আয়না ২৪
শ্রমিক অসন্তোষের মুখে সাভারের আশুলিয়ার ৫৫টি তৈরি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে পোশাক প্রস্তুতকারী ও রফতানিকারকদের সংগঠন (বিজিএমইএ)। মঙ্গলবার বিকালে বিজিএমইএর সভাকক্ষে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি জানান, এ অঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত সব কারখানা বন্ধ থাকবে। শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধ থাকার সময় বেতন পাবেন না শ্রমিকরা।
ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো, বার্ষিক ছুটির বিপরীতে এবং চাকরির বয়স ৫ বছর হলে বছরে একটি করে মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছেন তৈরি পোশাক শ্রমিকরা। সোমবার রাতের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। মঙ্গলবারও আশুলিয়ার অধিকাংশ পোশাক কারখানায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বর্তমানে দেশের তৈরি পোশাক খাত দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে। এ দুর্যোগ একা আমাদের নয়, দেশের জন্যও। এ দুর্যোগ আমাদের বাঁচা-মরার। পোশাক খাতের এ দুর্যোগ মোকাবেলায় তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সাবেক সভাপতি একে আজাদ, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, আতিকুল ইসলামসহ শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সিদ্দিকুর রহমান জানান, বিগত ৯ দিন ধরে আশুলিয়ায় শ্রম সমস্যা বিরাজ করছে। শুরুতে একটি কারখানায় সমস্যা থাকলেও পরে তা ৩ থেকে ৪টি কারখানায় ছড়িয়ে পাড়ে। তবে গত ৩ দিনে এই সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। বিষয়টি সুরাহার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। শেষে এ অচলাবস্থা নিরসনে বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র, নৌমন্ত্রী এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মালিক-শ্রমিকদের বৈঠক হয়।
সোমবারের এ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। শ্রমিকরা কাজে ফিরেননি। উল্টো তাদের অযৌক্তিক আন্দোলন আগের দিনের চেয়ে আরও বেগবান হয়ে অন্যান্য কারখানায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার থেকে এসব কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন। আমাদের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য আশুলিয়া এলাকায় তাদের কারখানাগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হলেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক, আমরা যখন বৈশ্বিক ও আর্থিক দ্বিমুখী চাপের মধ্যে থেকে টিকে থাকার সংগ্রামে রয়েছি- ঠিক তখন অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে শুরু হয়েছে নানা অপতৎপরতা। বিশেষ করে আমাদের শান্ত শ্রমিক গোষ্ঠীকে উসকানি দিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে বহিরাগতদের উসকানিতে আশুলিয়া এলাকার শ্রমিক ভাই-বোনরা নতুন মজুরি কাঠামো গঠন ও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। কর্মবরিতি পালন করছেন। অথচ এ মুহূর্তে নতুন মজুরি কাঠামো গঠনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
অদৃশ্য শক্তির ইন্ধনে শ্রমিক অসন্তোষ : সাভারের আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন ও অসন্তোষের পেছনে একটি অদৃশ্য শক্তির ইন্ধন রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সোমবার রাতে রাজধানীর মিন্টু রোডে নৌপরিবহনমন্ত্রীর বাসভবনে কারখানা মালিক, শ্রমিক ও সরকার এ তিন পক্ষের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সবাই কাজে যাবেন। যারা কাজ করবেন না তারা বেতন পাবেন না। তারপরও যদি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসে তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যে অদৃশ্য শক্তি শ্রমিকদের এ আন্দোলনের ইন্ধন দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করা হবে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ মহল শ্রমিকদের সমস্যার বিষয়ে অবগত আছেন। আশা করছি, শ্রমিকরা যেসব সমস্যা তুলে ধরেছেন তা শিগগিরই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।
তিনি বলেন, সাভারের আশুলিয়া এলাকায় আগামী ৩ বছরে কোনো বাড়ির মালিক বাসা ভাড়া বাড়াতে পারবেন না। আর যদি বাড়ান তাহলে সংশ্লিষ্ট থানায় জানালে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও যেসব কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা রয়েছে তা মালিক পক্ষের সঙ্গে বসে সমাধান করা হবে।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, নৌপরিবহনমন্ত্রী মো. শাজাহান খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাভারের সংসদ সদস্য ডা. এনাম আহমেদ, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক, র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ, এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সাবেক সভাপতি একে আজাদ, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামসহ শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।