আয়না২৪ প্রতিবেদন
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকে এক লাখ টাকার ওপরে আমানতে আবগারি শুল্ক না বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান।
তিনি বলেছেন, ব্যাংকের আবগারি শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে যে হারে সমালোচনা হচ্ছে তাতে সরকার প্রস্তাবিত আবগারি শুল্ক থেকে পেছন ফিরবে (ব্যাক)। জাতীয় সংসদে এ নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে, সে সময় ব্যাংকের আমানতের ওপর শুল্ক আগেরটা বহাল রাখা হতে পারে।
শনিবার রাজধানীর গুলশান-২ এর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত বাজেটোত্তর এক আলোচনা সভায় অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন।মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) উদ্যোগে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সভার প্রধান অতিথি এম এ মান্নান বলেন, এখনও ব্যাংকে আমানতের উপর ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ আছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এক লাখ টাকা পর্যন্ত শুল্ক জিরো শতাংশ করা হয়েছে। এক লাখ টাকার ওপরে যাদের আমানত রয়েছে শুধু তাদের আমানতের উপর শুল্ক ৩০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা জানি ব্যাংকে মোট আমানতকারীর আমানত ৮০ শতাংশই এক লাখ টাকার নিচে। এ হিসাবে তারা শুল্ক থেকে উল্টো রক্ষা পেত।
`তারপরও যেভাবে আলোচনা, সমালোচনা হচ্ছে- তাতে এটা নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। জাতীয় সংসদে নিশ্চয়ই এটা নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে আলোচনার প্রেক্ষিতে এই অতিরিক্ত শুল্কারোপ থেকে পিছু হটবে। আমি ব্যক্তিগত ভাবেও এটা নিয়ে কথা বলব।`
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন বলেন, কোন বিবেচনায় ব্যাংকের আবগারি শুল্ক বাড়ানো হলো বোধগম্য নয়। সুপ্ত ও গুপ্ত জিনিসটা সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এই খাত থেকে খুব বেশি টাকা আসে না। তারপরও বলব, অনেক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। আর বেশি সমালোচিত হওয়ার আগেই প্রস্তাবিত শুল্ক প্রত্যাহার করা মঙ্গল হবে।
তিনি বলেন, `১৫ শতাংশ ভ্যাট বাস্তবসম্মত। তবে এটা আদায়ের সিস্টেমকে আরও উন্নত করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বসতে হবে, আলোচনা করতে হবে।`
`কষ্ট অব ডুয়িং বিজনেজ এ আমরা খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। কিন্তু বাজেটে এ নিয়ে কোর আলোচনা নেই। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হোক আর দুর্নীতি হোক বিনিয়োগ যে কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সেটা এড্রেস করতে হবে।`
সাবেক গভর্নর বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ফান্ডিংয়ের নামে অনাচার হচ্ছে। এর মাধ্যমে টাকাও পাচার হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং ও ফান্ড ট্রান্সফারের নামে যা হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
আবগারি শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে ড. ফরাসউদ্দীনের সমালোচনাকে সমর্থন করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আবগারি শুল্প বৃদ্ধি ব্যাংকে আমানতকারীদের একপ্রকার `গুপ্ত হামলা’। এর মাধ্যমে সরকারের ইমেজ দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এজন্য আর বেশি ইমেজ ক্ষুণ্ন করতে না চাইলে বাড়তি শুল্কারোপ প্রত্যাহার করা সমীচীন হবে।
`অর্থনীতিতে কিছু কালো মেঘ দেখছি। এটা ঘনীভূত হওয়ার আগেই সমাধান জরুরি।`
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, দেশে রফতানির অবস্থা ভালো না, রেমিটেন্স ফল করছে। আগামীতে এই বিপর্যয় আরও বাড়লে ভবিষ্যতে কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না। এছাড়া বৈশ্বিক অর্থনীতি দুর্বল। আমরা মার্কিন বাজারে চায়না ও ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না পেরে বাজার হারাচ্ছি। কমে যাচ্ছে আমাদের মার্কেট শেয়ার। সামনের দিনগুলোতে সাবধানে অতিক্রম করতে হবে। আর্থিক সংস্কার করতে হবে।
`ব্যবসায়ীদের টার্নওভার ৮০ লাখ থেকে দেড় কোটি পর্যন্ত ছাড় দেয়া উচিত হয়নি। এতে কর নেট বাড়ানোর যে চিন্তা তা বাধাগ্রস্ত করবে,` মত দেন এই অর্থনীতিক।
এমসিসিআই সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মনসুর ও বিআইডিএস এর গবেষক নাজনীন আহম্মেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।