এরশাদের জাপার নেতৃত্বে ৫৭ দলের জোটের আত্মপ্রকাশ আজ

Spread the love

 

আয়না২৪ প্রতিবেদন

আগামী  জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন একটি রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি।  জাতীয় প্রেস ক্লাবে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ৫৭ দলের এই ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’-এর ঘোষণা দেবেন দলটির প্রধান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ।  

নতুন এই জোটে  বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ) ও জাতীয় ইসলামী মহাজোটসহ ৫৭ টি   দল থাকবে বলে জানা গেছে।  এ ছাড়া ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিসসহ আরো কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল এতে যোগ দিতে পারে।

 জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার  বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আবারও ক্ষমতায় যাওয়া। ক্ষমতায় থাকাকালে এরশাদ যে উন্নয়ন করেছেন গত সরকারগুলো তা অতিক্রম করতে পারেনি।   তা্ই  প্রকৃত  উন্নয়নের জন্য জাতীয় পার্টির বিকল্প নেই। 

 চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন সংগঠন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘এরশাদ সাহেব একসময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছে। চারপাশের লোকজন তাঁকে সঠিক পরামর্শ দিচ্ছেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এ জন্য তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। তাই তাঁর এই নতুন জোটের সফলতায়   প্রশ্ন আছে। ’   ’

জানা গেছে, এ জোটের কেউ এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। ৫৭ দলের লিয়াজোঁ কমিটি কর্মসূচি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেবে। এই লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করবেন এরশাদের প্রেস সেক্রেটারি ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়। কমিটিতে শরিক দলগুলোর মহাসচিবরা থাকবেন সদস্য হিসেবে। নতুন জোটের চেয়ারম্যান হচ্ছেন এইচ এম এরশাদ। আর মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকবেন রুহুল আমিন হাওলাদার। গত শুক্রবার জাতীয় পার্টির মহাসচিবের গুলশানের বাড়িতে এক সভায় থেকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মান্নান, বিএনএ চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী , জাতীয় ইসলামী মহাজোটের চেয়ারম্যান আবু নাসের ওয়াহেদ, জোটের প্রধান সমন্বয়ক সুনীল শুভ রায় প্রমুখ।

জোটের সহ-সমন্বয়কারী এস এম মুশফিকুর রহমান জানান, ওই বৈঠকে দুই জোট ও দুই দল নিয়ে এরশাদের নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোট গঠনের চুক্তিপত্র সই হয়েছে। জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, ‘দেশে জোটের রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ আছে। কোন দলের কত ভোট আছে সেটি মূল কথা নয়, দেশের মানুষ দেখতে চায় এরশাদের সঙ্গে কয়টি দল আছে। ২০ ও ১৪ দলীয় জোটের বেশির ভাগ শরিক দলের জনভিত্তি নেই। তার পরও শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া জোটের রাজনীতিকে গুরুত্ব দেন। ’

নবগঠিত এই  জোটে জাতীয়  পার্টি ছাড়া বাকি সব দলই নাম  সর্বস্ব। বেশির ভাগই সম্প্রতি গড়ে ওঠা। তাদের কার্যালয় নেই,  নেতাকর্মীও নেই তেমন। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী এ বিষয়ে বলেন, ‘দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের সঙ্গে জনপ্রিয়তার তুলনায় দুই নেত্রী পিছিয়ে। জেল থেকে দু-দুবার পাঁচ আসনে জেতার ইতিহাস আছে একমাত্র তাঁর। ’

   এদিকে  ২১টি রাজনৈতিক দলের জোট বিএনএর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে তেমন কোনো সুবিধা না পাওয়ার আশঙ্কায়। বরং জাতীয় পার্টির সঙ্গে থাকাটা বেশি লাভজনক হবে বলে মূল্যায়ন তাদের। গত ৫ এপ্রিল বিএনএর এক জরুরি সভায় নিষ্ক্রিয়তা ও সিদ্ধান্তহীনতার অভিযোগে জোটের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে বহিষ্কার করা হয়। নতুন চেয়ারম্যান হন সেকান্দার আলী মনি এবং সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর হোসেন। এরপর জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দেয় বিএনএ।

 সূত্রটি জানায়, নাজমুল হুদাকে বিশ্বাস করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। তাই সরকারের সঙ্গে ক্রমান্বয়ে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকায় নেতারা চিন্তিত হয়ে পড়েন জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ চায় জাতীয় পার্টি একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হোক। এসব বিবেচনায় জাতীয় পার্টির সঙ্গেই জোট করার সিদ্ধান্ত হয়।

বিএনএ জোটের দলগুলো হলো, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, গণতান্ত্রিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি, আমজনতা পার্টি, কৃষক শ্রমিক পার্টি, ইউনাইটেড মুসলিম লীগ, গণ-অধিকার পার্টি, বাংলাদেশ প্রতিবাদী জনতা পার্টি, বাংলাদেশ গণজাগরণ পার্টি, বাংলাদেশ গ্রামীণ পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগ, তৃণমূল লীগ, জাতীয় হিন্দু লীগ, বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি ইত্যাদি।

এছাড়া গত ১ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এরশাদের উপস্থিতিতে ৩৪টি দল নিয়ে জাতীয় ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করা হয়। এ জোটের শরিকরা হলো ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, গণ-ইসলামিক জোট, পিপলস জাস্টিস পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ইসলামিক লিবারেল পার্টি, জাতীয় শরিয়া আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, বাংলাদেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী জনকল্যাণ পার্টি, ইউনাইটেড ইসলামিক লীগ, জমিয়তে মুসলিমিন বাংলাদেশ, ন্যাপ-ভাসানী, খেলাফত সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি, ইসলামী গণ-আন্দোলন, জাতীয় ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তুল ওলামা পার্টি, জাতীয় ইসলামিক মুভমেন্ট, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ, ইনসানিয়াত পার্টি, খেলাফত বাস্তবায়ন পার্টি, ইসলামী আক্বিদা সংরক্ষণ পার্টি, ইসলামী সংরক্ষণ পার্টি, মুসলিম জনতা পার্টি, খেদমতে খালক পার্টি, ওলামা-মাশায়েখ সমন্বয় পরিষদ, ইউনাইটেড ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামী পার্টি, ইসলামী সমাজকল্যাণ আন্দোলন, বাংলাদেশ ইত্তেহাদুল মুসলিমিন, বাংলাদেশ খেলাফাতুল উম্মাহ, বাংলাদেশ আক্বিমুদ্দিন মজলিস, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জমিয়তুল হেদায়াহ মুভমেন্ট।