সাংসদ শম্ভুকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা আ.লীগ নেতাদের

সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৮
Spread the love

নিজস্ব প্রতিবেদক 

বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনের সাংসদ ধীরেন্দ্রদেবনাথ শম্ভুর নেতৃত্বকে দলের জন্য অনিরাপদ ও বিপজ্জনক অভিহিত করে তাঁকে  অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। গতকাল সকালে বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

সকাল ১১ টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চার পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির ও জ্যেষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়,  গত কয়েক বছর ধরে বরগুনার আওয়ামী লীগে জেলা সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু দলকে পারিবারিকীকরণ করে সীমাহীন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যহার এবং দলের ত্যাগী ও প্রকৃত নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে ভোগবাদী অপরাজনীতির সূচনা করেছেন। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বরগুনায় আওয়ামী লীগের  দীর্ঘদিনের সুনাম ও পরিচ্ছন্ন ইমেজ ক্ষুন্ন হচ্ছে। সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু,  পরিবার এবং তাঁর অপকর্মের সহযোগী কতিপয় নেতার এই অপকর্মের দায়িত্ব গোটা দল কিছুতেই কাঁধে নেবে না।

গত কয়েক মাসে সাংসদ ও জেলা ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে দলের নেতা-কর্মীদের পাশ কাটিয়ে কেবল তাঁর অনুগত কতিপয় মেরুদণ্ডহীন ব্যক্তিকে নিয়ে সরকারি চাকরি,বদলি, বিভিন্ন সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সীমাহীন অনিয়ম, ভাগ বাটোয়ারাসহ নানা অপকর্ম চালাচ্ছেন। এতে তিনি এখন দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের  থেকে বিচ্ছিন্ন। এমনকি অর্থের বিনিময়ে অন্য দলের লোকজনকে এনে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে মনোনয়ন দিয়ে দলের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। এর প্রতিবাদ না করলে এসব অপকর্মের দায় পুরো দলের ঘাড়ে বর্তাবে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার অভূতপূর্ব উন্নয়ন কার্যক্রমকে ম্লান করে দেবে। আমরা এজন্যেই দল, বরগুনার মানুষের স্বার্থে আজ ঐক্যবদ্ধভাবে দলের অবস্থান  স্পষ্ট করার জন্য এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন।

  এতে আরো বলা হয়, সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর  দুর্নীতি, অন্যায়, জুলুম, জমি দখল, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে ২৪ দফা অভিযোগ আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  সঙ্গে দেখা করে লিখিত আকারে দিয়েছি। এরপর থেকেই সাংসদ শম্ভু তাঁর অনুগত কতিপয় সুবিধাভোগীদের দিয়ে  দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অপঘাতমূলক তৎপরতা, ভয়ভীতি এমনকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার মতো অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ  হাসিনা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের বৈপ্লবিক উন্নয়ন করেছেন। সেসব উন্নয়নের  অনেক বড় প্রকল্প বরগুনা জেলায় বাস্তবায়নের সম্ভাবনা থাকলেও তাঁর উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার কারনে বরগুনা জেলাবাসী বঞ্চিত হয়েছেন। এরমধ্যে দেশের সর্ববৃহৎ শেখ হাসিনা সেনানিবাস, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মেডিকেল কলেজ- এসব বড় বড় প্রকল্প তাঁর দায়িত্বহীনতার কারনেই বরগুনায় বাস্তবায়ন হয়নি।

  আ.লীগ নেতারা বলেন, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু আমাদের সরকারের সময়ে গত দুই মেয়াদে তিনি মন্ত্রী হওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এরপর থেকেই তিনি দলের প্রতি চরম  অনীহা, অমনোযোগ, কখনো কখনো আত্মঘাতী নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।এমনকি তিনি দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কেও নানা বিষোদগারমূলক মন্তব্য করতে দ্বিধা করেননি।  তাঁর এই বেপরোয়া ও নীতি নৈতিকতাহীন আচরণের বিষয়টি দলীয় সভাপতি হয়তো জানতে পেরেই তাঁকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। অতএব, এমন  নেতৃত্বলোভী, হীন মানসিকতা সম্পন্ন এবং চিন্তার দিক থেকে ভারসাম্যহীন কোনো ব্যক্তি জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে থাকার যোগ্য নয়।

তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধে না গিয়ে পলায়নপর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং নিজের নাম পর্যন্ত পরিবর্তন করেন। পরে তিনি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত করান। এরপর ৭৯ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়মী লীগের মূল ধারার  মনোনয়ন না পেয়ে  মিজানুর রহমান চৌধুরির নেতৃত্বাধীন  আ.লীগের মনোনয়ন নেন এবং মই প্রতীকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু তখন বরগুনায় আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ারের ভয়ে তিনি মনোনয়ন নিয়েও আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সাহস পাননি। ২০০৬ সালের স্থগিত হওয়া নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে  স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে  মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন।

সামরিক বাহিনীর সমর্থনে জরুরী সরকারের সময় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া সংস্কারবাদী নেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।  এমনকি দল মনোনীত মেয়র প্রার্থী ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে হামলার শিকার হয়ে রক্তাক্ত হলেও সাংসদ শম্ভু  ছিলেন সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত। ওই সময় তাঁর এই রহস্যময় ভূমিকা নিয়ে আপনারা  গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। এভাবে তাঁর রাজনীতির শুরু থেকে একের পর এক দলের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতায় তিনি দলের কাছে এখন  বিপজ্জ্বনক ও আস্থাহীন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। দলের সমস্ত পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, তাঁর নেতৃত্ব এখন দলের জন্য অনিরাপদ।  আমরা তাঁর নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানাচ্ছি। পাশাপশি জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন, ওয়ার্ড আওয়মীলীগসহ  সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন  ঐক্যবদ্ধভাবে  এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।

ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ৩০ বছর ধরে বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে আছেন। এছাড়া তিনি ১৯৯১ সালে প্রথম সাংসদ হন। এরপর ১৯৯৬ সালে পুনরায় সাংসদ হয়ে সরকারের উপমন্ত্রী হন। ২০০১ সালে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের কাছে হেরে যান। এরপর ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পর পর দুবার সাংসদ হন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান    দেলোয়ার হোসেন,  জেলা আওয়ামীলীগের  সহ সভাপতি  হুমায়ুন কবির , যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক   মোতালেব মৃধা, জেলা যুবলীগ সভাপতি কামরুল আহসান,  সাবেক পৌর মেয়র  মো. শাজাহান, েজরা আ.লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ফজলুল হক জমাদ্দার,  সদর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক  শাহ মোহাম্মদ  ওয়ালি উল্লাহ,  পৌর আ.লীগের সভাপতি  আলমগীর হোসেন, জেলা আ.লীগের সদস্য গোলাম সরোয়ার, সামসুদ্দিন আহেম্মদ, এসএম মশিউর রহমান, উপেজলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামসুল হক গাজী, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন, জেলা  শ্রমিক লীগের  আহবায়ক  হালিম মোল্লা,  জেলা  ছাত্রলীগের  সাধারন সম্পাদক  তানবীর হোসেন।

এ বিষয়ে সাংসদ ধীরেন্দ্রদেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। তাঁর ঘনিষ্টজনেরা জানান, তিনি বর্তমানে ব্যক্তিগত সফরে সিঙ্গাপুর রয়েছেন।