আয়না২৪ ডেস্ক
নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছেন পাকিস্তানের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ। কিছুদিন ধরে বলাবলি হচ্ছিল, প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে নওয়াজ শরীফকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে শাহবাজই হতে পারেন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে গতকাল ভারতের মিডিয়াগুলো খবর প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, শাহবাজ শরীফ হচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী নতুন প্রধানমন্ত্রী।
ইন্ডিয়া টুডে, অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া বলেছে, দল থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে নওয়াজের ছোটভাই শাহবাজকে। তবে শাহবাজ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে তা নিয়ে শনিবার ইসলামাবাদে বৈঠক করবে ক্ষমতাসীন পিএমএল-এন। দায়িত্ব পাওয়ার পর অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী কমপক্ষে ৪৫ দিন দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে শাহবাজ শরীফকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য সুপারিশ করা হবে এবং তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে অনুমোদন পাবেন।
সে ক্ষেত্রে পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করবেন শাহবাজ শরীফ। সেখানে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন তার পুত্র হামজা শাহবাজ শরীফ। তবে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শাহবাজ শরীফের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে পাকিস্তানের গণমাধ্যমে কোনো খবর আসেনি। তবে, নওয়াজ শরীফও তার ভাই শাহবাজ শরীফকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে দলের সংসদীয় বৈঠকের সিদ্ধান্তের ওপর।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত: পানামা পেপার্স ফাঁস দুর্নীতি তদন্ত পাকিস্তানে নাটকীয় মোড় নিয়েছে। নওয়াজ শরীফের পদত্যাগের পর নানা প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে। সবথেকে বড় প্রশ্ন হলো, কে হবেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তিনজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে পাকিস্তানের দৈনিক ডন। লেখক ও সাংবাদিক জাহিদ হুসেইন বলেন, পরিস্থিতি এখন খুবই অনিশ্চিত। নওয়াজের দল পিএমএল-এন অন্য কোনো নেতা উপস্থাপন করতে পারবে বলেও মনে করেন না তিনি। বরং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ফের দলটি ভেঙেচুরে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। জাহিদ হুসেইন বলেন, ‘দলটি একজন ব্যক্তি বা একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। কাজেই, দলটির জন্য আরেকজন যোগ্য ব্যক্তি পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হবে যিনি কিনা দলকে একতাবদ্ধ রাখতে পারবেন এবং পরবর্তী নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। নওয়াজ শরীফ দলকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেছেন। দলকে চেষ্টা করেছেন আরো পপুলিস্ট বানাতে। কিন্তু এখনও তা ক্ষমতাবলয়ের দল হিসেবেই রয়ে গেছে।
অতীতে আমরা দেখেছি যে যখনই দলটি চাপের মুখে পড়েছে, তখনই তারা ভেঙে চুরে গেছে। আমার মনে হয় তেমনটা ফের ঘটতে পারে।’ নওয়াজ শরীফের পুরো পরিবার অভিযুক্ত হওয়াটা বড় ধরনের ধাক্কা উল্লেখ করে মি. হুসেইন বলেন, পরবর্তী নির্বাচনে দলটির সম্ভাবনা সংশয়ে ঘেরা। আর এতে করে পিটিআই বা অন্যান্য দল নির্বাচনে কেমন সুবিধা আদায় করে নিতে সক্ষম হবে সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সবথেকে বেশি সুবিধা পাবেন ইমরান খন। কিন্তু পাঞ্জাবে এখন রাজনীতি হয়ে উঠবে অনেক বেশি খণ্ড বিখণ্ড কেননা লড়াইয়ের ক্ষেত্রটা হলো পাঞ্জাবে। বাকি দেশ এ রায়ে ততটা প্রভাবিত হবে না। তবে পার্লামেন্ট অনেক বেশি বিভক্ত হয়ে পড়বে।’
