• Home  / 
  • বিশ্ব  / 

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফরকে যেভাবে দেখছে সৌদিরা

Spread the love

আয়না২৪ ডেস্ক

সৌদি আরবের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর নিয়ে যখন নানা ধরনের বক্তব্য ও বিবৃতি দিচ্ছেন তখন আরবের বহু মানুষ টুইটারে এসব নিয়ে তাদের অবিশ্বাসের কথাও প্রকাশ করছেন। টুইট করে তারা জানাচ্ছেন বহুল আলোচিত এই সফর নিয়ে তাদের সন্দেহের কথাও। খবর বিবিসির।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন সৌদি আরব সফর করছেন। সাথে আছে তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং কন্যা ইভাঙ্কা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণার সময় মুসলিম-বিরোধী বক্তব্য, পরে বহু দেশের মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি- এতো কিছুর পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম একটি দেশে সফরের কারণে এ নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা হচ্ছে। মানুষের মনে তৈরি হয়েছে ব্যাপক কৌতূহল।

রাজধানী রিয়াদে আজ রোববার তিনি আরব ইসলামিক অ্যামেরিকান এক সম্মেলনে ভাষণ দেবেন। বলা হচ্ছে, মি. ট্রাম্প এসময় ইসলাম ধর্ম সম্পর্কেও কথা বলবেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সফর নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় প্রচুর কথাবার্তা হচ্ছে। শনিবার কোন এক পর্যায়ে টুইটারে সবচে বেশি আলোচিত ছিলো ‘ট্রাম্পের কন্যা’ এর আরবি শব্দ এবং এই বিষয়টি।

অনেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে ব্যঙ্গও করছেন, ইসলাম সম্পর্কে তার করা কটূক্তির প্রসঙ্গ টেনে পোস্ট করছেন মি. ট্রাম্পের ব্যঙ্গচিত্র।

সৌদি আরবের ধর্মীয় নেতা সাদ বিন ঘনিম গত এ মাসেই যে পোস্টটি করেছিলেন বহু লোক সেটির স্ক্রিন শট এখন আবার পোস্ট করেছেন। ওই পোস্টটি ডিলিট করে দেওয়া হয়েছিলো।

সৌদি নেতাদের সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কন্যাসৌদি নেতাদের সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কন্যা

সেখানে বলা হয়েছে: “ওহ আল্লাহ, ট্রাম্প হচ্ছে তোমার বান্দাদের একজন। তার ভাগ্য তোমার হাতে। তাকে আদেশ দিন যাতে, তিনি চান আর না চান, মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করেন এবং তাদের ওপর নিপীড়ন যাতে বন্ধ হয় সেজন্যে যাতে তিনি কাজ করেন। তার শয়তানের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন এবং তাকে আপনার পথে পরিচালিত করুন।”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা একটি ছবিও সোশাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। কম্পিউটারে তৈরি করা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি।

এসব ছবির সাথে যেসব শিরোনাম দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে – ‘সৌদি ধর্মীয় নেতাদের ফতোয়া: ট্রাম্প হচ্ছেন আল্লাহর একজন দূত।”

আরেকটি কার্টুনও সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে, বিশেষ করে টুইটারে, যেখানে ইয়েমেন যুদ্ধের জন্যে মি. ট্রাম্প এবং সৌদি নেতাদের দায়ী করা হচ্ছে।

কার্টুনটিতে দেখা যাচ্ছে, মি. ট্রাম্প যখন বিমান থেকে নেমে আসছেন তখন সৌদি বাদশাহ তার পুত্র এবং ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে সাথে নিয়ে তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

লাল গালিচার একপাশে পড়ে আছে ইয়েমেনিদের মৃতদেহ। আর অন্য পাশে মাথা নত করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। সৌদি রাজ পরিবারের সদস্যদের পেছনে বোরকা পরিহিত একজন নারী হাঁটু মুড়ে বসে আছেন এবং তার পেছনে তলোয়ার হাতে দাঁড়িয়ে আছেন এক ব্যক্তি । দেখে মনে হয় যে এখনই হয়তো তার শিরশ্ছেদ করা হবে।

এই কার্টুনের নিচে অনেকে মন্তব্য করেছেন। একজন লিখেছেন, সাতটি আরব দেশের মুসলমানদেরকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর সৌদি আরবের বাদশাহ তাকে স্বাগত জানাতে ১৭টি মুসলিম দেশের নেতাদের জড়ো করেছেন।”

