আয়না২৪ ঝালকাঠি প্রতিনিধি
কবরের সাথে ঘর বসতি। প্রিয় স্বজনদের মৃত্যুর পর কবর দেয়া হত ঘরের ভেতরেই। এটাই ছিল শত বছরের নির্মম বাস্তবতা। ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া বন্দর এলাকায় সরদার পাড়ার অবস্থান। এখানে শতাধিক পরিবারের বসতি। তাদের অধিকাংশ বাসিন্দাই মৎসজীবি। শত বছর ধরে এই সরদার পাড়ার মানুষের জন্য নির্ধারিত কোন কবরস্থান ছিলনা। তাই মৃত স্বজনদের বসত ঘরের ভেতরেই কবর দেয়ার রেওয়াজ চালু ছিল এখানে। অবশেষে স্থানীয় কিছু মানুষের উদ্দোগে স্থায়ী কবরস্থান পেয়েছেন সরদার পাড়ার মানুষ।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিকালে জেলা প্রশাসক মো: হামিদুল হক প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে এ কবস্থানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. শরীফ মো: ফয়েজুল আলম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া সিকদার, ভাইস্ চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনির প্রমুখ।
জানা গেছে, শত বছর পূর্বে কাঁঠালিয়ার আমুয়ার বিশখালী ও হালতা নদের মোহনায় জেগে ওঠা চরে বসতিস্থাপন করে বেঁদে সম্প্রদায়ের একদল মানুষ। তখন থেকে এই বেদে সম্প্রদায়ের কেউ মারাগেলে তাদের ভেলায় ভাসিয়ে দেয়ার রেওয়াজ চালু ছিল। পুরনো সেই রেওয়াজ এবং ঘন বসতির কারনে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় স্থায়ী কোন কবরস্থান গড়ে ওঠেনি সরদার পাড়ায়। কালের বিবর্তনে তারা এখন মৎসজীবি। পেশা পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিবর্তন এসেছে তাদের জীবনাচরনেও। কয়েক দশক যাবত তাদের মৃত স্বজনদের কবরে সমাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু নির্ধারিত কোন কবরস্থান না থাকায় ঘরের ভিতরেই কবর দেয়া হত মৃত স্বজনদের। তাই অনেকদিন যাবত এই সরদার পাড়ার বাসিন্দাদের দাবী ছিল একটি স্থায়ী কবরস্থানের।
উপজেলার পাটিখালঘাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রতন মিয়ার কোরিয়া প্রবাশী ছেলে মো. মিজানুর রহমানের অর্থায়নে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সম্প্রতি কবরস্থানের জন্য জমি ক্রয় করা হয়। সেখানেই অবহেলিত মানুষদের জন্য তৈরী করা হয়েছে স্থায়ী কববস্থান। এছাড়াও সরদার পাড়ার বাসিন্দাদের জন্য একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। কবরস্থানের জন্য সল্পমূল্যে জমি দিয়ে মানবতার এক অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন স্থানীয় কামিনী কুমার দাস।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, জেলার সর্ব দক্ষিনে নদী বেষ্টিত কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া সরদার পাড়ার মানুষের কবরস্থানের জন্য এতদিন কোন নির্ধারিত স্থান ছিলনা। বাধ্য হয়ে তারা এতদিন ঘরের ভিতরেই স্বজনের সমাহিত করতেন। আজ থেকে সরদার পাড়ার কেউ মারাগেলে সম্মানের সাথে তারা সমাহিত হবেন। কবরস্থান তৈরীতে সহায়তাকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানান জেলা প্রশাসক।