আয়না ২৪ ডেস্ক
সিরিয়াসহ সাতটি মুসলিম দেশের শরণার্থীদের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্য ছয়টি দেশ হচ্ছে- ইরান, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন, সুদান ও সোমালিয়া। এসব দেশের শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি ‘বিপজ্জনক’ বিবেচনা করে এক নির্বাহী আদেশে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন তিনি। ট্রাম্পের বেশ কয়েকজন কংগ্রেশনাল সহযোগী ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ওই আদেশে স্বাক্ষর করবেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও ডেইলি মেইলের।
ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার নাগরিকসহ অন্যান্য মুসলিম দেশের অধিকাংশ শরণার্থীর আমেরিকায় প্রবেশ বন্ধ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী যারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে পালিয়ে আসছে তাদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। এসব নিষেধাজ্ঞা চার মাসের জন্য কিংবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বলবৎ থাকতে পারে।
মঙ্গলবার ট্রাম্প একটি টুইট করে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে আগামীকাল হবে একটি ‘বড়দিন’। ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ‘কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা’র আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত শরণার্থীরাও ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবেন। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওই আদেশের ফলে ১২০ দিনের জন্য সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের শরণার্থী প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাবে।
এছাড়া মুসলিমপ্রধান দেশগুলো থেকে সেখানে গমনেচ্ছুদের ইমিগ্রেন্ট এবং নন-ইমিগ্রেন্ট ভিসা ইস্যু ৩০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেনের কোনো নাগরিককে ভিসা দেয়া বন্ধ রাখার আরেকটি আদেশও দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সহযোগী ও বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প প্রথমে প্রস্তাব করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক, এ পদক্ষেপ আমেরিকানদের জিহাদি হামলা থেকে রক্ষা করবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
২০১৬ সালে ১০ হাজার সিরীয় শরণার্থী নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যাদের বেশিরভাগই সপরিবারে এবং সন্তানসহ। চলতি বছরের মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার শরণার্থী গ্রহণের পরিকল্পনা ছিল। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে শরণার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কিছু ঘোষণাও আসতে যাচ্ছে। এর মধ্যে অভিবাসীদের নিরাপদ শহর বলে পরিচিত নগর কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে বাধ্য করার উদ্যোগও রয়েছে।
ভোট জালিয়াতি তদন্তের ঘোষণা : যুক্তরাষ্ট্রের গত প্রসিডেন্ট নির্বাচনে কথিত ভোট জালিয়াতির বিষয়ে বড় ধরনের তদন্তের অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। নির্বাচনে লাখ লাখ অবৈধ ব্যালট ছিল বলে দাবি তার। ট্রাম্প বলেছেন, যারা দুই রাজ্যে ভোটার ছিলেন এবং তারা অবৈধ অভিবাসী অথচ ভোট দিয়েছেন; তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে। তিনি বলেন, যেসব মৃত ব্যক্তিকে ভোটার দেখানো হয়েছে সে বিষয়েও তদন্ত হবে। ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, হিলারির পক্ষে প্রায় ৫০ লাখ অবৈধ ভোট পড়েছে। তবে তিনি তার দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি।
গত নির্বাচনে ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে ভোট প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে গবেষণা সংস্থাগুলো বলছে, ২০০০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নয় এমন মাত্র ৫৬ জন ভোট দিয়েছেন। আর পিউ রিসার্চের ২০১২ সালের গবেষণা বলছে, অন্যত্র চলে যাওয়া কিংবা মৃত্যুর কারণে লাখ লাখ অবৈধ ভোট নিবন্ধিত হলেও ভোট জালিয়াতির কোনো প্রমাণ নেই।