• Home  / 
  • জাতীয়  / 

সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের ভাস্কর্য অপসারণ চায় হেফাজতে

ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৭
Spread the love

বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এবার ঢাকায় সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে নতুন নির্মাণ করা ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়েছে।

সংগঠনটির আমির আহমদ শফি সোমবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়ে বলেছেন, তাঁর ভাষায় গ্রিক দেবির মূর্তি স্থাপন করে বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যে আঘাত করা হয়েছে।

তবে এমন বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেছেন, ভাস্কর্য এবং মূর্তির পার্থক্য না বুঝে বিভিন্ন বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।

ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনের চত্বরে।

প্রধান গেট দিয়ে আদালত সীমানায় প্রবেশ করলেই চত্বরে এই ভাস্কর্য চোখে পড়বে।

কিন্তু এরইমধ্যে এই ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য তুলেছে কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এবং ইসলামপন্থী ছোট ছোট কয়েকটি দল।

কয়েকদিন ধরে তাদের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বক্তব্য দেয়া হয়।

সোমবার হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফি এক বিবৃতিতে বলেছেন, তাঁর ভাষায় গ্র্রিক দেবির যে মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে,সেটি বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আদর্শিক চেতনার বিপরীত।

তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, গ্রিক দেবি থেমিসের গায়ে শাড়ি পড়িয়ে, এটিকে বাংলাদেশের ঐতিহ্য প্রমাণের অপচেষ্টা করা হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।

এমন অবস্থানের ব্যাপারে যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মো: জুনায়েদ বাবুনগরী বলছিলেন, “আমরা ভাস্কর্য এবং কোনো সংস্কৃতির বিরোধী নই। বাংলাদেশের ঐতিহ্য বা ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে মিল রেখে ভাস্কর্যটি করা হলে আপত্তি ছিল না। কিন্তু এটি গ্রিক দেবিকে হায়ার করে এনে করা হয়েছে। সেজন্যই আমাদের আপত্তি।”

তবে এমন সব বক্তব্য যৌক্তিক নয় বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেছেন, সারাবিশ্বে যে ভাস্কর্যকে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে দেখা হয় সেটাই এখানে নির্মাণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ।

ভাস্কর্য এবং মূর্তির মধ্যে পার্থক্য বোঝা প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

“ভাস্কর্যটিতে দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করা হয়েছে ন্যায়বিচারের সূচক হিসেবে। দণ্ড বা শাস্তির সূচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তলোয়ার। আর চোখ বাঁধা রাখা হয়েছে, এর অর্থ হচ্ছে নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে হবে। রোমান আইন থেকেই আমাদের বিচারের বিষয়ের উৎপত্তি। সেজন্যই অন্যান্য দেশের মতো এই ভাস্কর্য করা হয়েছে।”

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেছেন, ” হেফাজতে ইসলামের দাবিকে এখন একটু পাত্তা দেয়া হলে তারা পরে দেশের সব ভাস্কর্য নিয়েই প্রশ্ন তুলবে”।

বাংলাদেশে এর আগেও বিভিন্ন সময় ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন বা দল থেকে ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষক নাসিমুল খবিরও মনে করেন, ভাস্কর্য এবং ধর্মীয় প্রতিমা মিলিয়ে ফেলে এসব বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলছিলেন, “ভাস্কর্য এবং ধর্মীয় প্রতিমাকে গুলিয়ে ফেলার একটা প্রবণতা আমাদের সমাজে আছে। সেই সুযোগ নেয় ধর্মীয় উগ্রবাদিরা।এখনও তাই হয়েছে”।

এদিকে হেফাজতে ইসলাম এই ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি নেয়ার হুমকিও দিয়েছে।