আয়না ২৪ ডেস্ক
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জারি করা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ইসলামিক স্টেটের মতো চরমপন্থী গ্রুপের সন্ত্রাসী হামলার হাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে কতোটা রক্ষা সম্ভব তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। মি. ট্রাম্প নিজে বলেছেন, ইসলামপন্থী জঙ্গিদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে রাখতেই নির্বাহী আদেশে বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের লোকজনের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সপ্তাহে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তাতে ঠিক কতোজন মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে সেটা বিজ্ঞানসম্মতভাবে মেপে দেখার কোন উপায় নেই।
আবার এতে ক্রুদ্ধ হয়ে তাদের মধ্যে ঠিক কতোজন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানোর কথা ভাবছেন সেটাও জানারও বৈজ্ঞানিক কোন উপায় নেই।
হয়তো অনেকেই এরকম ভাবছেন, আবার হয়তো কেউই এরকম কিছু ভাবছেন না।
প্রেসিডেন্টের এই আদেশের ফলে ঠিক কতোজন সম্ভাব্য সন্ত্রাসীকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে রাখা সম্ভব হলো সেটাও বিজ্ঞানসম্মতভাবে জানা সম্ভব নয়।
তবে একটা বিষয় পরিষ্কার: ইসলামিক স্টেটের মতো জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ‘মন ও হৃদয় জয়’ করার মাধ্যমে যে আদর্শিক যুদ্ধ পরিচালনার কথা বলা হচ্ছিলো এর মধ্য দিয়ে সেটা আরো একটু দূরে সরে গেলো।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ইতিহাসে লেখা থাকবে চরমপন্থী ও তাদের সমর্থকদের জন্যে বড় ধরনের একটি উপহার হিসেবে।”
যে সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে এই ইরান। প্রতিবেশী ইরাকে ইসলামিক স্টেটকে দমন করতে ইরান তাদেরকে সহযোগিতা করছে।
মি. জারিফ আরো বলেছেন, “এর ফলে আরো সন্ত্রাসীর জন্ম হওয়ার পরিবেশ তৈরি হলো।”
জনসংখ্যার হিসেবে সবচে বড়ো মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আদেশের নিন্দা করেছেন।
“কারণ আমরা বিশ্বাস করি এর ফলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের লড়াই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদকে একটি বিশেষ ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত করে দেখা ভ্রান্ত ধারণা,” বলেন তিনি।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ব্রিটেনও এই আদেশের সমালোচনা করেছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন টুইট করে তার ব্যক্তিগত মতামত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এই আদেশ বিভেদ সৃষ্টিকারী, বৈষম্যমূলক এবং ভুল।”
ইসলামিক স্টেটের মতো চরমপন্থী গ্রুপকে দমন করতে ইরান ও ইরাকের মতো যেসব দেশের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন, তার ওপরেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
খোদ ইরাকও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। মজার ব্যাপার হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এই দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর জন্যে সন্ত্রাস দমনে বড়ো ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আদেশের জবাব দিতে এই ইরাকও খুব বেশি দেরি করেনি। তারাও একইভাবে মার্কিন পর্যটকদের ওপর একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে এর প্রতিশোধ নিয়েছে।
এদিকে মানুষের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে মার্কিন সরকার মুসলিমবিরোধী। মধ্যপ্রাচ্যের লোকজনের মধ্যে এই ধারণাটা খুব তীব্র। এর ফলে ইসলামিক স্টেট এবং অন্যান্য চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াইটাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্রেসিডেন্টে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ফলে যে হৈচৈ আর বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে তার পেছনে রয়েছে খুব সহজ একটা সত্য। সেটা হলো কয়েকজন মানুষের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্যে সব মুসলিমকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করা যায় না।
আল কায়েদা, ইসলামিক স্টেট এবং আল-শাবাবের মতো গ্রুপ এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের চরমপন্থীরাই ধর্মের নামে সহিংস জিহাদ পরিচালনা করছে।
বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই চরমপন্থীরা চেষ্টা করছে মুসলমানদেরকে অমুসলিমদের কাছে থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে।
তারা নিজেদের মতো করে রাষ্ট্র গঠনের কথাও বলছে। চেষ্টা করছে এমন এক সময়ে ফিরে যেতে যখন সারা দুনিয়া দার আল-ইসলাম এবং দার আল-হার্বে বিভক্ত ছিলো।
দার আল-ইসলাম হচ্ছে এমন এক বিশ্ব যেখানে শরিয়া আইন অনুসারে মুসলিম নেতারা শাসন করেছে আর দার আল-হার্ব হচ্ছে মুসলমানের বাইরে বাকি বিশ্ব।
বিশ্বের জনগণকে এই ভাবে বিভক্ত করে ফেলার যেকোন ধরনের চেষ্টাকে চরমপন্থীরা সবসময়ই সমর্থন ও স্বাগত জানিয়েছে।
শরণার্থীরা যখন সিরিয়া থেকে বেরিয়ে ইসলামিক খেলাফত রাক্কার দিকে না গিয়ে ইউরোপের দিকে ছুটে গেছে, আইএসর নেতারা তখন ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তারা এটিকে দেখেছেন প্রতারণা হিসেবে।
অনেকেই বলছেন, অভিবাসনের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশকে এখন তারাও ব্যবহার করতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে যখন ইসলামিক স্টেটের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকা ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে তখন চরমপন্থী এই গ্রুপটি মি. ট্রাম্পের এই আদেশকে ব্যবহার করে নতুন নতুন জিহাদি যোদ্ধা সংগ্রহের চেষ্টা করবে।
আইএস নেতারা তাদের যোদ্ধাদের প্রতি আহবান জানাতে পারে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের ওপর আক্রমণ চালাতে।
কে জানে, এদের অনেকেই হয়তো এখন খোদ যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই বসবাস করছে।