দুই কোটি মানুষ আর্সেনিক বিষক্রিয়ার ঝুঁকির মুখে রয়েছে। কয়েক লক্ষ মানুষ ইতোমধ্যেই ভুগছেন সেই সমস্যায় যাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চিহ্নিত করেছে “মানব ইতিহাসের সব চাইতে বড় গণ বিষক্রিয়া” হিসেবে।

আটাশ বছর বয়সী মিনহাজ চৌধুরীর পরিবারে স্কুলের ছুটিতে দেশে বেড়াতে আসা ছিল নিয়মিত ব্যাপার। তিনি বড় হয়েছেন আমেরিকায়। তিনি বলেন, “আমার সন্তানদের নিয়ে আমি চিন্তিত কারণ ওদের সঙ্গে কেউ বিয়েতে রাজী হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকার এই কুয়াগুলির পরিবর্তে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করলেও বহু গ্রামে এখনও এগুলোই পানীয় জলের একমাত্র উত্স। গ্রামাঞ্চলে বহু বাড়িতে কুয়ার পানিই ব্যবহার করা হয়।

“ভাবলেই আমি শিউরে উঠি ও প্রচণ্ড দুঃখ পাই এই কথা ভেবে যে আমেরিকায় পানীয় জল নিয়ে আমাদের চিন্তাই করতে হয় না। অথচ বাংলাদেশে বিষাক্ত পানি পান করে প্রতি পাঁচজনে একজনের মৃত্যু হয়, “বলছিলেন মি. চৌধুরী।

পানীয় জলের বিষক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত রোগে তাঁর দাদুর মৃত্যুর পর মিনহাজ সিদ্ধান্ত নেন এবার কিছু করতে হবে। ড. অরূপ কুমার সেনগুপ্তের সঙ্গে মিলে ২০১৩ সালে মিনহাজ চৌধুরী গড়ে তুললেন ‘ড্রিঙ্কওয়েল’ নামে একটি সংস্থা। এই সংস্থা বিশেষ এক ধরনের রজন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানি আর্সেনিক মুক্ত করে। ভারতে এই প্রযুক্তির বাস্তবায়ন আগেই শুরু হয়েছে।

মানিকগঞ্জে ২০১৫ সালে প্রথম কোনও ড্রিঙ্কওয়েল কেন্দ্র থেকে জল সরবরাহ শুরু হয়। সেই কেন্দ্রে এখন রোজ ৭৫০ জন ক্রেতা আসছেন পানীয় জল নিতে এবং একদিনে দেড় লক্ষ লিটার (৩২৯৯৫ গ্যালন) জল সরবরাহ করা হচ্ছে। গোটা দেশেই এই প্রকল্প এখন ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্কুলেও বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের খাবার তৈরি করার জন্য। এর মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন স্তরে সচেতনতা বাড়ছে কারণ ছোট ছেলেমেয়েরা আর্সেনিকমুক্ত জল নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছে তাদের মা-বাবাকে।

ভারত ও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৩০টি ড্রিঙ্কওয়েল প্রকল্প খোলা হয়েছে যার সুফল পাচ্ছেন এক লক্ষেরও বেশী মানুষ।

মিনহাজ চৌধুরীর বিশ্বাস, ড্রিঙ্কওয়েল-এর যাত্রা সবে শুরু, এবং একদিন এশিয়ার কোটি-কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে এই প্রকল্প।

এই প্রকল্পটিকে গোটা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য মি. চৌধুরী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গেও কথা বলছেন।

তাদের উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে এই প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে যুক্ত করার পর মিনহাজ চৌধুরীর স্বপ্ন একদিন আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল পাবে গোটা বাংলাদেশ।