লিভার সুস্থ রাখার ৬ টি কার্যকরী উপায়

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
Spread the love

আয়না ২৪ স্বাস্থ্য

লিভার বা যকৃত যার প্রচলিত বাংলা হচ্ছে ‘কলিজা’। লিভার হলো মানুষের দেহের প্রধান অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম।এটি শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গঅধিকাংশ ক্ষেত্রেই  আমাদের কিছু অসাবধানতার জন্য লিভার খারাপ হয়ে থাকে,আর তার প্রধান কারন হলো আমাদের কিছু বদ অভ্যাস। আমাদের কিছু ভাল অভ্যাস এর দ্বারা এই অঙ্গকে আমরা সুস্থ রাখতে পারি।

আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা বাইরের খাবার পছন্দ করে থাকেন, এই বাইরের খাবার কে আমাদের না বলতে হবে যদি আমরা আমাদের শরীর এর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিভার কে সুস্থ রাখতে চাই। ফ্যাটই হলো লিভার সমস্যার অন্যতম একটি প্রধান কারন। বিভিন্ন প্রকার ভাজা-পোড়া, তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া,অতিরিক্ত চিনি এর ব্যবহার করা,বিভিন্ন প্রকার এনার্জি ড্রিংক করা এবং অতিরিক্ত মদ্যপান- এইসব অতিরিক্ত দ্রব্য ও খাবার এ প্রচুর পরিমান এ ফ্যাট থাকে।এইসব দ্রব্য অতিরিক্ত ব্যবহার ও খাওয়া তে লিভার ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পরে।

চিকিৎসকের দেয়া পরামর্শ অনুজায়ী লিভার সুস্থ রাখার কিছু নিয়ম জেনে নেই ।আমরা আশা করতে পারি এই নিয়ম গুলো মেনে চলতে আপনার লিভার সুস্থ থাকবে এবং আপনিও সুস্থ থাকবেন।

তবে লিভার সুস্থ রাখার নিয়ম গুলো দেয়ার আগে লিভার সম্পর্কে কিছু  ধারনা আমাদের থাকা দরকার।

প্রাণীদেহে অবস্থিত দেহের বৃহত্তম গ্রন্থি লিভার হল একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিছু শারীরিক কাজে এবং প্রাণীদেহের বিপাকে প্রধান ভূমিকা পালন করে থকে। মধ্যচ্ছদার নিচের অংশে অবস্থান হলো লিভার এর।লিভারে পিত্ত উত্পন্ন হয়;পিত্ত হলো একধরনের ক্ষারীয় যৌগ যা পরিপাকে সহায়তা করে, বিশেষত স্নেহজাতীয় খাদ্যের ইমালসিফিকেশনে।গ্লাইকোজেনের সঞ্চয়, প্লাজমা প্রোটিন সংশ্লেষণ, ওষুধ বা অন্যান্য রাসায়নিকের বিষক্রিয়া দূর করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অপরিহার্য।

এ ছাড়া,লিভার দেহের বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।লিভার ২ খণ্ডতে বিভক্ত।লিভারে জমা চর্বি অনেক সময় স্থানীয় প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং এ প্রদাহ থেকে কিছুসংখ্যক রোগীর লিভার সিরোসিস, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে লিভার ক্যানসারও হতে পারে। ‘ফ্যাটি লিভার’ হলো এক ধরনের রোগ। লিভারের ওজনের পাঁচ থেকে দশ ভাগের বেশি চর্বি দিয়ে পূরণ হলে এ রোগটি হয়। সাধারণত মদ্যপানের কারণে ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে। সাধারণত রোগটি ধরা পড়ে না অন্য রোগের পরীক্ষা করার সময় সাধারণত রোগটি ধরা পড়ে।অবসন্নতা, ক্ষুধামান্দ্য আবার কখনো কখনো পেটের উপরিভাগের ডানদিকে ব্যাথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

লিভার সুস্থ রাখার নিয়ম হলো-

১। বাইরের খাবার পরিহার করা- প্রথমে আমাদের বাইরের তেল যুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে,বাইরের তেল-মশলাযুক্ত খাবার এ প্রচুর পরিমান এ জীবাণু বিস্তার করে থাকে। আর এতে অনেক ফ্যাট থাকে যা লিভারে চর্বি জমায়।

২। একটানা অনেকক্ষণ বসে না থাকা-  আমরা অনেকেই আছি যাদের একটানা বসে বিভিন্ন কাজ করতে হয়।একটানা অনেকক্ষণ বসে কাজ না করে আমরা হাঁটাহাঁটি করে আবার বসে কাজ কাজ করতে পারি।একটানা অনেকক্ষণ বসে না থাকার জন্য চেষ্টা করবো।আমাদের অস্থিসন্ধি, Tendon ও Ligament ইত্যাদির ওপর যকৃতের প্রভাব অনেক বেশি।অনেকের অস্থিসন্ধি, Tendon ও Ligament-এ স্টিফনেস দেখা দিতে পারে যদি আমরা দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার ও টেলিভিশনের সামনে বসে থাকি।আপনার যকৃতের স্বাস্থ্যর জন্য ভালো হয় যদি আপনি একটানা বসে থাকাতা পরিহার করেন।

