নিভৃতচারী ও  নির্জনতার কবি এমিলি ডিকেনসন

নভেম্বর ১২, ২০১৮
Spread the love

রহমান রাকিব

এমিলি ডিকেনসন যিনি নিভৃতচারী ও  নির্জনতার কবি হিসেবে বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসে  খ্যাতিমান। প্রথাবিরোধী  এবং লৌকিকতা বিবর্জিত এই কবি বিংশ শতাব্দীর কাব্য জগতে সৃষ্টি করেছিলেন এক অনন্য ধারা।   নতুন ধারার প্রবর্তক এই কবি ছিলেন প্রচারবিমুখ। এজন্য  তাঁর কবির কাব্যপ্রতিভার  বিশ্ব দরবারে প্রকাশ ঘটে তাঁর মৃত্যুর পর। 

আমেরিকার  ম্যাসাচুসেটস শহরের কাছে আমহার্স্ট শহরে ১৮৩০ সালের ১০ ডিসেম্বর জন্ম নেন   আমেরিকার মৌলিক কবি  এমিলি ডিকেনসন।  তিনিেএকাধারে ছিলেন মেধাবী ও  মনোযোগী ছাত্রী। অন্যদিকে অনন্য সাধারণ কবি। প্রতিভাবান এই  নারী কবি  আমহার্স্ট একাডেমিতে পড়াশুনা শুরু করলেও তা বেশিদূর এগোয়নি।

আমহার্স্ট কলেজে  পড়াশোনাকালে এমিলি ইংরেজি এবং ধ্রুপদী সাহিত্য, লাতিন, উদ্ভিদবিদ্যা ও ইতিহাস  বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন।  মাউন্ট হলিওক ফিমেল সেমিনারিতেও এক  পার করেন  তিনি। সেখানে ধর্মজ্ঞান তাঁর জীবনে ভিন্ন  মাত্রা আনে। ১৮৪৮ সালে  প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অবসান ঘটিয়ে  বাড়িতে ফেরেন তিনি।  তাঁর প্রতিভা নিয়ে কারো কোনো  সংশয়  না থাকলেও  এমিলি  প্রতিবেশিদের কাছে এক রহস্যময়ী নারী ছিলেন। 

অন্তর্মুখী স্বভাবের এই নির্জন স্বভাবের মানুষটি লেখালেখি শুরু করেন কিশোর বয়স থেকেই। তাঁর বেশিরভাগ কবিতার বিষয়বস্তু ছিল মৃত্যু  এবং অমরত্ব। আমহার্স্ট একাডেমির প্রিন্সিপাল লিওনার্ড হামফেরি তাঁর লেখালেখির ব্যাপারে ছোট এমিলিকে আগ্রহীকে করে তোলেন।এছাড়া পারিবারিক বন্ধু বেনজামিন ফ্রাংকলিন নিউটনের অবদানও এক্ষেত্রে কম নয়।  তবে  সবচেয়ে বেশি সখ্য ছিল তাঁর ভাবী সুসান গিলবার্টের।জানা যায়  কবি এমিলি সুসানকে প্রায় ৩০০ এর মত চিঠি লিখেছিলেন।  



ছোট ছোট শব্দ ও  বাক্য ব্যবহার  তাঁর কবিতা  শৈলীকে তৎকালীন  সময়ে অনেকটাই অপ্রচলিত ছিল। জীবদ্দশায় প্রায় এক হাজার ৮০০ এর মত কবিতা লিখলেও  ডজনখানেক কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। বেশিরভাগই প্রকাশকদের ইচ্ছে অনুযায়ী ছাপানোর আগে পরিমার্জন করা হয়। ফলে নষ্ট হয়ে যায়  কবির অনেক মৌলিক লেখা। 

কবি এমিলি খুব সহজ সরল এবং নির্জন জীবনযাপন করতেন । কম সময়ে লিখেছিলেন অধিক সংখ্যক  কবিতা যার বেশিরভাগই ছিল মানুষের আড়ালে। এমনকি  পরিবারের কেউই  এই কাব্যপ্রতিভার কথা তেমন জানতেন না।

 মৃত্যুর পর ১৮৯০ সালে প্রথম এমিলির ছোট বোন লাভিনিয়া, তাঁর কাব্যগ্রন্থের বিশাল পান্ডুলিপি আবিস্কার করেন এবং সেগুলো প্রকাশের  ব্যবস্থা করেন। যদিও তাঁর কবিতার  প্রথম বইটিতে অনেক পরিমার্জন করা হয়েছিল। কোনো রকমের পরিমার্জন ছাড়া এমিলির  প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে।  নাম ‘দ্য পয়েমস অব এমিলি ডিকেনসন’।  

কবি এমিলি নিজেকে গুটিয়ে নেন ১৭ বছর বয়সে । জানা যায়,  খুব কম বয়সে বেশ কয়েকজন কাছের  মানুষের মৃত্যু তাঁর মনকে নির্জনপ্রিয় করে তুলেছিল।   পরবর্তীতে তা  অসুস্থতায় পরিণত হয়। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই মহান কবি লেখালেখি করে গেছেন। এমন নির্জনতার মধ্যেই তিনি  ১৮৮৬ সালের ১৫ মে নির্জ নতার গহীনে চলে গেলেন দৈহিক মৃত্যুর মধ্যদিয়ে।   এই বিখ্যাত কবি চিরকুমারী ছিলেন।