আয়না ২৪ টেক
আইফোন ১ম জেনারেশন (২০০৭) থেকে আইফোন ১০(২০১৭) কেটে গেছে ১০টি বছর। ২০১৭, আইফোন এর ১০ বছরপূর্তি। ১০ তম বছরে আপল রিলিজ করল আইফোন এর ১৪দশ সংস্করন, আইফোন ১০। এবছর অ্যাপলের বর্তমান কর্নধার টিম কুক একইসাথে আইফোন ৮, আইফোন ৮ প্লাস ও আইফোন ১০ এর মোড়ক উন্মোচন করেছে গত ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭। যদিও অ্যাপল ডেলিভারি দেওয়া শুরু করবে ৩ নভেম্বর, ২০১৭ থেকে। আপনি যদি নতুন আইফোনটি দ্রুত আপনার হাতের মুঠোয় পেতে চান তাহলে আপনাকে জানিয়ে রাখি, প্রি-অর্ডার প্রসেস শুরু হচ্ছে আগামি ২৭ অক্টোবর, ২০১৭ থেকে।
আবির্ভাবঃ
আইফোন সবসময় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে থেকেছে প্রযুক্তি কথনের শীর্ষে। আইফোনের সিরিজ ও টাইমলাইন নিচে দেখে নিনঃ
2007 | iPhone (1st generation) |
2008 | iPhone 3G |
2009 | iPhone 3GS |
2010 | iPhone 4 |
2011 | iPhone 4S |
2012 | iPhone 5 |
2013 | iPhone 5S |
iPhone 5C | |
2014 | iPhone 6/6 Plus |
2015 | iPhone 6S/6S Plus |
2016 | iPhone SE |
iPhone 7/7 Plus | |
2017 | iPhone 8/8 Plus |
iPhone X |
টাইমলাইন থেকে ধারনা করা যায় এবার রিলিজ হওয়ার কথা আইফোন ৯। কিন্তু ১০ বছরপূর্তি উপলক্ষে অ্যাপল আইফোন ৯ কে তোয়াক্কা না করে একেবারে আইফোন ১০ রিলিজ করে দিল।
আইফোন ১০ এর আধুনিকতাঃ
অ্যাপল সবসময়ই আইফোনের নতুন সংস্করনে নানাবিধ নতুন ফিচার্স যুক্ত করে নতুনত্ব নিয়ে আসে। আইফোন ১০ এ ও তার কোন ব্যাতিক্রম নেই। সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে এতে যা আইফোন এর গত প্রসেসর থেকে ৭০% দ্রুত গতি সম্পন্ন। এবারই প্রথম বারের মত অ্যাপল নিজেদের তৈরি গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট ব্যবহার করেছে। তাররহীন ফাস্ট চার্য প্রযুক্তি, খুবই আধুনিক জিপিএস এর ব্যবহার, সবচেয়ে আধুনিক ব্লুটুথ প্রযুক্তির ব্যবহার আসলেই অ্যাপল এর মানকে অটুট রেখেছে।
এটি নতুন ও অত্যাধুনিক সব ফিচারে টইটুম্বুর। আসুন কথা বলা যাক আইফোন ১০ এর সবথেকে সেরা নতুনত্ব ডিসপ্লে ও এর ক্যামেরা নিয়ে।
ডিসপ্লেঃ
আইফোন ১০ এ ব্যবহৃত হয়ে ৫.৮ ইঞ্চি সুপার রেটিনা ডিসপ্লে। ডিসপ্লেটির চার কোনা বৃত্তাকার(Rounded)। ডিসপ্লে তে ক্রাশ প্রোটেকশনের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। থ্রি-ডি টাচ সাপোর্টেড ও এইচ ডি আর তো আছেই। ভাবছেন এ আর নতুন কি?
