অনিন্দ্য আফরোজ
তারুণ্যের কবি সুকান্ত লিখেছিলেন, ‘পৃথিবীর বুকে আঠারো আসুক নেমে’। একবিংশ শতাব্দীতে কবির সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন যেন কিশোরী এলিজা। এলিজার বয়স বয়স সতেরোর পেরোয়নি। পুরো নাম এলিজা কার্সন। এই উচ্ছ্বল কৈশোরের গণ্ডি পার করে তারুণ্যের জয়োগানে মত্ত্ হওয়ার কথা। সহপাঠি, বন্ধু , স্বজনদের মধ্যে হইহুল্লোড় করে সময়টা পার করার কথা। এই বয়সে স্বপ্ন দেখার শুরু। স্বপ্নের জাল বুঁনে চলার কথা।
কিন্তু এলিজা কার্সন সেই কিশোরী যার স্বপ্নটা অন্য কারো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, দুঃসাহসিক। এরই মধ্যে এই দুঃসাহসিক স্বপ্ন দেখা কিশোরী আরোড়ন তুলেছেন সারাবিশ্বে। এলিজা পৃথিবী থেকে মিলিয়ন মাইল দূরের ভিন্ন এক গ্রহের নাগরিক হওয়ায় নেশায় বিভোর এখন। সে মঙ্গলের বাসিন্দা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০৩৩ সালে এলিজা মঙ্গলের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। আর সেই হবেন মঙ্গলে যাওয়া পৃথিবীর প্রথম মানুষ।
এলিজা জানে, তার আর কখনোই পৃথিবীতে ফিরে আসা হবে না। পৃথিবীর আলো-বাতাস, চেনামুখগুলো হয়ে যাবে অচেনা। কিন্তু এতোসব জেনেও এলিজা দুর্দমনীয়, অবিচল। সে মঙ্গলে যাবেই। আর এই দুঃসাহসী যাত্রার জন্য এরইমধ্যে আমেরিকার মহাকাশ সংস্থা নাসার সঙ্গে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সেরেও ফেলেছে সে। মঙ্গলে গেলে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম তাই নাসার কাছে সে কোনো প্রকার যৌনতা, বিয়ে বা সন্তানধারণের নিষেধাজ্ঞাপত্রেও সই করে দিয়েছে ।
এলিজার তার মায়ের পরিচয় জানে না। সিঙ্গেল বাবার কাছে বড় হয়েছে এই কিশোরী। এলিজার মহাকাশ যাত্রার এই নেশা তাকে পেয়ে বসে সেই শিশু বয়সে।এলিজা প্রথম মানবসন্তান হয়ে মঙ্গলের বুকে পা রাখবে। সেখানে তিনি দুই তিন বছর ধরে বিভিন্ন পরীক্ষা চালাবে। খাদ্য উৎপাদন করা, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানোসহ নানা এক্সিপেরিমেন্ট চালাবে।পাশাপাশি মঙ্গলের বুকে প্রাণের অস্তিত্ব ও সম্ভাবনা খুঁজবে।মাত্র তিন বছর বয়সে ‘দ্যা ব্যাকইয়ার্ডিগানস’ কার্টুন দেখে মহাকাশ সম্পর্কে শিশু এলিজার যে আগ্রহের জন্ম হয়েছিল, বেঁচে থাকলে আর এক যুগের কিছু সময় পর এলিজা সেই স্বপ্নের ভ্রমণে যাবেন। সে লক্ষ্যেই নিজেকে প্রস্তুত করছে এখন সে। বিভিন্ন স্কিল শিখছে।
https://www.facebook.com/nasablueberry/videos/933115140409829/
সাত বছর বয়সে বাবা তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন আলবামার একটি স্পেস ক্যাম্পে। সেই ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা তাকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। তার ভাবনার জগতটাকে বদলে দেয়। অদম্য করে তোলে শিশুমনকে। তাই সেই শৈশবেই অন্য শিশুদের চেয়ে চিন্তায়, মননে, মানসিকতায় আলাদা হয়ে যায় মেয়েটি। আর এর সূত্র ধরেই মাত্র ১২ বছর বয়সে এলিজা সবচেয়ে কম বয়সী ব্যক্তি হিসেবে এলিজা আলবামা, কানাডার কুইবেক ও তুরস্কের ইজমিরে নাসার তিনটি পৃথক স্পেস ক্যাম্পে অংশ নেয়। নাসার মহাকাশচারী সান্ড্রা ম্যাগনাস তাকে সাহায্য করেছিলেন।
