নারায়ণগঞ্জে আইভীরই জয়

ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
Spread the love

আয়না২৪ প্রতিবেদন

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাখাওয়াত হোসেন খান। এদিকে বিজয়ী আইভী  তাঁর এই জয়কে জাতির জনক  বঙ্গবন্ধু   শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গ করেছেন। 

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার  এই ফলাফল  ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, মোট ১৭৪টি কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ​সেলিনা হায়াৎ​​ আইভী পেয়েছেন এক লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট। আর বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট। নির্বাচনে মোট দুই লাখ ৯৬ হাজার ৩৬ ভোট পড়েছে। যা মোট ভোটের ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে চলে ভোটগ্রহণ। প্রায় পাঁচ লাখ ভোটারের ভোটগ্রহণের এ বিশাল কর্মযজ্ঞে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটানার খবর পাওয়া যায়নি।
এতে প্রধান দুদলের প্রার্থী, রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি  ভোটাররাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
শান্তিপূর্ণ এ নির্বাচনে ভোট দিতে পেরে ভালো অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ভোটাররা। এসময় তাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। কম যাননি প্রবীণরাও। ছেলের কাঁধে চড়ে ১১০ বছর বয়সী ভোটারও এসেছেন ভোট কেন্দ্রে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী  সেলিনা হায়াৎ আইভী বাবার কবর জিয়ারত করে নিজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। সকাল ৯টায় শহরের মাসদাইর পৌর কবরস্থানে প্রয়াত বাবা আলী আহম্মদ চুনকার কবর জিয়ারত করে তিনি। এরপর সাড়ে নয়টায় ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেওভোগ শিশুবাগ স্কুল কেন্দ্রে নিজের ভোট দেন।
সকাল সোয়া ৮টার দিকে নগরীর ১৩নং ওয়ার্ডের মাসদাইরের আদর্শ স্কুল ভোটকেন্দ্রে নিজের ভোট দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান।
২টা ৪০ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন  স্থানীয় সাংসদ  শামীম ওসমান। এসময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তারা নৌকার পক্ষে স্লোগান দেয়। 

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর বাইরে এই নির্বাচনে মেয়র পদে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহবুবুর রহমান ইসমাইল (কোদাল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা) ও ইসলামী ঐক্য জোটের মুফতি ইজহারুল হক (মিনার) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

নির্বাচনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ১৭৪টি, ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩০৪টি। সব কটি ভোটকেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এই নির্বাচনে মোট পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ছিল ৩২২। এর মধ্যে দুজন বিদেশি পর্যবেক্ষক রয়েছেন বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। দেশি ১৬টি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে।

নির্বাচনে মোট ২০১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২৭ ওয়ার্ডে ২৭টি কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ছিলেন ১৫৬ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ৯টি পদে ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের জয় উৎসর্গ

এদিকে জয় পাওয়ার পর আইভী তাঁর এই  বিজয়কে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন।  তিনি বলেছেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, বিজয়ের মাসে আরেকটি বিজয় হবে।’বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় সেলিনা হায়াৎ আইভী এসব কথা বলেন।

 তিনি বলেন, ‘অগণিত মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার কারণে এই বিজয় সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যে আস্থা রেখে নারায়ণগঞ্জবাসীকে নৌকা উপহার দিয়েছেন, সেই নৌকার মান নারায়ণগঞ্জবাসী রেখেছেন বলে তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি, যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের প্রতি; যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের প্রতিও।’

আইভী  আরো বলেন, ‘একদম তৃণমূল নেতা-কর্মী থেকে সবাই আমার জন্য কাজ করেছেন। আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, দলমত-নির্বিশেষে সব স্তরের মানুষের প্রতি। সব দল ও ধর্মের মানুষ আমার জন্য কাজ করেছে এবং এই বিজয় এনে দিয়েছে।’

বিজিত প্রার্থী    সাখাওয়াতের সঙ্গে দেখা করা প্রসঙ্গে আইভী বলেন, ‘তিনি যদি অনুমতি দেন, তাহলে আমি কাল সকালেই তাঁর বাসায় যেতে চাই। তাঁর সঙ্গে বসে নাশতা খেতে চাই।’