মনসুর হাল্লাজঃ মরমী প্রেমের শ্রেষ্ঠ শহীদ

জানুয়ারি ১২, ২০১৯
Spread the love

অনিন্দ্য আফরোজ

প্রখ্যাত মরমী সাধক মানসুর আল হাল্লাজের নাম আমরা কম-বেশি সবাই শুনেছি।একদিকে তিনি ছিলেন মহান  সাধক কবি অন্যদিকে ছিলেন দার্শনিক। তিনি মুসলিম দার্শনিক ও সাধক ছিলেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে আল্লাহর সন্ধানের ওপর জোর দিতেন তিনি। তাঁর পথ ছিল ‘সর্বজনীন রহস্যবাদী অর্ন্তদৃষ্টি’।তাই কেবল মুসলিম সম্প্রদায় নয় সমগ্র মানব জাতির জন্য উদ্বিগ্ন ছিলেন হাল্লাজ।

হাল্লাজের  ‘আনাল হক্ক’ তত্ত্বের জন্য তিনি সুপরিচিত। এই বাণী উচ্চারণের জন্য তিনি দীর্ঘ ও অদ্ভূত এক বিচারের সম্নুখিন হয়েছিলেন। জন্মদ্রোহিতার অভিযোগ এনে বিচারে প্রায় এক দশক বাগদাদের একটি কারাগারে অন্তরীণ রাখার পর ৯২২ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ জনসমক্ষে তত্কালীন সকল ফুকাহায়ে কেরামের ফতোয়ার ভিত্তিতে সরকারি বিচারকদের নির্দেশে তাঁকে হত্যা করা হয়। সুফি সাধনার ইতিহাসে মনসুর হাল্লাজ হলেন মরমী প্রেমের শ্রেষ্ঠতম শহীদ ।

আরো পড়ুন…..     শামস তাবরিজির অজানা প্রেমের রসায়ন

জন্ম ও বেড়ে ওঠা

পুরো নাম আবুল মুঘীত আল-হুসাইন বিন আল হাল্লাজ। হাল্লাজের জন্ম ৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ইরানের ফারস্ প্রদেশে।
হাল্লাজের বাবা ছিলেন সুতার কারিগর।ছোট বেলায় হাল্লাজ নিজেও এই পেশায় ছিলেন তাই তাঁর নামের শেষে হাল্লাজ এসেছে। হাল্লাজ মানে হলো সুতা প্রস্তুতকারী। পরিবার সূত্রে তাঁরা ছিলেন সুন্নি মুসলিম।

শৈশবে হাল্লাজের বাবা তাঁকে নিয়ে যান চলে যান আরবদের প্রতিষ্ঠিত বাগদাদের টেক্সটাইল নগরী ওয়াসিতে। তখন ওয়াসিতের বেশিরভাগ মানুষ ছিল সুন্নি ও হানবলি সম্প্রদায়। আর শিয়ারা ছিল  সংখ্যালঘু। ওয়াসিতের একটি স্কুলে কোরান পড়ে হাল্লাজ মাত্র ১২ বছর বয়সে হাফেজ হন।

ছোট বেলায়ই হাল্লাজ মরমী আত্মানুসন্ধানের গভীর টান অনুভব করেছিলেন। হাল্লাজ আরেক সূফি সাধক জুনায়েদ বাগদাদী এবং আমর-আল-মাক্কীর শিষ্য হলেন। কিন্তু পরবর্তীতে দুই গুরুই দুজনেই তাঁকে পরিত্যাগ করেন। ঐতিহাসিকরা বলছেন, সাহল আল-তাশতারি নামে আরেক সাধকও হাল্লাজের একজন গুরু ছিলেন। কিন্তু হাল্লাজের কঠোর ধ্যান ও সাধনায় তাঁর গুরুরাও অনুজ্জ্বল হয়ে যান।

হাল্লাজ অল্প  বয়সে  বিয়ে করেন।এরপর তিনি মক্কায় যান হজব্রত পালনের উদ্দেশে।মক্কায় তিনি রোজা অবস্থায় এবং সম্পূর্ণ নীরবতার সঙ্গে কেবলামুখী হয়ে এক অতিবাহিত করেন। এরপর  মক্কা নগর ত্যাগ করে দীর্ঘ সফরে সময় বের হন।পথিমধ্যে শিক্ষাদান এবং লেখালেখিতে মন দেন।  

