আয়না২৪ প্রতিবেদন
জিয়া অরফানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হতে পারে বলে আশঙ্কা দলটির শীর্ষ নেতাদের। বেগম জিয়াকে কারাগারে যেতে হলে তাকে সাময়িকভাবে রাজনীতির বা্থইরে থাকতে হতে পারে। সেই সময় বিএনপির নেতৃত্বে দেবে কে- এ নিয়ে দলীয় নেতাদের মধ্যে অপ্রকাশ্য আলোচনা চলছে।
এসব আলোচনার সূত্র থেকে জানা যায়, যদি এমনটাই ঘটে তবে ওই সময় তিন বা পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিকে দল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে, যারা সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিয়ে দল পরিচালনা করবেন। তবে কারো কারো পরামর্শ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী চিকিৎসক জোবাইদা রহমানের নেতৃত্বে ওই কমিটি কাজ করুক। কারণ জিয়া পরিবারের কেউ নেতৃত্বে না থাকলে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিভক্তি দেখা দিতে পারে। তবে জোবাইদা রহমান নেতৃত্বে আসতে আগ্রহী নন বলে দলের একটি সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে পরামর্শ করতে সম্প্রতি বিএনপি সমর্থক এক বুদ্ধিজীবীর বাসায় দলের কয়েকজন নেতা বৈঠক করেছেন। সেখানে তিন সদস্যের একটি ‘আপদকালীন’ কমিটি করার পক্ষে মত দেওয়া হয়। জোবাইদা রহমানের প্রসঙ্গ নিয়েও ওই সভায় আলোচনা হয়। এ ছাড়া দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ কয়েক নেতা বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন।
ওই সূত্রে জানায়, স্থায়ী কমিটির তিনজন সদস্য, একজন ভাইস চেয়ারম্যান, একজন উপদেষ্টা কিংবা প্রভাবশালী একজন যুগ্ম মহাসচিবের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের ‘আপৎকালীন’ ওই কমিটি করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। অবশ্য কেউ কেউ পরমার্শ দিয়েছেন তিন স্তরের কমিটি করতে; যাতে ওই সময় আন্দোলন হলে এবং কেউ গ্রেপ্তার হলে বিকল্প কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত করা যায়।
এ ব্যাপারে বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ গণমাধ্যমেকে বলেছেন, আপৎকালীন কারা নেতৃত্বে আসতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বেগম জিয়াও চিন্তা-ভাবনা করছেন। আমরাও আলোচনা করছি। নেতৃত্বে কারা থাকবেন তা ঠিক হচ্ছে। তবে নেতৃত্বের শূন্যতা সৃষ্টি হবে না- এটা নিশ্চিত। এত বড় দলে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য লোকের অভাব হবে না।
দলের নেতারা জানিয়েছেন, কারাগারে যেতে হবে এমন প্রতিকূল বিষয় মাথায় রেখে এখন পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন বেগম জিয়া। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্যপদ পূরণ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, জেলা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের কাজও দ্রুত এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। এর মধ্যে স্থায়ী কমিটির তিন শূন্যপদসহ ছাত্রবিষয়ক ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক, দুজনকে আন্তর্জাতিক সম্পাদক এবং দুজন বিশেষ সম্পাদক পদে নিয়োগের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত।
জানা গেছে, মধ্য সারির নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়া আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছেন বেশি। সম্প্রতি কয়েকজনের সঙ্গে তিনি যা বলেছেন, তার মোদ্দা কথা হলো বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ নেতার ওপর তিনি এখন আর আস্থা রাখতে পারছেন না। অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির তরুণ ও মধ্য সারির নেতাদের তিনি বলছেন, ‘তোমাদের ওপর আস্থা আছে, আমি কারাগারে গেলে তোমাদের কাজ করতে হবে।’
দলের এক নেতা বলেন, বেগম জিয়ার ধারণা তার দলকে বিভক্ত করতে কয়েকজন নেতা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করছেন। এদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির দুজন নেতাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন তিনি। কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে পর্যবেক্ষণ করছেন। কয়েকজনের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনাও করবেন।
সাজা হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনীতিতে আগের মতো সক্রিয় থাকতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহে আছেন তাঁর আইনজীবীরা। কারণ রায়ে এমন কিছুও থাকতে পারে, যাতে তিনি রাজনীতিতে সরাসরি থাকতে পারবেন না।