বরিশালে বৈরী আবহাওয়ায় দুর্ভোগে নগরবাসী

এপ্রিল ২২, ২০১৭
Spread the love

বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশালে গত তিনদিন ধরে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। টানা তিনদিনের ঝোড়ো আবহাওয়া ও বর্ষণে নগরসহ জেলার সর্বত্র জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দূর্ভোগ। বৃহস্পতিবার রাতে শুরু হওয়া ঝড়-বৃষ্টি আজ শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। প্রবল বর্ষণে নগরীর নিম্নাঞ্চলসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সর্বাধিক ভোগান্তির সৃষ্টি করছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। আকাশে মেঘ জমলে কিংবা বাতাস ছাড়লেই বন্ধ হয়ে যায় নগরীর বিদ্যুৎ সরবরাহ। একই অবস্থা জেলার ১০ উপজেলায়।
এদিকে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বরিশাল নৌ-বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ পথে ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। গত তিনদিনের বজ্রপাতে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রামগঞ্জে বিরাজ করছে বজ্রপাত আতঙ্ক।
আজ শনিবার সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। সকাল ৯ টার পর শুরু হয় ঝড় ও বজ্রবৃষ্টি। বন্ধ হয়ে যায় নগরের অধিকাংশ ফিডারের বিদ্যুৎ সরবরাহ। ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় কাটাতে হয়েছে নগরবাসীকে। সকাল ৯টার পর থেকে প্রায় ৩-৪ ঘন্টা ১৯ ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলেও অধিকাংশ ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়নি।
নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ একটু বাতাস কিংবা বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ বিভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখেন। ঘন্টারপর ঘন্টা অপেক্ষা করেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায় না। বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বৃষ্টির সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকানোর কারণে সঞ্চালন লাইন বন্ধ রাখা হয়। বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কায় এ ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা।
বরিশাল ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর নির্বাহী প্রকৌশলী অমূল্য কুমার সরকার জানান, ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এমন অভিযোগ পুরোপুরি সঠিক নয়। বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হলে সরবরাহ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়। দুপুরের মধ্যে অধিকাংশ ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়েছে।
এদিকে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মো.আবদুল কুদ্দুস শনিবার বিকাল ৩টায় জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘন্টায় নগরীতে ১১৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া গত তিনদিনে বরিশালে বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৩০০ মিলিমিটার।
তিনি আরো জানান, আরো ২-৩. দিন বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো আবহাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।
প্রবল বৃষ্টিতে নগরীর নিম্নাঞ্চল পলাশপুর, রসূলপুর, চরবদনা, কলাপট্টি, চাঁদমারী এলাকাসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সদর রোড, বগুড়া রোড, মল্লিক রোড, কালিবাড়ি সড়ক, ফকিরবাড়ি ও কাউনিয়ার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃস্টি হয়েছে। বগুড়া রোড ও মল্লিক সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সিস্টার ডে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত ২-৩ দিন ধরে চরম ভোগান্তির মধ্যে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছে।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদী, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ ও বানারীপাড়া উপজেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, এসব উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় গত ৩ দিন ধরে সর্বোচ্চ দেড় ২ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২’র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী হেম চন্দ্র বৈদ্য জানান, ঝড়ের কারণে সঞ্চালন লাইনে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ায় তারাও বিদ্যুৎ সরবরাহ মহাজটিলতায় পড়েছে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বরিশাল নদী বন্দরে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ জন্য আজ সকাল থেকে আভ্যন্তরীণ রুটে ৬৫ ফুটের ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যান্য ছোট নৌযানকেও সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল নদী বন্দরের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা জানান, নদী বন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত থাকায় ৬৫ ফুটের নীচে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।