কোরআনকে তিনি সুফিতাত্ত্বিক ও মরমী উপলব্ধির নিরিখে আত্মীকৃত করেন।  শুরু হয় তাঁর ভেতরে সুফি ও মরমী প্রেমের রহস্য অনুসন্ধান। পরমকে কাছে পাওয়ার বিশেষ পথের গভীর টান  অনুভব করেন তিনি।  বেরিয়ে পড়েন গুরুর সন্ধানে। সাধনা চলতে থাকে একাকীত্বের পথ ধরে। এভাবে সাধনায় তিনি সর্বোচ্চ  স্তরে পৌঁছলেন। তারপর অনায়াসে বলেন, ‘আনাল হক’ আনাল মানে আমি আর হক মানে সত্য।মানে ‘আমিই  সত্য’।

মানসুর হাল্লাজ বিশ্বাস করতেন যে, একমাত্র আল্লাহ -তাআলাই পারেন উনার নিজের একত্বের ঘোষণা দিতে। অপরপক্ষে মানুষের ইবাদত শুধুমাত্র তাঁর হুকুমের প্রতিফলন, তাঁর আদেশের সামনে মাথা নত করা। ভালবাসা মানে প্রিয়জনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা, নিজের আমিত্বকে পুরোপুরি অস্বীকার করা আর নিজেকে তাঁর রঙে রাঙিয়ে নেওয়া । আল্লাহতে তিনি এতটা গভীরভাবে নিমগ্ন হতে পারতেন যে, অনেক সময় নিজের নাম পর্যন্ত স্মরণ করতে পারতেন না।

মানসুর বিশ্বাস করতেন যে আল্লাহর সঙ্গে আত্মিক মিলন সম্ভব। আবার এটাও বিশ্বাস করতেন যে তিনি নিজে তাঁর সঙ্গে এক হয়ে মিলে গেছেন।

তৎকালীন অনেক সুফিসাধক মনে করতেন, সাধারণ মানুষের কাছে মরমীবাদের নিগুঢ়তত্ত্ব প্রকাশ করা উচিত নয়। কিন্তু মনসুর হাল্লাজ  তা প্রকাশ করেছেন প্রকাশ্যে। কখনো তাঁর লিখনি কখনো শিক্ষার ভেতর দিয়ে। এতে তাঁর  অনেক সুফি শত্রু তৈরি করেন।

যখন হাল্লাজ ‘আনাল হক’বললেন তখন তাঁর শত্রুরা প্রচার করলো আনাল নিজেকে আল্লাহ দাবি করছে। আনাল বললেন,মা ফি জুবাতি লাআলা। অর্থ্যাৎ ‘আমরে পোশাকের নিচে আল্লাহ ছাড়া কিছু নেই।’ আল্লাহর সঙ্গে তাঁর মিলিত হওয়ার এই বাসনার কারণে তৎকালীন  মুসলিম একেশ্বরবাদী  পন্ডিতরা  তাঁকে ‘ছদ্মবেশী খ্রিস্টান’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

আরো পড়ুন…………জালালউদ্দীন রুমীঃ আত্মার কবি

হাল্লাজের চিন্তা ও দর্শন

হাল্লাজ কেবল সুফি সাধকই ছিলেন না। একাধারে তিনি ছিলেন  মরমি সাধক, বিপ্লবী চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক এবং দার্শনিক। তিনি গদ্য এবং পদ্য আকারে প্রচুর লেখালেখি করেন। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ ‘কিতাব আল-তাওয়াসিন’।

এই বইতে দুটি সংক্ষিপ্ত অধ্যায় আছে আল্লাহ-তায়ালা এবং ইবলিশের কথোপকথনের ব্যাপারে। যখন ইবলিশ হযরত আদমকে (আ.) সেজদা করতে অস্বীকার করে, অথচ তা ছিলো আল্লাহ তায়ালার সরাসরি নির্দেশ। এই ব্যপারে মানসুর হাল্লাজ তাঁর বইয়ে বলেন, f you do not recognize God, at least recognise His sign, I am the creative truth —Ana al-Haqq—,because through the truth, I am eternal truth. অর্থ্যাৎ ‘তুই যদি খোদাকে নাই চিনতে পারলি, কমপক্ষে তাঁর নিদর্শনকে তো চিনতে পারতি’!

