ছবিতে সাইনবোর্ডের বানান দেখুন। এ সাইনবোর্ডটি পড়তে কারো কোন সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হয় না। এটা কী ধরনের দোকান সেটাও বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু সাইনবোর্ডের শদগুলো বর্তমান বানান রীতি মেনে লেখা হয় নি।
বিদেশী শব্দের বানান এখন হ্রস্ব-ই কার দিয়ে লেখা হয়। এটা যেমন অনেকে ঠিকমত খেয়াল করছেন না, তেমনি বাংলা শব্দের বানানও শুদ্ধভাবে ব্যাকরণ মেনে লেখা হচ্ছে না বেশিরভাগ সময়।
বাংলা ভাষায় বানানের ক্ষেত্রে ইদানীংকালে ভুলের যে ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে, সে বিষয়টিকে অনেকে এক ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বলে বর্ণনা করছেন। ভাষাবিদরা বলছেন একেক জায়গায় একেক ধরনের বানান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলা একাডেমির বানান অভিধান থাকলেও পরিস্থিতি উন্নতির কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলা বানান নিয়ে এতোটা এলোমেলো অবস্থা এর আগে কখনো ছিল কি-না সেটি নিয়ে ভাষাবিদদের সংশয় আছে।
ঢাকার একটি স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী অকপটে স্বীকার করলেন যে বাংলা বানান নিয়ে তাদের দ্বিধা কাটছেই না ।
একজন শিক্ষার্থী বলছিলেন, ” ইংলিশ গ্রামারের চেয়ে বাংলা গ্রামার একটু বেশি কঠিন। একটু ভয় হয়। মাঝে-মধ্যে ভুল হয়, আবার মাঝেমধ্যে টিচারদের দেখিয়ে ঠিক করে নেই।”
বানানে শৃঙ্খলা আনা এবং শুদ্ধরীতি বজায় রাখার জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলা একাডেমি বানান অভিধান প্রণয়ন করে। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতির তেমন একটা উন্নতি চোখে পড়ছে না বিশেষজ্ঞদের। বিভিন্ন সময় বাংলা একাডেমি অনেক শব্দের বানান পরিবর্তনও করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিত ঘোষ জানালেন, বানানের পরিবর্তন অনেক ভাষার ক্ষেত্রেই হয়। কিন্তু অনেকে সে পরিবর্তন সম্পর্কে জানেনা ।
অধ্যাপক ঘোষ বলেন, ” ভাষা পরিবর্তনশীল। ভাষা বিজ্ঞানীরা একথা বলেন যে প্রতি ১৫-২০ কিলোমিটার পর-পর ভাষায় পরিবর্তন দেখা দেয়।”
তিনি বলেন, বাংলা ভাষায় বিদেশী শব্দের বানান এক সময় দীর্ঘ-ঈ কার দিয়ে লেখা হতো। কিন্তু এখন সেটি পরিবর্তন হয়ে হ্রস্ব-ই কার দিয়ে বানান করা হয়। তিনি বলেন বাংলা একাডেমির বানান রীতি সবাই অনুসরণ করছে না। সেজন্য এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
শুদ্ধ বানান চর্চার জন্য অনেকে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকরা বলছেন, বানানের ক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট যত্নবান হলেও শ্রেনিকক্ষের বাইরে নানা পারিপার্শ্বিকতা অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের বেশি প্রভাবিত করছে।
ঢাকার ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মাসুদ পারভেজ বলছেন বাংলাদেশের সবজায়গায় যদি বানানের একই নিয়ম অনুসরণ করা হতো তাহলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তৈরি হতো না। তিনি মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম – বিশেষ করে ফেসবুক এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।
মি: পারভেজ বলছিলেন, ” যখন তারা ফেসবুক ব্যবহার করে তখন তারা বানান সম্পর্কে ততটা সচেতন থাকে না । তারা সামাজিক যোগাযোগের উপর বেশি প্রাধান্য দেয়।”
এর ফলে বানানের ক্ষেত্রে এক ধরনের উদাসীনতা তৈরি হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলা একাডেমি বলছে বাংলা ভাষার একটি নিজস্ব বানান রীতি আছে এবং সে অনুযায়ী বানান অভিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। এ অভিধান অনুসরণের জন্য সবাইকে পরামর্শ দেয়া হয়।
শিক্ষকরা বলছেন, বাংলা বানান নিয়ে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হলে সেটি শুধরে নেয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে এ অভিধানের সহায়তা নেয়া।