
আয়না২৪ ডেস্ক
পৃথিবীতে ডিম আগে এসেছে, না মুরগি আগে? আবহমান কাল থেকে উঠে এসেছে এই প্রশ্ন। জানলে অবাক হবেন যে এই বিতর্কটা ২০০০ বছর ধরে চলছে। এই ধাঁধার সমাধান করতে গিয়ে বহু বিজ্ঞানী থেকে সমাজতত্ত্ববিদ বিস্তর হিমশিম খেয়েছেন। কিন্তু বিদেশি এক ওয়েবসাইটে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এই ধাঁধার সমাধান!
সৃষ্টির প্রথমে আসলে মুরগি ও মুরগির ডিম কোনটাই ছিল না। প্রাণের উৎপত্তি আসলে সেই এককোষী আদি কোষ থেকে হয়েছে। আপনি হয়তো নিশ্চয়ই জানেন মুরগি এক ধরনের পাখি আর এটাও জানেন যে পাখিদের উৎপত্তি হয়েছিল আদি সরীসৃপ থেকে।
বিজ্ঞান বলছে, একমাত্র মুরগির শরীরের ভিতরে থাকলেই ডিমের অস্তিত্ব থাকতে পারে। ওভোক্লেডিডিন-১৭ নামক একটি প্রোটিন ডিমের খোসা তৈরি করতে সাহায্য করে। কুসুমের বৃদ্ধি ও নতুন মুরগির জন্ম হতে এই খোসা ও ফ্লুইড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী শেফিল্ড ও ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ডিমের গঠন প্রক্রিয়ার ওপর সুপার কম্পিউটার জুম করেন। পরীক্ষা প্রমাণ করেছে ডিমের গঠনের জন্য ওসি-১৭ প্রোটিনের প্রয়োজন আবশ্যক।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফ্রান্সের নিল ইনস্টিটিউটের পদার্থবিদেরা দাবি করেছেন, পৃথিবীতে ডিম বা মুরগির যেকোনো একটি আগে আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ফিজিক্যাল রিভিউস লেটার্স-এ এ-বিষয়ক একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ হয়েছে।
কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফাবিও কস্টা বলেন, গবেষণার সময় তাঁরা আলোর বিন্যাস পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। সমবর্তনের ভিত্তিতে এই বিন্যাস নির্ধারিত হলেও গবেষকেরা দেখতে পেলেন, বিন্যাসের পরিবর্তন ক্রমানুসারে হয়নি। এর থেকে বোঝা যায়, একটি ঘটনার কারণ তৈরি হওয়ার পর তার ফলাফল না-ও আসতে পারে। এমনও হতে পারে, ঘটনার ফলাফলই কারণের মতো আগে এসে যেতে পারে। তারপর সেই ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী কারণ তৈরি হতে পারে।
বিদেশি এক ওয়েবসাইটে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে যে, কয়েক সহস্রাব্দ আগে পৃথিবীতে বাস ছিল মুরগি সদৃশ এক ‘পাখি’-র। প্রাগৌতিহাসিক সেই পাখি জিনগতভাবে অনেকটাই মুরগিদের কাছাকাছি। তবে তা পুরোমাত্রায় মুরগি ছিল না। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সেটি আসলে ছিল এক ধরনের ‘প্রোটো-চিকেন’। মুরগির সেই প্রাচীনতম পূর্বসূরী এক ডিম পেড়েছিল। পুরুষ সঙ্গী সেই ডিমে বেশ কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করে।
এর পর বেশ কিছু মিউটেশনগত পরিবর্তন ঘটে, যা তখনকার সেই পুরুষ কিংবা মহিলা মুরগির জিন থেকে বেশ কিছুটা পৃথক। নতুন প্রজাতির সেই উৎপন্ন পাখিই হল আজকের মুরগির আদি পূর্বপুরুষ। এরপর কয়েক হাজার বছর ধরে পৃথিবীর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য মিউটেশনগত রদবদল বহুবার ঘটে।
প্রথম যে মুরগি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই মুরগির সঙ্গে হয়তো আজকের এই মুরগির প্রচুর অমিল। মিউটেশনটি ডিমের মধ্যে ঘটে যাওয়ার ফলে সেই আদি মুরগিটির উৎপত্তি হয়েছিল, তার মানে ডিমটির আগে কোনও মুরগি ছিল না। অর্থাৎ পুরো ঘটনাটি সংক্ষেপে বলতে হলে, প্রাগৌতিহাসিক মুরগি-সদৃশ এক পাখি ভিন্নধর্মী এক ডিম পাড়ার ফলে উদ্ভব ঘটে আদিতম মুরগির। তাই মুরগির আগেই ডিম এসেছে। তাই ডিম-ই আগে আর মুরগি পরে।