আয়না ২৪ টেক
বাংলাদেশ ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রতিবেশি দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গেছে।
বিশ্বের উন্নয়নশীল ৩২টি দেশের ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ওপর পরিচালিত জরিপে এসব দেশের প্রাপ্তবয়স্ক ৩৬ হাজার ৬১৯ জন ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। জরিপে বাংলাদেশের স্থান পেয়েছে এক হাজার মানুষের মতামত ।
পিউ রিসার্চের জরিপে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ৫৯ শতাংশ ইন্টারনেট গ্রাহক প্রতিদিন অন্তত একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এদিক থেকে ভারতের (৫৪ শতাংশ) চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭৬ শতাংশ । এ হিসেবে ২৪ শতাংশ মানুষের কোনো মোবাইল ফোন নেই।
এ জরিপে আরো বলা হয়, মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মাত্র ৬ শতাংশের নিজস্ব স্মার্টফোন আছে। আর ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিংবা তাদের স্মার্টফোন আছে এরকম দেশে ১১ শতাংশ মানুষ আছে । এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে (৮ শতাংশ) বাংলাদেশে এগিয়ে আছে ।
ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে- উত্তরদাতাদের ৬৯ শতাংশ পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ, ৫৬ শতাংশ রাজনৈতিক খবরাখবর এবং ২৬ শতাংশ সরকারি সেবার তথ্য জানতে এটি ব্যবহার করেন বলে জানান।
৬২ শতাংশ ব্যবহারকারী চাকরি খুঁজতে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রেও ভারতের (৫৫ শতাংশ) চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে। এখানে আরো বলা হয়,বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করেন প্রাপ্তবয়স্ক ইন্টারনেট গ্রাহকদের ৭৬ শতাংশ । এ ক্ষেত্রেও ভারতের (৬৫ শতাংশ) চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে । আর সবচেয়ে বেশি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেন ফিলিপাইনের মানুষ( ৯৩ শতাংশ)।
জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের কাছে শিক্ষা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, অর্থনীতি, রাজনীতি ও নৈতিকতা—এ পাঁচ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার কেমন প্রভাব ফেলে তা জানতে চাইলে – এ ক্ষেত্রে দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৫৬ শতাংশ শিক্ষায়, ৪৮ শতাংশ ব্যক্তিগত সম্পর্কে, ৫০ শতাংশ অর্থনীতিতে, ৩৮ শতাংশ রাজনীতিতে এবং ২৯ শতাংশ নৈতিকতায় ইন্টারনেট ভূমিকা রাখতে পারে বলে উত্তরদাতাদরা মতামত দেন।
এ রিসার্চ আরো বলছে, বাংলাদেশের মোবাইল ফোনে ছবি তোলা কিংবা ভিডিও ধারণ করে থাকেন দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ৬৫ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ভেনেজুয়েলা (৭৫ শতাংশ)। তবে খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠানো কিংবা চ্যাট করার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের ব্যবহার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এ হার কম (৬৭ শতাংশ)। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ফিলিপাইন (৯৮ শতাংশ)।
জরিপ বলছে, দেশের ৬ শতাংশ মানুষের নিজের স্মার্টফোন আছে। বাংলাদেশের চেয়েও পিছিয়ে আছে পাকিস্তান (৪ শতাংশ) ও উগান্ডা (৫ শতাংশ)। উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে বেশি নিজস্ব স্মার্টফোন ব্যবহার করে চিলির মানুষ, ৫৮ শতাংশ। আবার বাংলাদেশের ৭৬ শতাংশ মানুষের যেখানে নিজস্বমোবাইল ফোন আছে, সেখানে পাকিস্তানের ৪৭ শতাংশ মানুষের নিজের মোবাইল ফোন আছে।
পিউ রিসার্চ এর তথ্যমতে, দেশে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করেন ১৮-৩৫ বছর বয়সী ব্যক্তিরা। এ হার ১৫ শতাংশ। এর বেশি বয়সী গ্রাহক ৬ শতাংশ। ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন মাত্র ৮ শতাংশ । মাধ্যমিকের চেয়ে বেশি পড়াশোনা করেছেন, এমন মানুষই বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, ২৪ শতাংশ। এর চেয়ে কম পড়াশোনা করেছেন কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এমন মানুষ ৫ শতাংশ। ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারেন এমন ১৭ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আর ইংরেজি না জানালেও ৫ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, দেশে ইন্টরনেট বৗবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ২৭ লাখ । অন্যদিকে ১২ কোটি ১৮ লাখ মানুষের মোবাইল ফোন সংযোগ রয়েছে। আর মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, স্মার্টফোন ব্যবহার করেন দেশে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ।