আয়না২৪ প্রতিবেদন
পৌষ মাসের তিন ভাগের দুভাগ চলে গেছে। দেশে অনুভূত হচ্ছে না কনকনে শীত ! গত বছর ডিসেম্বরের শুরুতেই অনুভূত হয়েছিল তীব্র শীত। অবশ্য জানুয়ারিতে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রেখেছে শীত! কনকনে শীতে কাঁপতে হয়নি দেশবাসীকে। মাঝারি ধরনের শীত পড়লেও স্বাভাবিকের কাছেই ঘোরাফেরা করেছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ বছর শীত মৌসুমের গোড়াতেই বারবার হোঁচট খেয়েছে উত্তুরে হাওয়া। ভরা ডিসেম্বরেও শীত-শীত ভাবটা উধাও হওয়ার অবস্থা হয়েছিল। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শীতের মাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও গত বছরের মতো মানুষের হাড় কাঁপাতে পারেনি। এখন পর্যন্ত পুরো বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলতে পারেনি শীতকাল! এল নিনোর কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস জানায়, বাংলাদেশে জানুয়ারিতে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’টি মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আর দেশের অন্যত্র বয়ে যেতে পারে এক থেকে দু’টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। জানুয়ারি মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি/ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হাল্কা/মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। তবে সারাদেশে একটানা তিন থেকে চারদিন ঘন/মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। কিন্তু দেশে এখন পর্যন্ত তীব্র তো দূরের কথা, মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহই বয়ে যায়নি। তাপমাত্রার হ্রাস পাওয়া অবস্থায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যতই হ্রাস পাবে, ততই শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্যও হ্রাস পায়নি। শীত বৃদ্ধিতে সহায়ক বৃষ্টিও হয়নি। ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৭ ডিগ্রী সেলসিয়ামের মধ্যেই অবস্থান করছে। মাঝে মধ্যে কয়েকটি সেন্টারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলেও শীত বৃদ্ধিতে তা ভূমিকা রাখতে পারছে না।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীত এবার অনেক খামখেয়ালি আচরণ করছে। তার জন্য দায়ী করা হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা এল নিনো পরিস্থিতিকে। কারণ, প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়ায় প্রভাব ফেলেছে। ফলে বদলে গেছে ফিরতি পথের মৌসুমি বায়ুর চরিত্র। শীতেও সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে এবং তা উত্তুরে হাওয়ার সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে। গত মাসেও দু’টি নিম্নচাপের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল। আবহাওয়াবিদরা আরও বলছেন, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে আসা উত্তুরে হাওয়ার উপর ভারত ও বাংলাদেশে শীতের মাত্রা হ্রাস ও বৃদ্ধির বিষয়টি নির্ভর করে। এ বছর ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে ঠা-া হাওয়া আছড়ে পড়ে। এই পর্যায়ে যদি সাগরে কোন নিম্নচাপ তৈরি হয়, তা হলে তা উত্তুরে হাওয়ার পথে বাধা তৈরি করে। শুধু তা-ই নয়, সাগর থেকে জলীয় বাষ্প ঢোকার ফলে আকাশে মেঘ তৈরি হয়, দিনের তাপমাত্রা কমলেও রাতের তাপমাত্রা নামতে পারে না। অথচ, রাতে কনকনে শীত পড়তে গেলে মেঘমুক্ত আকাশ থাকতে হবে। আর চড়া রোদে দিনের বেলা মাটি গরম হওয়াও জরুরি। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়নি।
মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, সাইবেরিয়ান শীতল বাতাস প্রবেশ করার প্রভাবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দু’টি শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেবে। এ দু’টি শৈত্যপ্রবাহ মাঝারি থেকে তীব্র এবং মৃদু থেকে মাঝারি হতে পারে। সূর্য এখন দক্ষিণ গোলার্ধে আড়াআড়িভাবে কিরণ দিচ্ছে। এতে সূর্য গ্রীষ্মের তুলনায় শীতে এক-দেড় ঘণ্টা কম কিরণ দিচ্ছে। সে কারণে রাজশাহী, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গা শ্রীমঙ্গল, রংপুর ও ঢাকা বিভাগের বেশিরভাগ স্থানে একটু বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে।