ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় বর্নিতা হাওলাদার (১৪) নামে নবম শ্রেণি পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। দুই মাস আগে (৮ জুন) ওই কিশোরী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেঁচে যায়। গুরুতর আহতাবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে দুই মাস ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে শনিবার (১২ আগষ্ট) মৃত্যুর কাছে হার মানে কিশোরী বর্নিতা।
আত্মহত্যা করার আগে একটি চিঠি লিখে রাখে বর্নিতা। চিঠিতে তার মৃত্যুর জন্য তারই বিদ্যালয়ের কৃষি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ইন্দ্রজিত চন্দ্র দাসকে দায়ী করে বর্নিতা। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে শনিবার রাতেই রাজাপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষক ইন্দ্রজিত উপজেলার পশ্চিম ফুলহার গ্রামে রমেশ চন্দ্র দাসের ছেলে এবং বর্নিতা দক্ষিণ তারাবুনিয়া গ্রামের বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের মেয়ে ও পশ্চিম চাড়াখালী হাফেজ উদ্দিন মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার রোল নম্বর-১। শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ বর্নিতার মরদেহ তার নিজবাড়ী থেকে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠিয়েছে।
পুলিশ ও বর্নিতার বড়ভাই বিপ্লব হাওলাদার জানায়, দির্ঘ্যদিন যাবত ইন্দ্রজিত ও বর্নিতার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। বিষয়টি পরিবারের সবাই জানত। সম্প্রতি ইন্দ্রজিত অন্যত্র বিয়ের জন্য মেয়ে পছন্দ করে। এই খবর শুনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া বর্নিতা গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা (৮ জুন) ৭টার দিকে নিজ ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কিছু সময় ঝুলে থাকার পর আড়ার সঙ্গে বাঁধা ওড়নার অংশটি খুলে গিয়ে বর্নিতা নিচে পড়ে যায়। সেই শব্দ শুনে স্বজনরা এসে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ভান্ডারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চারদিন চিকিৎসার পর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ১২ জুন বর্নিতাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
সেখানে দুইমাস চিকিৎসার পর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে গত ৪ আগষ্ট বর্নিতাকে বাড়িতে নিয়ে আসে তার পরিবার। এর এক সপ্তাহ পর শুক্রবার বাড়িতে অবস্থার আরো অবনতি হলে শনিবার সকালে ভান্ডারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় স্বজনরা। সেখানে সকাল ১১টায় বর্নিতার মৃত্যু হয়।
বর্নিতা চিকিৎসাধিন থাকাবস্থায় অভিযুক্ত শিক্ষক ইন্দ্রজিত এলাকায় অবস্থান করলেও বর্নিতার মৃত্যুর পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তার মুঠোফোন নম্বর ০১৭১১-০০০০৭৮ বারবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজাপুর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, কিশোরী আত্মহত্যার ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রোববার ঝালকাঠি মর্গে পাঠানো হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।