৩।ধূমপান থেকে বিরত থাকা-  অতিরিক্ত মদ্যপান এবং বিড়ি সিগারেট থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে এবং পরিহার করতে হবে।সিগারেট খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এটা আমরা সবাই জানি চিকিত্সকরা বলেন, ধূমপানে পায়ের নখ থেকে শুরু করে মাথার চুল পর্যন্ত এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই যা কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এটা আমরা কখনো অস্বীকার করতে পারবনা। লিভার হলো তার মধ্যে একটি ধূমপানে সবচে বেশি যে অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ইথানল’ হলো একটি পদার্থ বা উপাদান যা মদের মধ্যে রয়েছে। আর এই পদার্থ হলো লিভারের ভয়ঙ্কর শত্রু। সিগারেটের নিকোটিন ও মদের ইথানল মানবদেহে বিভিন্ন রোগ, বিশেষ করে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন, সুস্থ থাকুন।

৪।টক্সিন থেকে দূরে থাকুন- অ্যালকোহল লিভারে টক্সিন জমা করে।ত্বকে বিষক্রিয়া লিভারের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। ত্বকের মাধ্যমে বিষ রক্তে শোষিত হয়। তাই স্প্রে, টক্সিন থেকে দূরে থাকুন।

৫। বেশি ওষুধ না খাওয়া- বেশি কিছু ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। টাইলেনল বা কোলেস্টেরলের ওষুধ আবার কিছু পেনকিলার ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে থাকে।তাই অতিরিক্ত ও পাওয়ার ফুল  ওষুধ থেকে সাবধান।

 

এছাড়াও আপনি আপনার বাসায় খুব সহজেই একটি বিশেষ পানীয় তৈরি করে পান করতে পারেন- যা আপনার লিভারকে সুস্থ রাখবে।

স্পেশাল পানীয় তৈরির প্রণালী-

এমন একটি পানীয় বানাতে পারি যা নিয়মিত পান করলে আমাদের লিভার সম্পূর্ণ সুস্থ থাকবে।১ লিটার ফুটানো ঠান্ডা পানি পাতি লেবু ৬টি আদা কুঁচি ৪ কোয়া রসুন ৪টি পুদিনা পাতা ৩ টেবল চামচ তিসির তেল ৩টি ছোট বাতাবি লেবু জিরে গুঁড়ো সামান্য পরিমাণ প্রণালী।প্রথমে আমরা পাতিলেবু এবং বাতাবি লেবুর রস বার করে একটি পাত্রে রাখতে পারি তারপর আদা আর রসুন খুব মিহি করে কেটে ছোট একটি পাত্রে সামান্য জলে কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাকব ।এ বার পাতি লেবু ও বাতাবির রস একটি ব্লেন্ডারের মধ্যে নিয়ে তাতে তিসির তেল, পুদিনা পাতা ও ছোট চামচের ১ চামচ জিরের গুঁড়ো দিয়ে ব্লেন্ড করে নিব এরপরে ঠান্ডা জলে সব উপকরণ মিশিয়ে দিব,ভাল করে নেড়ে ছেঁকে নিব। তৈরি হয়ে গেল আমাদের লিভারের মহৌষধি। রোজ সকালে খালি পেটে এক গ্লাস আপনার লিভারকে বাইরের জীবানুর আক্রমণ থেকে রক্ষা তো করবেই, নতুন সংক্রমণ হওয়াও আটকাবে।

আমাদের সৃষ্টিকর্তা এত বিশাল পরিমাণ ক্ষমতা দিয়ে লিভার তৈরি করেছেন যে, খুব ক্ষতিগ্রস্ত না হলে লিভারের রোগ বোঝা যায় না। ভাইরাল হেপাটাইটিস যা সাধারণের মাঝে জন্ডিস লিভারের অসুখ-বিসুখের মধ্যে প্রধানতম রোগ দূষিত পানি কিংবা খাদ্যবস্তু গ্রহণের ২ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে হেপাটাইটিস এ এবং ই দ্বারা আক্রান্ত হলে লক্ষণ দেখা যায়।

আমরা দূষিত পানি পান করা থেকে বিরত থাকব,অপ্রয়োজনে টাকা নষ্ট না করে অযথা মদ্যপান এবং বিড়ি সিগারেট সেবন করব না।যা আমাদের লিভারের পক্ষে হুমকি সরূপ।আমরা লিভার কে সুস্থ রাখতে সচেতন হই এবং সুস্থ থাকি উপরের নিয়ম গুলো মেনে রেখে।