আরেক বিশেষজ্ঞ ও করাচিভিত্তিক আইনজীবী সালাহউদ্দিন আহমেদ সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়ে বলেন, ‘সত্যি বলতে আমার কোনো ধারণা নেই, তবে গণমাধ্যমের রিপোর্টগুলো যদি বিশ্বাস করতে হয় সেক্ষেত্রে খাজা আসিফ বা শহিদ খাকান আব্বাসি’র হয়তো সম্ভাবনা রয়েছে।’ পরবর্তী নির্বাচনে পিএমএল-এন এর সম্ভাবনা একেবারে খারাপ দেখছেন না সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না এটা তাদের নির্বাচনী সম্ভাবনার জন্য ততটা ক্ষতিকর হবে।
যদিও এখনও সবকিছু শেষ হয়ে যায় নি। আমি বলতে চাচ্ছি, এখনও সম্ভবত রিভিউ ফাইল করতে পারবেন তারা, হয়তো এমনকি সাংবিধানিক সংশোধন। পরবর্তী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সময়টাতে অনেক কিছুই ঘটতে পারে।’ আদালতে অভিযুক্ত হওয়ার ফলে নওয়াজ শরীফের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটবে বলেও মনে করছেন না সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এর আগেও আদালতে অভিযুক্ত হয়েছেন নওয়াজ শরীফ। একই বিষয় ঘটেছে বেনজির ও জারদারির মতো পিপিপি নেতাদের ক্ষেত্রে। আর যেকোনোভাবেই হোক, অভিযুক্ত হওয়া আর অযোগ্য ঘোষিত হওয়া পাকিস্তানে কোনো ব্যাপারই নয় বলে দেখা গেছে।’ অতীতের রায়গুলো থেকে এ রায় ভিন্ন মনে করেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন অনেকগুলো বিষয় ঘটতে পারে। ধরুন আগামীকাল আরো কয়েকজন রাজনীতিক একই অভিযোগে অযোগ্য ঘোষিত হলেন।
সুপ্রিম কোর্টকে যদি এই আইন সমভাবে প্রয়োগ করতে হয় তাহলে আমি জানি না এমনকি ইমরান খানও কীভাবে রেহাই পাবেন। কাজেই যদি শেষমেশ বেশ কয়েকজনকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়, তাহলে হয়তো পার্লামেন্ট আর্টিকেল ৬২-৬৩ বাতিল করবে। আর তাতে করে রাজনীতিতে ফেরার পথ সৃষ্টি হবে।’
আদালতের রায়ে ইমরান খানের সম্ভাবনা কতটুকু জোরদার হবে সে প্রশ্নের জবাবে মি. সালাউদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে এ রায় কতটা গুরত্বপূর্ণ হবে সেটা আমি জানি না। কেননা, ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে ভোটারারা নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তেমনটা গায়ে মাখেন না। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রীকে উচ্ছেদ করতে সফল হয়েছেন- এর অর্থ এই নয় যে জনগণের মধ্যে তার নির্বাচনী সম্ভাবনা হঠাৎ করেই উন্নত হয়ে যাবে। হয়তো তিনি কিছুটা সুবিধা পাবেন। গুটি কয়েক লোক হয়তো পিএমএল-এন থেকে পিটিআই শিবিরে ভিড়বেন। এটা হয়তো তার সম্ভাবনা কিছুটা বাড়াবে। কিন্তু, সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এ রায় কতটা প্রভাব ফেলবে সেটা আমি জানি না।’
আরেক বিশেষজ্ঞ ও গবেষক তাহির মেহদি ধারণা করছেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন আয়াজ সাদিক। তবে তিনি মনে করেন, এ মুহূর্তে পিএমএল-এন এর জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি দল হিসেবে পদক্ষেপ নেয়া এবং এটা প্রতিষ্ঠা করা যে তারা বর্তমান চ্যালেঞ্জ উৎরে যেতে পারবে। তিনি বলেন, ‘দলটি সাধারণত একটি ব্যক্তিকে ঘিরে চলে আসছে। আমার মনে হয় সময় এসেছে পিএমএল-এন ওই সীমা পেরিয়ে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আচরণ করুক। আমি বেশ আত্মবিশ্বাসী যে তারা সেটা করতে সক্ষম হবে। ১৯৯৩ সালের পুনরাবৃত্তি হবে না, বা অতীতের অন্য কোনো সময়ের যেখানে নওয়াজ শরীফকে সরিয়ে নিলে তাসের ঘরের মতো ভেঙেচুরে পড়ে পুরো দল।’ পরবর্তী নির্বাচনে কি ঘটতে পারে সে প্রশ্নের জবাবে মি. তাহির বলেন, ‘আগামী কয়েক মাসের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। আমি মনে করি এটা পিএমএল-এন এর সম্ভাবনায় বড় আকারের কোনো প্রভাব ফেলবে না।’