আয়না২৪ ডেস্ক
ভারতের চতুর্দশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়ে গেল সোমবার। সবার আগে ভোট দেন প্রধানমন্ত্রী। তার পর বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। এদিনই শুরু হয় সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন। প্রথম দিনেই সৌজন্যের আবহ ফুটে উঠল সংসদে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গিয়ে সৌজন্য বিনিময় করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, এইচ ডি দেবগৌড়া, মুলায়ম সিং যাদব–সহ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে।
সকালে সংসদ ভবনে ঢোকার আগে সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবার বাদল (বর্ষা) অধিবেশন দেশের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অধিবেশনেই দেশ নতুন রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি পাবে।’ সেই সঙ্গে আরও একবার জিএসটি–র সাফল্য তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের মিলিত পদক্ষেপেই সফল জিএসটি। এটি হল গ্রোয়িং স্ট্রংগার টুগেদার।’
রামনাথ কোবিন্দকে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে রেখেছেন মোদি। ভোট দেওয়ার পর অধিবেশন শুরু হওয়ার খানিক আগেই লোকসভায় আসেন মোদি। তখনও আসেননি স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। প্রথমে বিরোধী বেঞ্চের দিকে এগিয়ে যান মোদি। হাতজোড় করে নমস্কার জানান সোনিয়াকে। পাল্টা নমস্কার করেন সোনিয়া।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, সমাজবাদী পার্টি নেতা মুলায়ম সিং যাদব, কংগ্রেসের দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং লোকসভার উপাধ্যক্ষ এম থাম্বিদুরাইয়ের সঙ্গে করমর্দন করেন তিনি। এর পর কিছুক্ষণ খাড়গে এবং মুলায়মের সঙ্গে কথা বলেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকেও শুভেচ্ছা জানান মোদি। তার আগে সভাকক্ষে ঢুকেই হাতজোড় করে সমস্ত সদস্যকে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। লোক জনশক্তি পার্টির সদস্য রামচন্দ্র পাসোয়ানকে মোদির পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে দেখা যায়। এত সবের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ না আসন গ্রহণ করলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন বিজেপি সাংসদরা। এই অধিবেশনে গোরক্ষা বিতর্ক, দেশ জুড়ে কৃষকমৃত্যু, চীন ও পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা, সরকারের বিদেশ নীতি, পণ্য ও পরিষেবা কর চালু, নোট বাতিল এবং পশ্চিমবঙ্গে দার্জিলিঙের পরিস্থিতির মতো বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারকে চেপে ধরতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিরোধীরা।
বৃহস্পতিবার জানা যাবে রাইসিনা হিলসের পরবর্তী বাসিন্দা কে হবেন। এনডিএ প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দের জয় নিশ্চিত ধরে নেওয়া হচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সংসদ ভবনসহ গোটা দেশে মোট ৩২টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র খুলেছিল নির্বাচন কমিশন।
কলকাতায় ভোট দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ তৃণমূলের সাংসদ, বিধায়করা। তৃণমূলের ৩ সাংসদ এদিন সংসদ ভবনে ভোট দেন। এঁরা হলেন সুগত বসু, অভিনেতা দেব এবং রাজ্যসভার সাংসদ কে ডি সিং। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে রয়েছেন মোট ৭৭৬ জন সাংসদ এবং ৪,১২০ জন বিধায়ক।
ইলেক্টোরাল কলেজে ভোটের সংখ্যা ১০,৯৮,৯০৩টি। এনডিএ প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই বিরোধী শিবিরের প্রার্থী মীরা কুমারের। হিসেব অনুযায়ী, মোট ৬৩ শতাংশ ভোট রয়েছে কোবিন্দের দখলে। যদিও এই নির্বাচনকে ‘আদর্শের লড়াই’ বলেছেন মীরা কুমার। এদিকে, কোবিন্দই জিতবেন বলে আক্ষেপ করেছেন লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চ্যাটার্জি। আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানালেন, ‘কোবিন্দ নির্ণায়ক ভোট পেয়ে গেছেন। সর্বসম্মত প্রার্থী হলে ভাল হত। তবে এটা কোনও বড় ব্যাপার নয়।’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ঊমা ভারতী বলেছেন, ‘ব্যবধান কত হয় সেটাই এখন দেখার।’ আর মায়াবতী বলেছেন, যিনিই জিতুন, তিনি খুশি হবেন। কারণ একজন দলিত রাষ্ট্রপতি হবেন।