নতুনত্ব হচ্ছে আইফোনে প্রথম বারের মত ব্যবহার করেছে ওলেড(OLED) ডিসপ্লে। হয়ত জেনে থাকবেন ওলেড একটু স্যাচুরাটেড কালার দেখায়। কিন্তু অ্যাপল আশ্বস্ত করেছে এই ডিসপ্লেটি যথাযথভাবে বাস্তব ও সঠিক কালার প্রদর্শন করবে। ডিসপ্লেটি বেজেলহীন, বলতে গেলে উপরের পুরটা পৃষ্ঠ জুরেই ডিসপ্লে বিদ্যমান।
এর আগে আমরা হালের বাজেট স্মার্টফোন খ্যাত শাওমির “মি মিক্স” এ বেজেলহীন ডিসপ্লে দেখি। স্যামসাং এর “এস ৮” এ ও আমরা বেজেলহীন ডিসপ্লে দেখি যাকে স্যামসাং বলে ইনফিনিটি ডিসপ্লে। আইফোন এ এই প্রথম বারের মত ব্যবহৃত হয়েছে এই বেজেলহীন ডিসপ্লে এর প্রযুক্তি।
যদিও ডিসপ্লে এর উপরে দিকে স্পিকার ও ফ্রন্ট ক্যামেরার জন্য জায়গা দিতে গিয়ে অ্যাপল একটু অদ্ভুত ভাবেই ডিস্প্লেটিকে কেটেছে। কিন্তু তবুও ডিসপ্লের সৌন্দর্য খুব একটা নষ্ট হয়েছে বলে মনে হয়না। আপলের রেটিনা আর ওলেড প্রযুক্তির ব্যবহার ডিসপ্লেটিকে আসলেই অসাধারন নতুনত্ব দিয়েছে।
ক্যামেরাঃ
স্মার্টফোন ক্যামেরার জন্য আইফোন বরাবরই অতুলনীয়। অনেক শর্টফিল্ম ও নাটকে আইফোনের ক্যামেরার ব্যবহার হয়ে থাকে। সবসময়কার মত এবারও আইফোন এর ক্যামেরা স্পেসিফিকেশন হতাশ করেনি বরং আরো নতুনত্ব এনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার শীর্ষে রয়েছে। এর পেছনে রয়েছে ডুয়েল ক্যামেরা, দুটি ই ১২ মেগাপিক্সেল। একটি ওয়াইড এঙ্গেল আরেকটি টেলিফটো। ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স এর অ্যাপারচার ভাল্যু ১.৮ এবং টেলিফটো লেন্স এর ২.৪।
দুটি ক্যামেরাতেই পৃথকভাবে ৪ এক্সিস অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন রয়েছে যা শার্প ছবি তোলার জন্য অত্যন্ত উপকারি এবং কম আলোতেও ব্রাইট ছবি তুলতে সক্ষম। র-ফরম্যাট এ ছবি তোলা, এইচ ডি আর, প্যানেরোমা, পোর্ট্রেইট মোড তো আছেই। নতুন কি? ক্যামেরা দুটি পাশাপাশি না রেখে রাখা হয়েছে উপর নিচ করে। অ্যাপল এর ভাষ্য মতে এটি ছবি তোলার অভিজ্ঞতাকে বাড়িয়ে দিবে বহুগুণ।
ফ্রন্ট ক্যামেরাতে ব্যবহৃত হয়ে এক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি “ফেস রিকগনিশন”। সিকিউরিটির জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট এর পরিবর্তে এই নতুন প্রযুক্তি। ক্যামেরা ফেস এর উপর ৩০হাজার ডট নিয়ে আপনাকে আইডেন্টিফাই করবে। এতে বোঝা যায় ক্যামেরার দেখার গভীরতা কত বেশি। কতটুকু সিকিউরড? অ্যাপল জানিয়েছে আপনি এই ফেস আইডি আপনি পেমেন্ট মেথোড এর সিকিউরিটি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
প্রশ্ন থাকতে পারে যে বয়সের সাথে মানুষের চেহারার পরিবর্তন হয়, বিভিন্ন সিচুয়েশানে চেহারার পরিবর্তন হয় সেক্ষেত্রে কি হবে! ভয়ের কিছু নাই! আপনার আইফোন আপনাকে খুব ই ভাল চিনে। এতে ব্যবহৃত হয়েছে একটি অত্যাধুনিক ম্যাশিন লার্নিং চিপ যা সময়ের সাথে আপনার চেহারার পরিবর্তন খুবই ভালভাবে মনে রাখবে। আর হ্যা, স্মার্টফোনে এই প্রথম এই ধরনের অত্যাধুনিক চিপের ব্যবহার হল। ওহ বলাই হয়নি রাতের বেলা কি হবে? লো লাইটে আপনার স্ত্রী আপনাকে চিনতে ভুল করতে পারে কিন্তু আপনার গার্লফ্রেন্ড আইফোন ১০ নয়! 😛
ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনি “অ্যানিমজি” নামক এক মজাদার প্রযুক্তির মজা নিতে পারবেন। টকিং টম এর ফ্যান না এমন খুব কম ই পাওয়া যাবে! এই অ্যানিমজি কে বলা যায় তার ই অত্যাধুনিক সংস্করণ। আপনি কথা বলার সময় আপনার চেহারার মাসলগুলো ঠিক যেভাবে নড়াচড়া করে, অ্যাপ এ আপনার পছন্দের ডামি প্রানিটির ও ঠিক একইরকম মুখভঙ্গি দেখতে পাবেন! ইন্টারেস্টিং না?
আইফোনের আধুনিকতা বরাবরের মত এবারো অটুট থেকেছে। স্টিভ জবস (গতঃ ৫ অক্টোবর, ২০১১) সুদুরপ্রশারি চিন্তার ফল এখনো মানুষ পাচ্ছে।