আয়না২৪ প্রতিবেদন
একে তো উজ্জ্বল পূর্ণিমা। তার উপরে এত কাছাকাছি দুজনে! দুজন মানে, চাঁদ আর পৃথিবী । হ্যা, আজ রাত সেই মাহেন্দ্রক্ষেণ যে রাতে চাঁদ আর পৃথিবী সবচেয়ে কাছাকাছি হয়েছে। চেয়ে দেখুন!
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, আজ সোমবার দিবাগত পূর্ণিমার রাতে অনেকটাই কাছাকাছি আসছে চাঁদ ও পৃথিবী। সৌর পরিবারের গ্রহ পৃথিবী আর পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের গড় দূরত্ব তিন লাখ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। আজ সেটা ২৭ হাজার ৮৮৯ কিলোমিটার কমে হবে তিন লাখ ৫৬ হাজার ৫১১ কিলোমিটার। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী কোনো পূর্ণিমার দিনে পৃথিবী ও চাঁদকে এত কাছে শেষ দেখা গিয়েছিল প্রায় ৬৯ বছর আগে। সেবার উভয়ের মধ্যে একটু বেশি দূরত্ব কমেছিল-মানে ২৭ হাজার ৯৩৮ কিলোমিটার। এবং ফের দুজনকে এত কাছাকাছি দেখতে হলে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত মানে আরো ১৮ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
চাঁদ নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। চাঁদের মায়াবী আলোয় চমৎকার একটি রাত কাটানোর সুযোগ এসেছে আজ । এমন চাঁদকে বলা হয় সুপারমুন। দীর্ঘ সময় পর উপগ্রহটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসছে। সর্বশেষ ১৯৪৮ সালের ২৬ জানুয়ারি সেটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিল।
পূর্ণিমার চাঁদ যতটা বড় দেখায় তার চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি বড় দেখাবে এবারের সুপারমুনকে। আর তার উজ্জ্বলতা হবে সাধারণ পূর্ণিমার চাঁদের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। ১৪ নভেম্বর সুপারমুনটিকে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখতে পারবেন উত্তর আমেরিকার মানুষ।নিউজিল্যান্ডে দেখা যাবে মধ্যরাত থেকে। ইউরোপ আফ্রিকার দ্রাঘিমাংশে দেখা যাবে ১৪ ও ১৫ নভেম্বর দু’রাত ধরে।
প্রতিবছরই এমন ছোটখাট তিন-চারটা সুপারমুন হয়। কিন্তু, অন্য সুপারমুনগুলোর চেয়ে এ সুপারমুনের বিশেষত্ব এখানেই যে, এবার চাঁদ চলে আসবে পৃথিবীর আরো কাছে। ২৫ নভেম্বর ১৯৩৪ সালে আসবে আরো কাছে তিন লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে।
সুপারমুনের কোনো সরাসরি বাংলা প্রতিশব্দ নেই। জ্যোতিষী রিচার্ড নোলে সর্বপ্রথম সুপারমুন শব্দটি ব্যবহার করেন ১৯৭৯ সালে। একে অতিকায় চাঁদ অর্থে ব্যবহৃত করা হয়।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় লুনার স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, দুদিকের অভিকর্ষের টানাটানিতে তাই পূর্ণিমায় পৃথিবীর জলস্তরের উঠা-নামা হয় সবচেয়ে বেশি। যাকে আমরা জোয়ার-ভাটা বলি। আর ওই পূর্ণিমাতেই যখন পৃথিবীর একদিকে থাকা চাঁদটি তার কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে সবচেয়ে কাছে চলে আসে আমাদের এ বাসযোগ্য গ্রহের (পেরিজি), তখনই হয় সুপার মুন।
তিনি আরও বলেন, ওই সময় পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব থাকে ২ লাখ ২৩ হাজার ৬৯০ মাইলেরও কম। কারণ, চাঁদ আমাদের পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ডিমের মতো কক্ষপথে। ফলে তা কখনও পৃথিবীর কাছে আসে, কখনও তা দূরে সরে যায়, অনেকটা স্বপ্নের মতোই। সবচেয়ে দূরে গেলে সেই দূরত্বকে আমরা বলে থাকি ‘অ্যাপোজি’।
বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ, সূর্যকে ঘিরে পৃথিবী ঘোরে তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে। আর পৃথিবীকে কেন্দ্র করে উপবৃত্তাকার (অনেকটা ডিমের মতো) কক্ষপথে পাক খায় চাঁদ। পৃথিবীকে এক বার পাক খেতে তার সময় লাগে সাড়ে সাতাশ দিন। এই সাড়ে সাতাশ দিনের মধ্যে চাঁদ এক বার পৃথিবীর কাছে চলে আসে এবং এক বার পৃথিবীর থেকে দূরে চলে যায়। দূরত্বটা যখন সব থেকে কমে যায়, সেটাকে বলে ‘অনুসূর’ অবস্থান এবং তারা যখন একে অপরের থেকে সর্বাধিক দূরত্বে থাকে, সেই অবস্থানের নাম ‘অপসূর’। চাঁদই কাছে আসে পৃথিবীর। কিন্তু সেই কাছে আসাটা যে কখনওই মিলনের পূর্ণতা পায় না, তার কারণ উভয়ের কক্ষপথ পৃথক।