আয়না ২৪ ডেস্ক
ভারতীয় নৌসেনার গতিবিধি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ আর গোপন রাখতে পারল না পাকিস্তান। গোটা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নয়াদিল্লি তাদের সমরসজ্জা যে ভাবে বাড়াচ্ছে, তা আসলে ‘সম্প্রসারণবাদ’। মন্তব্য পাক প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা সরতাজ আজিজের। ভারতের সামুদ্রিক রণকৌশল পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে শুধু পাকিস্তানের উদ্বেগের কথা বলে সরতাজ থেমে থাকেননি। ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা নীতি এতই আগ্রাসী যে তা গোটা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পক্ষেই বিপজ্জনক, বলেছেন সরতাজ।
পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি উদ্বেগে রয়েছে স্যর ক্রিক খাঁড়িতে ভারতের সমরসজ্জা নিয়ে। সরতাজ আজিজের মন্তব্য থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভারতের গুজরাত এবং পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের মধ্যে সীমানা রচনা করেছে এই স্যর ক্রিক খাঁড়ি। কিন্তু এই খাঁড়ি নিয়েও বিতর্ক বিস্তর। পাকিস্তান দাবি করে, স্যর ক্রিকের পুরো জলভাগই তাদের। ওই জলভাগের ভারতীয় প্রান্তে যে পাড়, সেই পাড় পর্যন্তই ভারতের এলাকা বলে পাকিস্তানের দাবি। কিন্তু ভারত সে দাবি মানে না। স্যর ক্রিক খাঁড়ির জলভাগের অর্ধেকেরও বেশিটাই ভারতের বলে নয়াদিল্লি মনে করে।
স্যর ক্রিকের দখল নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বিতর্ক রয়েছে বলেই কচ্ছের রনের দুর্গম এবং জনমানবহীন প্রান্তে অবস্থিত স্যর ক্রিক খাঁড়িতে ভারত ভারী সমরসজ্জা প্রস্তুত রেখেছে। আগেও স্যর ক্রিকে ভারতের কড়া নজরদারি ছিল। কিন্তু ভারত-পাক সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধির পর স্বাভাবিক ভাবেই নজরদারি বেড়েছে। গুজরাত সীমান্তের এই খাঁড়িতে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর বিপুল উপস্থিতির আর একটি কারণ হল চিন। স্যর ক্রিক মিশেছে আরব সাগরে। আর সেই সাগরে চিনা সাবমেরিন তথা চিনা নৌসেনার আনাগোনা এখন খুব বেশি। পাকিস্তানের মদতেই আরব সাগরে দাপট বাড়ানোর চেষ্টা করছে চিন। সে কথা মাথায় রেখেই রণকৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্যর ক্রিক খাঁড়ির নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করে তোলার উপর ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জোর দিয়েছে। ভারতের এই সমরসজ্জা যে পাকিস্তানের একেবারেই পছন্দ হচ্ছে না,
তা সরতাজ আজিজের কথায় স্পষ্ট। তাঁর মন্তব্য, স্যর ক্রিক খাঁড়ির অবস্থা এখন যে রকম, তাতে গোটা ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তা ব্যহত হতে পারে।
ভারতীয় নৌসেনার ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তায় বাধা পাচ্ছে চিনের একাধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা।
আরব সাগরের বুকে সম্প্রতি একটি পাঁচ দিনের আন্তর্জাতিক নৌ-মহড়া আয়োজন করেছিল পাকিস্তান। সেই মহড়ার অঙ্গ হিসেবেই ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে একটি আলোচনা সভা হয়। সরতাজ আজিজ সেখানে ভাষণ দিতে গিয়েই ভারতীয় নৌসেনার বিরুদ্ধে ‘আগ্রাসনের’ অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘স্যর ক্রিকের অচিহ্নিত সীমান্ত (পাকিস্তানের) জলসীমার নিরাপত্তার উপর ছাপ ফেলতে পারে।’’ এই প্রসঙ্গেই সরতাজ ভারতের সমরসজ্জা তথা ভারতীয় নৌসেনার সক্রিয়তাকে ‘সম্প্রসারণবাদী’ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের জলসীমা নিরাপত্তা নীতি যে ভাবে সম্প্রসারণবাদী হয়ে উঠছে, তা গোটা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তির পক্ষে উদ্বেগজনক।’’
চিনা নৌসেনা গত কয়েক বছর ধরে আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরে নিজেদের উপস্থিতি এবং যাতায়াত বাড়িয়েছে। গোটা ভারত মহাসাগরে নিজেদের উপস্থিতি বাড়ানো এবং এই অঞ্চলে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করাই চিনের লক্ষ্য। কিন্তু ভারতের মতো বৃহৎ শক্তির উপস্থিতি চিনের সেই লক্ষ্য পূরণের পথে খুব বড় বাধা। গোটা এলাকায় চিনের একাধিপত্য ভারত যে মেনে নেবে না, তা বলাই বাহুল্য। চিনের মোকাবিলার জন্য ভারতীয় নৌসেনা পাল্লা দিয়ে নিজেদের সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে। শুধু আরব সাগর, বঙ্গোপসাগরে নয়, দক্ষিণ চিন সাগরে ঢুকেও চিনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে শুরু করেছে ভারতীয় নৌসেনার রণতরীগুলি। নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন নামিয়ে এবং সমুদ্রের গভীর থেকে পরমাণু হামলা চালানোর পরিকাঠামো গড়ে তুলে ভারতীয় নৌসেনা চিনকে পাল্টা চাপে ফেলে দিয়েছে। এতেই উদ্বেগ বেড়েছে চিনের সর্বক্ষণের মিত্র পাকিস্তানের। সরতাজ আজিজ বলেছেন, ‘‘ভারত মহাসাগরের পারমাণবিকীকরণ এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে আরও নষ্ট করেছে।’’ আজিজের এই মন্তব্য যে ভারতকে দোষারোপের জন্যই, সে নিয়ে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের সংশয় নেই।