আয়না২৪ প্রতিবেদন
দ্রোহের কবি, বিরহের কবি, প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যিনি মনে অপার দুঃখ নিয়ে গেয়েছিলেন-আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে। তবে তার লেখা গান সত্যি হয়েছে। তাঁকে সত্যিই ভোলা যায় না। বাঙালীর অস্তিত্বে-চেতনায় মিশে আছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। গণমানুষের প্রিয় কবি বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী। সাম্য, বিরহ-বেদনা আর বিদ্রোহের কবি বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তাঁর লেখনী ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে জাগিয়ে দিয়েছিল ভারতবাসীকে। নজরুল তার কবিতা, গান, উপন্যাসসহ অন্যান্য লেখনী ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সামপ্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন। সে কারণে ইংরেজ সরকার তাঁর গ্রন্থ ও রচনা বাজেয়াপ্ত করেছে এবং কারাদণ্ড দিয়েছে। কারাগারেও বিদ্রোহী নজরুল টানা চল্লিশ দিন অনশন করে বিদেশি সরকারের জেলজুলুমের প্রতিবাদ করেছিলেন।
‘বল বীর চির উন্নত মম শির’ কবিতার মাধ্যমে তিনি মানুষের সামনে আবির্ভূত হন ‘বিদ্রোহী’ কবি হিসাবে। আজও কবির নানা ধরনের লেখার মাঝ থেকে বিদ্রোহের পংক্তিমালা বাঙালির হূদয়ে অনাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দুন্দুভি বাজিয়ে চলে। তার কবিতা ‘চ্ল চল্ চল্’ বাংলাদেশের রণসংগীত।
রবীন্দ্রসৃষ্ট বিশাল জগতের পাশে কবি নজরুল গড়ে তোলেন নিজস্ব জগত্। সেখানে ফুটিয়ে তোলেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নজরুলের সদম্ভ অভ্যুদয়কে এই বলে স্বাগত জানিয়েছিলেন, ‘আয় চলে আয়রে ধূমকেতু, আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু’।’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘বিদ্রোহী কবি’ এবং আধুনিক বাংলা গানের ‘বুলবুল’ নামে খ্যাত কাজী নজরুল ইসলাম বিশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। দ্রোহ, প্রেম, মানবতা কবির রচনাকে করেছে চিরন্তন, নিয়ে গেছে গণমানুষের কাছাকাছি। শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের আর্তি বিশেষভাবে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর রচনায়।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ সনে এবং ইংরেজী ১৮৯৯ সালে । পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন।
দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তাঁর নিত্য সঙ্গী। তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। পিতার অকাল মৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম এবং মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাজ করেছেন। পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যে ইসলামি ঐতিহ্যের সার্থক ব্যবহারে এ সম্পৃক্ততা খুব ফলপ্রসূ হয়েছে।
১৯৭২ সালের ২৪ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশেেআনা হয়। বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষণা দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে ছিলেন। তাঁর জীবনকাল ৭৮ বছর হলেও ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘ ৩৪ বছর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন। আজ এই কবির জন্মবার্ষিকী। কবির প্রতি দেশের সক শ্রেণি-পেশার মানুষ আজ বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।