ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় খোলা বাজারে চাল বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ডিলাররা সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত ৩০ টাকা দরের চাল বাইরে বেশি দামে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ফলে দরিদ্রদের জন্য সরকারের এই কর্মসূচির সুবিধা উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষ পাচ্ছেন না।
অপরদিকে কোন প্রচার প্রচারণা না থাকায় দরিদ্র মানুষ জানছেন না এ সুবিধার কথা।
এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আতপ চাল বিতরণ করা হলেও রাজাপুরের খাদ্যগুদাম থেকে সিদ্ধ চাল বিতরণ করা হচ্ছে। যার মানও বেশ ভাল। ওমমএস ডিলারদের কাছে যে চাল ৩০ টাকায় পাওয়া যায় বাজারের কিনতে হলে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় তা পাওয়া যাবে। আর সেই সুযোগে ডিলাররা বিভিন্ন কৌশলে দরিদ্র মানুষদের বঞ্চিত করে ওএমএস এর চাল বেশি মূল্যে বাইরে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
প্রতিদিন একজন ডিলার ২০০ জন গ্রাহককের কাছে চাল দিতে পারেন। কাগজ কলমে ২০০ জনের নাম লিপিবদ্ধ করা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ২০০ ব্যক্তি চাল পাচ্ছেন না। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ডিলাররা আগেই গ্রাহকদের ভুয়া নাম ঠিকানা তালিকাভুক্ত করে রাখছেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চাল বিতরণের কথা থাকলেও দুপুরের পর কোন ডিলারকেই চাল দিতে দেখা যায় না।
অপরদিকে রাজাপুর উপজেলায় ওএমএস কার্যক্রমের শুরুর পর থেকে কোন প্রচার প্রচারনা না থাকায় সাধারণ মানুষ জানতে পাড়ছে না কোথায় কখন চাল বিতরণ করা হয়। প্রতিটি গ্রাহকের নাম ঠিকানা ও স্বাক্ষর অথবা টিপসহি সংরক্ষন করার বিধান থাকলেও তা মানছেন না ডিলাররা। তারা শুধু গ্রাহকের নাম লিখে রাখছেন। গ্রাহকের পিতা বা স্বামীর নাম লিখছেন না। ফলে ওই গ্রাহক চাল নিয়েছে কিনা তা যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের বাদুরতলা এলাকার নদী ভাঙ্গনের শিকার আবদুল হাকিম। তার পরিবারে ৬ জন সদস্য রয়েছেন। ৫০ টাকায় চাল কিনে খাওয়ার ক্ষমতা তার নেই। অথচ এই দরিদ্র পরিবারটি জানেনা সরকার ৩০টাকা দরে খোলা বাজারে চাল বিক্রি করছে। এমনি রাজাপুর সদরের অনেক বাসিন্দাই জানে না খোলা বাজারে চাল বিক্রির খবর। রাজাপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে জনসংখ্যা প্রায় দেড়লাখ। উপজেলা সদরের বাইরে অধিকাংশ মানুষই নিম্নবিত্ত। তারা সরকারের এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যক্তির কারনে।
সরেজমিন শরিবার রাজাপুর ডাকবাংলো মোড়ের ডিলার আবদুল মালেক এর কাছে চাল বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গ্রাহকদের নামের তালিকা দেখান। তাতে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ১৩৮ জনকে তিনি চাল সরবরাহ করেছেন। তার কথার সত্যতা জানতে আশপাশের দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে এ কথার কোন সত্যতা পাওয়া যায় নি। দেড় ঘন্টার মধ্যে ১৩৮ জনকে চাল সরবরাহ করতে হলে সেখানে গ্রাহকদের বিশাল লাইন থাকার কথা কিন্তু আশপাশের কোন লোকজন এখানে চাল নিতে আসা গ্রাহকদের ভিড় দেখতে পায়নি।
উপজেলায় নির্ধারিত ৩ জন ডিলার হলেন ডাকবাংলো মোড়ের ডিলার আ. মালেক ও থানা সড়কের আবদুস সালাম ও বাজার এলাকায় আবুল কালাম। বিকেল ৫টার আগেই দোকান বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমাদের নির্ধারিত দুইশ জনের মধ্যে চাল বিতরণ শেষ হয়ে গেছে তাই দোকান বন্ধ করে দিয়েছি।
জানতে চাইলে রাজাপুর খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আমার জানামতে কোন অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। যদি কোন ডিলার অনিয়ম করেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় হবে।
এ ব্যপারে রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা বেগম পারুল বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।