আয়না২৪ ডেস্ক
অব্যাহত পরমাণু হামলার হুমকি ও একের পর এক মিসাইল উৎক্ষেপণ করে দক্ষিণ কোরিয়া ও আমেরিকাকে প্রায়ই নাজেহাল করছেন উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রনেতা কিম জং উন। কিমের এসব একঘেয়ে কার্যকলাপে দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি উদ্বিগ্ন জাপানও। এমন পরিস্থিতে এক চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে দক্ষিণ কোরিয়া।
দেশটির সামরিক কর্মকর্তাদের দাবি, উত্তর কোরিয়া অস্ত্র ভাণ্ডার ধ্বংস করতে তাদের পরমাণু মিসাইল কিংবা সেনা অভিযানের প্রয়োজন হবে না। শুধুমাত্র একটি ‘ব্ল্যাকআউট’ বোমার আঘাতেই কিমের অস্ত্র ভাণ্ডার ধ্বংস করে দিতে সক্ষম তারা।
দক্ষিণ কোরিয়ার এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্জাতা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে বোমাটি বানিয়ে ফেলা হয়েছে। কিম আক্রমণ করার চেষ্টা করলেই তা ব্যবহার করা হবে। তিনি জানান, ওই বোমার বিস্ফোরণে বিকল হয়ে যাবে সমস্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি। এর আঘাতে অন্ধকারে ডুবে যাবে কিমের দেশ। বিকল হয়ে যাবে পারমাণবিক মিসাইল ছোড়ার সমস্ত কম্পিউটার। ফলে কোনোভাবেই হামলা চালাতে পারবে না কিমের সেনারা। লড়াইয়ের আগেই হার স্বীকার করতে হবে তাদের।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, বোমাটির বিস্ফোরণ হলে তা থেকে তৈরি হবে এক ধরনের গ্যাস। ওই গ্যাসে থাকা অন্যান্য পদার্থের সঙ্গে থাকবে গ্রাফাইট, যা বিদ্যুতের তারে বা যন্ত্রপাতিতে শর্ট সার্কিট ঘটিয়ে তা বিকল করে দেবে। তবে কোনও মানুষের মৃত্যু ঘটাবে না ওই গ্যাস। ফলে জনবহুল এলাকাতেও ব্যাবহার করা যাবে এই বোমা।
আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ক্রমশ যুদ্ধের পথে হাঁটছে উত্তর কোরিয়া। এরইমধ্যে মার্কিন ভূখণ্ডে পরমাণু হামলার হুমকিও দিয়েছেন কিম। শুধু তাই নয় জাপানের ওপর দিয়ে একাধিক মিসাইল ছুড়ে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলেছে দেশটি। একইসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দমনপীড়নের অভিযোগ তুলে তাঁকে গুন্ডা বা গ্যাংস্টার বলেও তীব্র আক্রমণ করেছেন কিম।
আমেরিকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়াও এখন পিয়ং ইয়ংয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ কিমের।
আমেরিকা-দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ৬৪ বছরের পুরনো দ্বিপাক্ষিক সামরিক চুক্তির সমালোচনা করে উত্তর কোরিয়ার কিম বলেছেন, ১৯৫৩-তে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তি আসলে সংঘর্ষের পরোয়ানা। ওই চুক্তি মোতাবেক আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়া যৌথভাবে সেনা মহড়া চালাতে পারবে। সিওলে সেনাঘাঁটি তৈরি করতে পারবে পেন্টাগন। ওই চুক্তি মোতাবেকই এই মুহূর্তে দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূলের খুব কাছেই টহল দিচ্ছে মার্কিন রণতরী ইউএসএস রোনাল্ড রেগান। অন্তত ৮০টি যুদ্ধবিমান নিয়ে টহল দিচ্ছে এই বিশাল রণতরী।
মার্কিন বিমান ধ্বংসের হুমকি উত্তর কোরিয়ার
এদিকে আমেরিকার সামরিক বিমানগুলোকে ধ্বংসের হুমকি দিয়েছেন কিম জং উন প্রশাসন। সোমবার সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ইয়ং হো এক বিবৃতিতে একথা জানিয়েছেন। টুইটারে ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তাই এবার উত্তর কোরিয়ার আকাশসীমার মধ্যে না থাকলেও ধ্বংস করা হবে আমেরিকার যুদ্ধবিমানগুলো। এভাবেই ওয়াশিংটনকে হুমকি দিয়েছেন রি ইয়ং।
সম্প্রতি নিজের টুইটারে একটি টুইট করেন ট্রাম্প। যেখানে তিনি লিখেন, এভাবে হুমকি দিতে থাকলে উত্তর কোরিয়ার এই প্রশাসন বেশিদিন থাকবে না। আর এটাকেই যুদ্ধের হুঁশিয়ারি মনে করে গণমাধ্যমে কাছে বিবৃতি দিলেন রি। তিনি বলেন, ‘গোটা বিশ্বের জানা উচিত আমেরিকায় প্রথমে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। যেহেতু আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা তাঁরা করেই ফেলেছে, আর তাই পালটা জবাব দেওয়ার অধিকার আমাদের রয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের আকাশসীমায় না থাকলেও মার্কিন বোমারু বিমানগুলোকে ধ্বংস করার অধিকার আমাদের রয়েছে।’ পাশাপাশি রি এও বলেন, ভবিষ্যতেই জানা যাবে কোন প্রশাসন থাকবে আর কে থাকবে না।
তবে মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ওয়াশিংটন কখনই পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। পাশাপাশি কিম প্রশাসনের এমন দাবিকে ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেন তিনি। সেই সঙ্গে বোমারু বিমান ধ্বংসের প্রসঙ্গে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক জলসীমার মধ্যে অন্যদেশের বিমানকে ধ্বংস করাটা কখনই যুক্তিযুক্ত নয়।’
প্রসঙ্গত, ১৯৬৯ সালে নিক্সন প্রশাসনের আমলে কোনো মার্কিন বিমান গুলি করে নামিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। মেরে ফেলাহয়েছিল গুপ্তচর বিমানের ৩১ জন সদস্যকে।