আয়না২৪ প্রতিবেদন
গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকায় মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড নামের একটি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত নয়জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আহত বেশ কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজেও পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার সময় কারখানা ভবনের একাংশ হেলে পড়ে এবং কিছু অংশ ধসে পড়ে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাখাওয়াত হোসেনসহ পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস বিভাগ জানায়, ওই কারখানার নিচ তলায় ডায়িং সেকশনের কাজ চলছিল। সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে চার তলা ভবনের একাংশ ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ভেতরের কিছু অংশ ধসে পড়ে। এসময় কারখানার দেয়াল ও মেশিনারিজের নিচে চাপা পড়ে অন্তত নয়জন শ্রমিক মারা যান। আহত হন অর্ধশতাধিক।
আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় শরীফ মেডিক্যাল ও পপুলার হাসপাতালসহ আশেপাশের ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এছাড়া বেশ কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
টঙ্গী, গাজীপুর, কালিয়াকৈরসহ ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের দমকল কর্মীরা স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। ধ্বংসস্তুপের নিচে আরও হতাহত রয়েছেন কি না তা খোঁজে দেখা হচ্ছে। বিস্ফোরণের শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর থেকে এলাকাটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। বয়লার বিস্ফোরণের কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি। সরেজমিনে স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটির পর কারখানাটি আজ মঙ্গলবার খোলার কথা ছিল। এ জন্য গতকাল থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। দুপুরের পর ডাইং ইউনিটের বয়লার সেকশনটি চালু করা হয়। এতে ২৫-৩০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে বয়লারটির বিস্ফোরণ ঘটলে চারতলা ভবনের নিচতলা ও দোতলার দুই পাশের দেয়াল, দরজা-জানালা ও যন্ত্রাংশ উড়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। এতে কারখানার শ্রমিক ছাড়াও সামনের রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী লোকজন আহত হন।
কারখানাটির সামনের তৈজসপত্র ব্যবসায়ী মো. আ. রশিদ মিঞা বলেন, প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের কারখানার ভবনগুলো কেঁপে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে আশপাশের কয়েকটি কারখানার দরজা-জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। এতে শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার পরপরই ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে ঘটনার প্রায় দুই ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ এলেও রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত গ্যাসের সংযোগ চালু হয়নি বলে নয়াপাড়া বাজারের স্যানিটারি দোকানের কর্মচারী শাকিল আহমেদ জানান।
তদন্ত কমিটি গঠন
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান হুমায়ুন কবীর জানান, বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলামকে প্রধান করে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ডিসি জানান, কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের ভেতর তাদের রিপোর্ট জমা দেবে। এছাড়া মরদেহ দাফনের জন্য নিহতের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হবে।