আজ ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস

মার্চ ২৫, ২০১৮
Spread the love

আয়না২৪

আজ ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। আর এই স্বাধীনতা দিবস যা ২৬শে মার্চ হিসেবেও পরিচিত। ১৯৭১ সালের এদিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। যেদিন শুরু হয়েছিল এক সর্বাত্মক জনযুদ্ধ, ২৬৬ দিনের সেই জনযুদ্ধের সফল পরিণতিতে বিশ্বের বুকে জন্ম নিয়েছিল একটি নতুন রাষ্ট্র, আমরা পেয়েছিলাম  স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। দেশের ৪৬তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। আর ২৬ শে মার্চকে জাতীয় বা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় ১৯৮০ সালে। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে একাত্তরের এই দিনে যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন আজ।

একাত্তরের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন,

“এটাই হয়তোআমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উত্খাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।

চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বাংলায় যে বার্তা পাঠান সেটি হলো, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি।”

এর আগে ৭ই মার্চে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণা দিয়ে গোটা জাতিকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করেন।

এরপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, ধ্বংস ও পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে ৯ মাসের মরণপণ লড়াইয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। বরাবরের মতো গোটা জাতি আজ শোক ও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে অবনতচিত্তে স্মরণ করছে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের। শ্রদ্ধা জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার জাতীয় নেতা আর বাংলার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। আজ থেকে ৪৪ বছর আগের ঠিক এমনি এক ভোররাতে পাক বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। ঘোরতর ওই অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই শুরু হয়েছিল একাত্তরের আজকের এই দিনে।

স্বাধীনতা দিবস কর্মসূচী

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ সোমবার মহান স্বাধীনতা দিবসটি পালন করা হবে। সব ভবনে ও শহরের প্রধান সড়কগুলোতে উড়বে জাতীয় পতাকা। সকালে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দলমত নির্বিশেষে সেখানে হাজির হবে লাখো মানুষ। পুষ্পস্তবক অর্পণের পরই সাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। সকল সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ, ক্রোড়পত্র, সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশিত হবে, সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হবে।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  ও রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ যে পৃথক বাণী দিয়েছে,

প্রধানমন্ত্রীর বাণী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি স্মরণ করেন ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন, জাতীয় চার নেতাকে। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী যে কোনো অপতত্পরতা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, রায় দেয়া হচ্ছে এবং রায় কার্যকরও শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি সবাইকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে শপথ নেয়ার আহ্বান জানান।

 

রাষ্ট্রপতির বাণী

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দেশবাসী ও প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে স্বাধীনতা দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস।

আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় দিন। তিনি বলেন, সেই স্বপ্ন পূরণে বর্তমান সরকার ‘ভিশন ২০২১’ ঘোষণা করেছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে একটি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে সবাই অবদান রাখবেন—এ প্রত্যাশা করি।

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়না২৪ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সকল দেশবাসীর সাথে স্মরণ করছে মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ বীরকে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব নেতার স্মৃতির প্রতি। শহীদের পরিবার ও নৃশংসতার শিকার মা-বোনদের প্রতি আন্তরিক সংহতি ও সহমর্মিতা।