ঝালকাঠি প্রতিনিধি
আজ ১৪ নভেম্বর। বাংলাদেশের ইতিহাসে তথা ঝালকাঠিবাসির জন্য একটি ভায়াবহ দিন। এইদিনে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বোমা হামলা চালিয়ে ঝালকাঠির দুই বিচারককে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। আজ সেই ঘটনার একযুগ অতিবাহিত হল। ২০০৫ সালের এই দিনে ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের দুই বিচারক (সিনিয়র সহকারী জজ) সোহেল আহমেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ে নিহত হন। আদালতে যাওয়ার পথে জজশীপের গাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে দুই বিচারককে নৃশংশ ভাবে হত্যা করে জেএমবি। কর্মজীবনে সৎ এবং নিষ্ঠাবান এ দুই বিচারক হত্যার ঘটনা ঝালকাঠিবাসীকে আজও গভীর ভাবে শোকাহত করে। বিচারক হত্যার এক যুগ উপলক্ষে ঝালকাঠিবাসি চাইছে দেশ থেকে চিরতরে অপশক্তি বিনাশ হোক। দিনটি স্মরণে শোক আর শ্রদ্ধাভরে পালন করেছে ঝালকাঠি জেলা জজশীপ ও আইনজীবী সমিতিসহ সাধারন মানুষ।
এ উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় একটি শোক র্যালি পূর্ব চাঁদকাঠির জজ কোয়াটার সড়কে আসে (যেখানে বোমা হামলা হয়েছিল)। সেখানে বিচারকদ্বয়ের স্মরণে নির্মানাধীন স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পার্ঘ অর্পণ করা হয়। পরে নিহত বিচারকদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া মোনাজাত করা হয়।
জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বজলুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সায়েদুজ্জামান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ শামিমা আক্তার, ভারপ্রাপ্ত মূখ্য বিচারিক হাকিম রুবাইয়া আমেনা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ্সহ জজশীপের বিচারকগণ ও কর্মকর্তা কর্মচারী, পুলিশ প্রশাসন, আইনজীবী সমিতির সদস্যরা ও ঝালকাঠির গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। ঝালকাঠি আদালতের সরকারি কৌশুলি (পিপি) ও আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান রসূল কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন। বিকেলে আয়োজন করা হয়েছে দিবসটির আলোচনা সভা।
সেদিনের যা ঘটেছিল
দিনটি ছিল সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার। ঝালকাঠি শহরের পূর্বচাঁদকাঠি এলাকায় জজ কোয়াটারের রাস্তায় দুই বিচারক সোহেল আহমেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ে জজশীপের একটি মাইক্রোবাসে অপেক্ষা করছিলেন অপর এক জজ এম আউয়ালের জন্য। গাড়ি চালল সুলতান গিয়েছিলেন তাকে ডেকে আনতে। আর এ সময় সুযোগ বুঝে জেএমবির আত্মঘাতি সদস্য ইফতেখার হাসন আল মামুন অপেক্ষমান দুই বিচারককে একটি চিরকুট পড়তে দেয়। বিচারকরা যখন চিরকুটটি পড়তে থাকেন তখন মাইক্রোবাসের জানালার ফাঁক দিয়ে জঙ্গি মামুন শক্তিশালী বোমা ছুড়ে মারে। মূহূর্তের মধ্যে বিকট শব্দে গাড়িটি চুর্ন বিচুর্ন হয়ে যায়। এতে দুই বিচারকের শরীর কিছু অংশ দেহথেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনা স্থলেই মারা যান জজ সোহেল আহমেদ। বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান জগন্নাথ পাঁড়ে।
কোয়াটার থেকে বিলম্বে বের হওয়ায় এবং তাকে ডাকতে গিয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান জজ আউয়াল এবং গাড়ী চালক সুলতান। এদিন ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় জেএমবির আত্মঘাতি সদস্য মামুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নৃশংস হত্যার ঘটনায় গাড়ী চালক সুলতান হোসেন বাদী হয়ে ঝালকাঠি থানায় অস্ত্র ও বিষ্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ঝালকাঠি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদাল ২০০৬ সালের ২৯মে জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংলাভাই ও ঘাতক মামুনসহ শীর্ষ ৭ জঙ্গির ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন। উচ্চ আদালতও এ রায় বাহাল রাখে এবং ৬ জঙ্গির ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। বিচার চলাকালে পালিয়ে থাকে জেএমবির অপর এক সদস্য দন্ডপ্রাপ্ত আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফ। পরে সে গ্রেফতার হলে ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর খুলনা কারাগারে তারও ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
নিহত বিচারক সোহেল আহম্মেদের বাড়ি ভোলা জেলা শহরে এবং বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ের গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায়।