আয়না২৪ প্রতিনিধি, বেতাগী (বরগুনা)
বাঙালী জাতির ইতিহাস আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস। যুগে যুগে এ জাতি লড়াই করেছেন নিজের স্বাধীকারের জন্য। জাতির সুচনালগ্ন থেকে অত্যাচারী রাজা,জমিদারের বিরুদ্ধে। তাড়িয়েছেন ব্রিটিশ। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর যখন পাকিস্তানীরা আমাদের ভাষা,সংস্কতি ও অর্থনৈতিক মুক্তিকে শৃঙ্খলিত করতে চেয়েছে, তখনো বীরের ভ’মিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। বিশ্বের বুকে একমাত্র জাতি,যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন।
আমাদের পূর্ন স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। এ যুদ্ধে দেশের আপামর জনতা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; অকাতরে দান করেছিল তাদের জীবন। রাজপথ রঞ্জিত করে রক্তে। অবশেষে নয় মাসের যুদ্ধে রক্তের বিনিময় আসে কাঙ্খিত স্বাধীনতা। একাওরের রনাঙ্গানে উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীবাসীরও অবদান কম নয়। জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ও স্মৃতি যেন কালের গর্ভে হারিয়ে না যায় সে কারনেই উপজেলা পরিষদের সহযোগিতায় ‘২০১২ সালে নির্মিত হয়‘দুর্জয় বেতাগী’। ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন তৎকালিন এমপি প্রয়াত আলহাজ্ব গোলাম সবুর টুলু ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ এবিএম গোলাম কবির। কাজটির বাবাস্তবায়ন করেন বাবুল আক্তার,হাদীসুর রহমান পান্না, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব সিকদার,নাসির উদ্দিন ও মিজানুর রহমান।
মুক্তিকামী মানুষের প্রেরনার উৎস হিসেবে মহান মুক্তি সংগ্রামে সর্বস্তরের জনগনের স্বত:স্ফুর্ত অংশ গ্রহনের এটি মুর্ত প্রতীক। উপজেলার কচুয়া- বেতাগী-ফেরীঘাট সংলগ্ন পীচঢালা সড়কের চৌ- মোহনায় স্তম্ভটি নির্মিত। সরকারী জায়গায় দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভটি নতুন প্রজম্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এতে ১৮৪ জন মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ও পরিচয় সন্ধান করা হয়েছে। স্মৃতি স্তম্ভর নকশা তৈরীতে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। সেই সময়ে সমাজ সচেতন জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক প্রয়াসে নির্মান কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে সরকারি কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকসহ অন্যারাও।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ ভাস্কর্যটিতে স্মৃতি ও শোকের আবহের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথাঁ। অসীম আকাশের দিকে দৃষ্টি গোলাকার আকৃতির স্তম্ভটির মুল অংশে ৪ ফুট বেদীর উপর রয়েছে অষ্টমভূজ। কালচে ও সাধা রঙের টাইলসে আবৃত প্রতিটি ভ’জে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম। উপরিভাগে স্মৃতির মিনার হিসেবে মাথা উঁচু করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে স্মৃতি সৌধ। যার মাধ্যমে স্মরন করা হয়েছে শহীদদের যারা দেশের পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। ভেতরে তেজদীপ্ত রক্তিম লাল সুর্য যা ভেদা- ভেদ ভুলে গিয়ে নয়া যৌবনের ও দেশ গঠনের আভা ছড়াচ্ছে। যার কোন তুলনা নেই। অনন্তকাল ধরে স্বাধীনতার প্রেরণা।