বিশেষ প্রতিবেদক
পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ডের ১০ বছরের বেশি সময় পর এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিণ্ডিতে এক নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে গিয়ে আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন বেনজির।
তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) নেতা আবু মনসুর অসিম মুফতি নূর ওয়ালির লেখা একটি বইতে এই দায় স্বীকার করা হয় বলে গণমাধ্যম জানায়। টিটিপির ওই নেতার বইটি সম্প্রতি প্রকাশ হয়।
‘ইনকিলাব মেহসুদ সাউথ ওয়াজিরিস্তান ফ্রম ব্রিটিশ রাজ টু আমেরিকান ইম্পেরিয়ালিজম’ নামে এই বইয়ে উল্লেখ করা হয়, বেনজির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন যে, আবার ক্ষমতা এলে তাঁর সরকার মুজাহিদিদ-ই-ইসলামের বিরুদ্ধে লড়বেন। যে জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে বেনজির ভুট্টোর করা তার পরিকল্পনার তথ্য পান টিটিপি নেতা বায়তুল্লাহ। আর এর পর পরই তাঁকে (বেনজির) হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
এর আগে পাকিস্তানের এই নেত্রীর হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আর কোনও গোষ্ঠী হত্যার দায় স্বীকার করেনি। তবে দেশটির সাবেক সেনা শাষক জেনারেল পারভেজ মুশাররফ ওই সময়ই বেনজির হত্যাকাণ্ডের জন্য টিটিপিকে দায়ী করেছিলেন। মুশারফ তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
বইয়ে আরও উল্লেখ করা হয়, বেনজির ভুট্টোকে হত্যার জন্য দলটি বিলাল ও ইকরামুল্লাহ নামে দুই আত্মঘাতীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এরমধ্যে জঙ্গি বিলাল পিস্তল দিয়ে প্রথমে বেনজিরকে গুলি চালায় এবং তা তাঁর (বেনজির) গলায় বিদ্ধ হয়। এরপর জনসভায় আসা লোকদের সামনেই বিলাল তার বিস্ফোরক জ্যাকেট খুলে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেয়।
অবশ্য এর আগে ২০০৭ সালের অক্টোবরে করাচিতে তালিবান জঙ্গিরা বেনজিরের অপর একটি জনসভায় আত্মঘাতী হামলা চালালেও তিনি ওই হামলায় অক্ষত ছিলেন। তবে সেই হামলায় প্রায় ১৪০ জন নিহত হন। অভিযোগ আছে, তালিবানদের ওই ভয়াবহ হামলার পরেও সেই সময়ে ক্ষমতায় থাকা সেনা শাসক পারভেজ মুশারফের সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর জনসভায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়নি। বইটিতে দাবি করা হয়, সেই সুযোগ নিয়েই রাওয়ালপিণ্ডির জনসভাস্থেলে খুব সহজেই টিটিপির আত্মঘাতীরা প্রবেশ করতে সক্ষম হয় এবং তাঁকে হত্যার মিশনে সফল হয়।
তবে দীর্ঘ ১০ বছর টিটিপি বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে এসেছে। কিন্তু এখন কেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার দায় দায় স্বীকার করল সে সম্পর্কে ও দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।