এর থেকে এলিজা মহাকাশ সম্পর্কে মৌল জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন মিশন কীভাবে পরিচালিত হয়, তা শিখে নেয়। মহাকর্ষ-শূন্য স্থানে চলাচল করার পদ্ধতি, ভারহীন স্থানে থাকার উপায়ও রপ্ত করেছে এই অদম্য কিশোরী । রপ্ত করেছে বিশেষ মুহূর্তে জরুরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা।এরইমধ্যে এলিজা বোটিকস্ বিষয়ে জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি একটি রকেটও বানিয়ে ফেলেছে। নাসা থেকে তাকে ‘ব্লুবেরি’ নামে ‘কল নেম’-ও দেওয়া হয়েছে।
নাসার নিয়ম অনুযায়ী, ১৮ বছরের আগে কেউ নভোচারী হিসেবে আবেদন করতে পারেন না। তবে এলিজার ক্ষেত্রে নাসার এ নিয়ম মানা হয়নি। শুরু থেকেই নাসা এই কিশোরীকে ভবিষ্যৎ মঙ্গল অভিযানের প্রথম মানুষ হিসেবে শক্ত, সামর্থ্য এবং উপযোগী করে তৈরি করতে চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আর ২০৩৩ সালে যখন মঙ্গল গ্রহে প্রথমবার মানুষ পাঠানোর অভিযান শুরু করবে নাসা, তখন এই কিশোরীর এলিজার বয়স দাঁড়াবে ৩২-এ। আর এটাই হলো একজন নভোচারীর জন্য উপযুক্ত বয়স।
এলিজা কার্সন নামে আমাদের বিশ্বের এই একমাত্র দুঃসাহসী যাত্রার অভিযাত্রী মেয়েটি জানে, হয়তো আর ফেরা হবে না তার এই পৃথিবীতে।শৈশব, কৈশোর আর তারুণ্যদ্বীপ্ত সময়ের ডানায় উপভোগ হবে না জীবন। চেনা মুখগুলো ম্লান হয়ে যাবে অদেখার আড়ালে। আর মাত্র ১৪ বছর পর সে হবে একমাত্র নিঃসঙ্গ মানুষ। পৃথিবী থেকে কয়েক কোটি মাইল দূরের লৌহের লালচে মরিচায় আবৃত তীব্র শীতল আর নিষ্প্রাণ এক গ্রহের ক্ষীয়মাণ নীল নক্ষত্রের নিচে হারিয়ে যাবে তার সব উচ্ছ্বলতা। এসব ভেবে সবারই গা শিউড়ে ওঠে। কিন্তু তা বাস্তবে করে দেখাবে যে, যে মুখোমুখি হবে এই কঠিন বাস্তবতার সেই কিশোরী তবে তাতে বিন্দুমাত্র ভীত নয়, সন্ত্রস্ত নয়।
এ প্রসঙ্গে এলিজার কথা হলো, কথা হলো, ‘যেখানে আমি যাব সেখানে আগে কেউ যায়নি। এটা ভয়ঙ্কর মিশন। তাই পৃথিবীতে কাউকে ভালবাসার পিছুটান রাখা এই মিশনের জন্য ডিস্ট্রাকশন’।এলিজার মনযোগ কতটা এই মিশনের ভেতরে গ্রথিত তা নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে তার এই মন্তব্য দিয়ে।
পোজামের মহাকাশ গবেষকরা এলিজার সাহসিকতায় মুগ্ধ। এনিয়ে তাঁরা বলছেন, ‘ এ বয়সে মহাকাশ যানে ঘুরে বেড়ানো বা ভিন্ন গ্রহে যাওয়ার ইচ্ছা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। এলিজা সেই স্বাভবিতকা থেকেই মঙ্গলযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর এতে এলিজা এরইমধ্যে বিশ্ব নাগরিক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। সেটা বিশ্বজুড়ে সবার নজর কেড়েছে। এলিজা চাইনিজসহ বিভিন্ন ভাষায় যোগাযোগ করার পারঙ্গমতা অর্জন করেছে। তার বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী, আমরা তার বয়সী তরুণদের উৎসাহিত করার জন্যেই মূলত এলিজাকে এমন সুযোগ দিচ্ছি।
ইন্টারনেট অবলম্বনে-