ইয়েমেনে যুদ্ধের জন্যে সৌদি আরবকে দায়ী করে কার্টুনইয়েমেনে যুদ্ধের জন্যে সৌদি আরবকে দায়ী করে কার্টুন

এই সফরকে কেন্দ্র করে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাবজ্জীবন কারা দণ্ডপ্রাপ্ত সৌদি ছাত্র খালেদ আল-দাওসারির কথাও তুলে ধরছেন। মার্কিন স্থাপনায় হামলার চেষ্টা করার অভিযোগে তাকে এই সাজা দেওয়া হয়।

তার মুক্তির জন্যে প্রচারণা চালাচ্ছে এমন একটি অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করা একটি ছবিতে দেখা যায় মি. ট্রাম্প এবং সৌদি বাদশাহ সালমান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন। তার নিচে ক্যাপশন দেয়া হয়েছে: “ওহ জাতি, তোমাদের একজন ছেলে আরেক দেশের কারাগারে মরছে। এখনই তার মুক্তি চাওয়ার সময়।”

আবার অনেকেই বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সফর সৌদি আরবের জন্যে গর্ব করার মতো এক ঘটনা।

আরেকজন লিখেছেন, “সারা পৃথিবীর চোখ এখন রিয়াদের দিকে। সবাই তাকিয়ে আছেন এই সম্মেলনের সাফল্যের দিকে।”

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই বিশ্বাস নয়, শুভ বনাম অশুভর লড়াই: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই কোনো ধর্মীয় বিশ্বাসের লড়াই নয় বরং এটি শুভ বনাম অশুভর লড়াই। রবিবার দেয়া ভাষণে তিনি আরব দেশগুলোকে বলেন, ইসলামি উগ্রবাদ মোকাবেলায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে আপনাদের।
 
নিজের প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প যেখানে আরব ইসলামিক আমেরিকান (এআইএ) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদের আমন্ত্রণে এই সম্মেলনে যোগ দিতে চারদিনের সরকারি সফরে শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রিয়াদ গেছেন।
 
 
নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে মুসলিম নিষেধাজ্ঞার প্রতিশ্রুতি ও ৭টি মুসলিম দেশের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশ দেয়ার কারণে মুসলিম বিশ্বে নেতিবাচক বিতর্কিত চরিত্র হিসেবেই পরিচিত ট্রাম্প। কিন্তু সৌদি রাজধানী রিয়াদে দেয়া ভাষণে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে বিশ্বাসের লড়াই বলে অভিহিত করেননি ট্রাম্প। তিনি বলেন, এটা হচ্ছে বর্বর অপরাধী যারা মানুষকে হত্যা করতে প্ররোচিত ও সব ধর্মের সুশীল মানুষ যারা এটি রক্ষা করতে উদ্বুদ্ধ তাদের যুদ্ধ। এর অর্থ হচ্ছে ইসলামি উগ্রবাদী সমস্যা এবং এটি যে ইসলামি উগ্রবাদী গোষ্ঠীদের অনুপ্রাণিত করে তাদের মুখোমুখি হওয়া। অর্থাৎ নিরীহ মুসলিমদের হত্যা, নারী নির্যাতন, ইহুদিদের নির্যাতন এবং খ্রিস্টানদের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করা।
 
‘আমেরিকা ফার্স্ট’ পলিসিতে নির্বাচন জেতা ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করবে তবে মধ্যপ্রাচ্যর লড়াইয়ে জোরালো অংশগ্রহণ থাকতে হবে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, কিন্তু শান্তির পথে যাত্রা এই প্রাচীন পবিত্র ভূমি থেকে শুরু হবে। 
 
ট্রাম্প বলেন, আমরা আপনাদের বলতে আসিনি কিভাবে আপনাদের জীবনচর্যা পরিচালনা করবেন, কি করবেন, অথবা কিভাবে প্রার্থনা করবেন। কিন্তু আমরা এই অশুভ শক্তিকে একমাত্র তখনই পরাজিত করতে পারবো যখন শুভ শক্তি একতাবদ্ধ ও শক্তিশালী। এবং এই ঘরে উপস্থিত সবাই লড়াইয়ের প্রযোজ্য ভাগটা বুঝে নেন। মধ্যপ্রাচ্য অবশ্যই এটা ভেবে বসে থাকতে পারে না যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের শত্রুকে ধ্বংস করবে। রয়টার্স ও এনবিসি।