আয়না২৪ ডেস্ক
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ায় আকস্মিক হামলা চালাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে । এরইমধ্যে তিনি তাঁর সামরিক উপদেষ্টাদের হামলার পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশও দিয়েছেন। জানা গেছে, হামলার জন্য সমন্বিত বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলার কাজ চলছে। প্রথমে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালানো হতে পারে।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স উত্তর কোরিয়াকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্য্যের কিংবা আমাদের সামরিক বাহিনীর শক্তির পরীক্ষা করবেন না। অন্যদিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রীও আর কোনো উস্কানিমূলক পদক্ষেপ না নিতে উত্তর কোরিয়ার প্রতি আহবান জানিয়েছেন। এছাড়া উত্তর কোরিয়া চীনের সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীন উত্তর কোরিয়া সীমান্তে সেনাবাহিনী এবং চিকিত্সা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে।
আকস্মিক হামলা
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা নস্যাত করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় তার একটি পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের অন্যতম উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচ আর ম্যাকমাস্টার নিশ্চিত করেছেন, কমান্ডার ইন চীফ হিসেবে প্রেসিডেন্ট কোরিয় উপত্যকায় স্ট্রাইক গ্রুপ পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এরমধ্যে কয়েকটি বিকল্পের মধ্যে একটি হতে পারে সমন্বিত বিশেষ বাহিনীর উত্তর কোরিয়ায় ক্ষেপনাস্ত্র হামলা। উত্তর কোরিয়াকে হুঁশিয়ার করতেই সিরিয়া এবং আফগানিস্তানে হঠাত্ হামলার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আমেরিকার ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হতে পারে উত্তর কোরিয়ার রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে টানেল তৈরি। ফলে যুদ্ধের পরিকল্পনা গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রকে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবে কিভাবে উত্তর কোরিয় নেতা কিম জং উনকে মোকাবেলা করা যায় এবং কোথায় হামলা করা যায় তার একটি মানচিত্রও তৈরির কাজ চলছে। ম্যাকমাস্টার ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবেলায় আমাদেরকে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট। ম্যাকমাস্টার জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং গোয়েন্দা দপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে যে কোনো পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকতে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। রবিবার উত্তর কোরিয়া ক্ষেপনাস্ত্র ছোড়ার কয়েক ঘন্টা পরই ম্যাকমাস্টার কড়া বিবৃতি দেন। তিনি বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট আকস্মিক হামলা করতেই পছন্দ করেন। ফলে উত্তর কোরিয়ায় যে কোনো সময় সামরিক অভিযানে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এই অঞ্চলের মিত্রদের সঙ্গেও আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। কূটনৈতিক, অথনৈতিক এবং অন্যান্য উপায়ে কিমকে পরমাণু অস্ত্রের প্রকল্প থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ম্যাকমাস্টার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আশা করে কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার উস্কানি দেবেন না কিম। দক্ষিণ কোরিয়া দাবি করেছে, উত্তর কোরিয়া ষষ্ঠবারের মতো পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে। আর এই ধরনের পরীক্ষার পরই দেশটিতে সামরিক আঘাত আসতে পারে। তবে কিম মার্কিন হুঁশিয়ারি প্রত্যাখান করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বেশি উস্কানি দিলে পরমাণু হামলা চালানো হবে। শনিবার প্রতিষ্ঠাতা নেতা কিম সাং ইলের ১০৫তম জন্মবার্ষিকীতে সামরিক সরঞ্জামের বড় ধরনের প্রদর্শনী চালিয়েছেন কিম। ওই প্রদর্শনীতে নতুন দুটি আন্ত:মহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্রও প্রদর্শন করেছেন।
জানা গেছে, উত্তর কোরিয়ার প্রতিবেশি হিসেবে চীনকে দায়িত্ব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়া নিয়ে আলোচনা করেছেন। উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদার করবে বলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছিলেন। তবে ট্রাম্প চলতি সপ্তাহে টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, চীন এখন পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে সহযোগিতা করছে।
আগাম সফরে ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স
আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া সফরে আছেন। তিনি সিউলে উত্তর কোরিয়াকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্য্যের কিংবা এর সামরিক বাহিনীর শক্তির পরীক্ষা নেবেন না। তাহলে ফল ভাল হবে না। সমপ্রতি সিরিয়া এবং আফগানিস্তানে কিন্তু এর কিছুটা পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো হামলা কিংবা পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত হুমকি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। আর উত্তর কোরিয়া নিয়ে সব ধরনের বিকল্প প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কৌশলগত ধৈর্য্যের যুগ শেষ হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন উত্তর কোরিয়ার প্রধান মিত্র চীনের ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আশা করেন, চীন ইতিবাচক কিছু একটা করবে। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চীনের বাণিজ্য নীতিরও সমালোচনা করেন। মাইক পেন্স দুই কোরিয়ার সীমান্তবর্তী অসামরিকীকরণকৃত এলাকা পানমুনজাম পরিদর্শন করেছেন। গতকাল দক্ষিণ কোরিয়া সফরে গিয়ে তিনি ওই এলাকা পরিদর্শনে যান। পেন্সের এই সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের পাশেই আছে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
ডেইলি মিরর, সিএনএন ও রয়টার্স-অবলম্বেনে