রাকিবুল ইসলাম
হঠাত যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয়, বলেনতো পৃথিবীর কোন দুটি প্রাণীর চারিত্রিক গুণাবলী এক? তবে অনেকেই পারবে না। কারন এই দুটি প্রাণিকে আমরা কখনো তুলনা করে দেখিনি। তাছাড়া এরা একই জাত অথবা শ্রেণির না। দুজনের বাসস্থান ও আলাদা আলাদা।
সিংহ ও ঈগল। দুই রাজ্যের রাজা তাঁরা। একজন পাখির রাজ্যের আর আরেকজন পশু রাজ্যের।
পশুরাজ সিংহ পশুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শুধুমাত্র তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারনে। তাঁর মনোভাবের কারনে। সিংহ পশুদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী নয়, না সে সবচেয়ে বড় জীব। জিরাফের চেয়ে সে অনেক বেটে আর হাতির থেকে ছোট। শিয়ালের মত চালাক নয় সে কিংবা নেকড়ের মত হিংস্র। তবে কেন সিংহ পশুরাজ?
একটু ভেবে দেখুন। যদি একটি সিংহ আর একটি হাতি মুখোমুখি হয় তবে এরা দুজন কি করবে? হাতি যখন সিংহকে দেখবে, তখন তার মাথায় আসবে- সিংহ এক্ষুনি আমাকে মেরে খেয়ে ফেলবে। এ অবস্থায় হাতি পালানোর চেষ্টা করবে।
আবার সিংহ যখন হাতিকে দেখবে তখন তার মাথায় একটা শব্দই আসবে- খাবার! সে কিভাবে হাতিকে মেরে তার পেট পুজো করবে সে কৌশল গ্রহণ করবে।
এই দুজনের মধ্যে পার্থক্য হল শুধু মনোভাবের। হাতি যে ইচ্ছে করলেই সিংহকে ধরে তার শুর দিয়ে আছাড় মারতে পারে, সে কথা তার মাথায় ও আসে না। আর সিংহের মাথায় হাতিকে ভয় পাওয়ার বিষয় চিন্তা-ভাবনার বাইরে। হাতির একটি পায়ের লাথিই যে তার জীবন নাশের জন্য যথেস্ট তা তার চিন্তা করার সময় নেই। ভয় তার অবিধানের বাইরের শব্দ।
আবার দেখুন ঈগল কিন্তু সবচেয়ে বড় পাখি নয়। উট পাখি হল সব চেয়ে বড় পাখি। ময়ূর কিংবা কাকাতুয়ার মত সুশ্রী পাখিও নয়। না সে ময়নার মত কথা বলতে পারে, না পারে কোকিলের মত সুমধুর সুরে গান গাইতে। তাহলে কেন সে পাখিরাজ?
ওই যে, মনোভাব! কয়েক কিলোমিটার দূরের শিকার বধের মনোভাব পাখিরাজ্যে শুধু ঈগলেরই আছে। মেঘের উপরে ভেসে বেড়ানো অবস্থায় সাগরের তলদেশের বিষধর সাপের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর তার। কয়েক কিলোমিটার উচ্চতা থেকে নেমে এসে ছো মেরে নিয়ে যায় তার শিকারকে।
সিংহ আর ঈগল এর মনোভাব এক হওয়ার কারনে এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও প্রায় একই। দুজনই ভয়হীন শিকারি। দুজনই নিজের আয়ত্বের বাইরে গিয়ে শিকার করে। সিংহ যত দিনই না খেয়ে থাকুক না কেন কোনদিন সে ঘাস খেয়ে বাচার চেষ্টা করবে না। আর ঈগলও দুর্দিনে পোকা-মাকড় খাবে না। ঈগল যেমন মেঘের ওপরে একাকী ঘুরে বেড়ায় তেমনি সিংহও থাকে গহীন অরণ্যে। নেতৃত্ব তাদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য।
মানুষ তার চিন্তার মধ্যে সর্বদা আবদ্ধ। ভয়ের কারনে নিজেকে গুটিয়ে রাখে সে সবসময়। নিজের সত্যিকার সামর্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকে সারা জীবনভর। নিজের চেনা-পরিচিত স্বাচ্ছন্দের পরিবেশের বাইরে সে যেতে চায়না।
যার দুটি হাত আর দুটি পা এর একটাও নেই, সে ৫৬০ কিমি ইংলিশ চ্যানেল (উত্তর সাগর থেকে আটলান্টিক মহাসগারের সংযোগ চ্যানেল) জয় করছে। আর আমরা সাধারন পুকুরে নামতে ভয় পাই। কি সমস্যা আমাদের? ভয়! ব্যর্থ হওয়ার ভয়।
আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, সফলতা সর্বদা আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবেশের বাইরে। ইংরেজিতে একটা কথা আছে- “Success is out of your comfort zone”
সফলতাকে শিকার করে নিজের কাছে নিয়ে আসতে হবে। ঠিক যেমন টা করে সিংহ আর ঈগল। শিকারের প্রতিটি পদক্ষেপে থাকবে বাধা-বিপত্তি। সেগুলোকে জয় করাই তো শিকারীর কাজ!
আপনি যদি প্রতিদিন কমপক্ষে একটি ভয়কে জয় করতে পারেন, তবে দেখবেন আপনি ধীরে ধীরে সিংহ এবং ঈগলের মনোভাবের অধিকারি হচ্ছেন। একে বলতে পারেন “লায়ন এটিটিউড” কিংবা “ঈগল এটিটিউড”।
যেসব বিষয়ে আপনার ভয় কাজ করে, সেগুলোর একটা লিষ্ট করে ফেলুন। এরপর ধীরে ধীরে সেগুলোর মুখোমুখি হোন। প্রতিদিন নিত্য-নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করুন। নিজেকে দুর্বল ভাববেন না। নিজের সামর্থ্যকে বিকাশিত করুন। কখনো বলবেন না, “Why Me?”। আপনি বলবেন, “Try Me!”
হাতি নয়, সিংহ হতে হবে। জয় হোক আপনার!
ওহ হ্যা, কি কি বিষয়ে আপনি ভয় পান, তা কমেন্টে জানান। 🙂