আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
বরগুনার তালতলী উপজেলায় ‘সিডরম্যান’ খ্যাত বড় বগী ইউনিয়নের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ইউনিট প্রধান জয়দেব দত্তের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন ও আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবিতে সোমবার এলাকাবাসী মানববন্ধন করেন।
সোমবার সকাল ১১ টায় তালতলী সদর রোডে স্থানীয় নাগরিকদের আয়োজনে জয়দেব দত্তের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়, হিন্দু-বৌদ্ধ -খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ী সমিতি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিপুল সংখ্যক লোক মুখে কাল কাপড় বেঁধে অংশ নেয়।
এসময় সমাবেশে বক্তরা বলেন, ‘সিডরম্যান’ খ্যাত জয়দেব কুমার দত্ত ছিলেন একজন সচেতন ও পরোপকারী মানুষ। তিনি ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় নিজের জীবনবাজী রেখে তালতলী উপকূলের হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন, এমন একজন ব্যক্তি কেন আত্মহত্যা করতে পারেন না। তাঁকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। এজন্য এই মৃত্যুর সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এবং প্ররোচণাকারী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হোক। বক্তারা বলেন, জয়দেব দত্তের মৃতদেহের কাছ থেকে নিজের হাতে লেখা একটি চিরকুট উদ্ধার করা হযেছে। সেখানে তিনি কী লিখে গেছেন তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক। তাঁরা জয়দেব দত্তের পরিবারকে যথাযথ নিরাপত্তা প্রদানেরও দাবি জানান বক্তারা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক জমাদ্দারের উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি রেজবি-উল কবির, সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মোসলেম হাওলাদার, উপজেলা বিএনপির সভাপতি নেতা ফরহাদ হোসেন মৃধা, বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি জাকির হোসেন মিরাজ, ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান,শিক্ষক সুন্দর আলী গাজী, জয়দেব কুমার দত্তের স্ত্রী সন্ধ্যা রানী দত্ত প্রমুখ।
গত ৩ আগষ্ট বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর জয়দেব দত্ত নিখোঁজ হন। এরপর গত ৫ আগষ্ট তালতলী থানার পুলিশ ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) অফিস থেকে জয়দেব কুমার দত্তের লাশ উদ্ধার করে। এ সময় ওই অফিসের টেবিলের উপরে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন, একটি চিরকুট ও টেবিলের নীচ থেকে দুটি কীটনাশকের বোতল উদ্ধার করে।
২০০৭ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরে জয়দেব দত্ত তালতলীর সমুদ্র উপকূলীয় তীরবর্তী এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগাম সতর্কতাসংকেত প্রচার করে শত শত মানুষের জীবন রক্ষা করেছিলেন। এ জন্য বিটিভির জনপ্রিয় বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র পক্ষ থেকে তাঁকে সিডরম্যান উপাধী দেয় এবং একটি মোটরসাইকেল দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি তাঁকে ‘জাতীয় রেড ক্রিসেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়।