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো তিনি নাকি হজ করার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। বাস্তবিকপক্ষে তিনি নিজেই তিনবার হজ পালন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁর কথা বলেছেন ছিলো হজের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে। তিনি হজের  অর্ন্তমর্মের পক্ষে ছিলেন।
তাঁর মতবাদের সারমর্ম ছিল, সমগ্র মানবজাতির এক নিগূঢ় অর্ন্তদর্শন আছে, এরই সাহায্যেই তিনি স্রষ্টাকে অন্তরের অন্তস্থলে খুঁজেছেন এবং অন্যরাও যাতে  তেমনিভাবেই  তা খোঁজেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ঐশ্বরিক বাস্তবতায় পৌঁছানোর জন্য গৎবাধা আনুষ্ঠানিক ধর্মকর্মের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে।

তিনি ছুটে বেড়ান সাধারন মানুষকে ইসলামের প্রেমময়তা শিক্ষা দেওয়ার জন্য এবং সবখানেই তিনি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পান আর শাসক গোষ্ঠী ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরাগভাজন হন। মনসুর একা বেরিয়ে পড়েন ছোট্র নৌকা নিয়ে । সাগর পাড়ি দিয়ে পেীছান ভারতে । গুজরাট, সিন্ধু হয়ে  যান চীনে । সবখানেই তিনি তার স্বভাব অনুযায়ী হাজার হাজার সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশেন,কথা বলেন,ধর্মের অপার সৌন্দর্যকে ব্যখ্যা করেন ।মনসুর আবার ফিরে যান বাগদাদে ।  তিনি সবাইকে বলতেন: ‘যদি নিজেকে সবকিছু থেকে বিযুক্ত করা যায় তাহলে পৌঁছে যাওয়া যায় সেই অলৌকিকতায়, যেখানে কিছুই বিযুক্ত নয় আর, কিছুই নয় সম্পৃক্ত’ । একপর্যায়ে মনসুর উচ্চারন করেন তার সবথেকে ভয়ংকর অথচ সুন্দর শব্দগুচ্ছ — ‘ আনাল হক’ । ‘আমিই সত্য’। তার এই উচ্চারনে কেঁপে উঠে বাগদাদ।এমকি  মুসলিম জগত।

মনসুরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেন ‘ আল্লাহ সবখানে এবং সবকিছুতেই । আল্লাহ আমার মাঝে ও । তাই আমিই সত্য’ কিন্ত প্রথা গত ধর্মব্যবস্থা তার ব্যখ্যায় খুশি হয়নি । তাঁকে ১১ বছর আটক  রেখে দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড।

এমনকি তাঁর চিন্তার পরিসর কোনো সম্প্রদায়ের প্রচলিত বিশ্বাসেরও ঊর্ধ্বে ছিলো, পুরো মানবতার জন্য উদ্বিগ্ন ও ব্যাকুল ছিলেন হাল্লাজ। এ জন্য তিনি দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করে খোরাসান, তুর্কিস্তান, সিন্ধু, ভারত, চীন প্রভৃতি মুসলিম-অমুসলিম অঞ্চল ঘুরে ঘুরে তাঁর  দর্শন প্রচার করেন।

হাল্লাজের বিচার

বাগদাদে তাঁর ধর্মীয় শিক্ষা সাধারণ মানুষদের আবেগকে জাগিয়ে তুলতে সমর্থ হয় এবং এই শিক্ষার প্রভাবে সেখানে ক্রমশ সংগঠিত হয় নৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। এতে শিক্ষিত ও শাসক শ্রেণির মধ্যেও তাঁর অনেক প্রতিপক্ষ তৈরি হয়।

মনসুর হাল্লাজের এই নিগূঢ় সত্য উপলব্ধির ফলে তাঁর শত্রুরা প্রচার করতে থাকলো সে নিজেকে আল্লাহ দাবি করেছে। আর এতে শাসক গোষ্ঠী হাল্লাজের মতবাদে ভীত হন। তাই তারা তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতা ও আব্বাসীয় শাসনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন । ৯০৮ খৃস্টাব্দে আব্বাসীয় খলিফার বিরুদ্ধে সুন্নি সংস্কারকদের ক্ষমতা দখলের ব্যর্থ চেষ্টার পর হাল্লাজকে বাগদাদ নগরী ছেড়ে যেতে হয়। ৯১৩ খৃস্টাব্দে হাল্লাজ আটক হন। এরপর ১১ বছর কারাবাসের পর তাঁকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

হত্যার পর তাঁর দেহ  টুকরো টুকরো করা হয়। তখন আব্বাসীয় খলিফা আল মুকতাদির অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। শেষে তাঁর দেহকে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তারপর তাঁর দেহভস্ম বাতাসে মিলিয়ে ফেলা হয়। মনসুর হাল্লাজ   অনন্তের সঙ্গে মিশে যেতে চেয়েছিলেন। নাধনা করেছিলেন পরমাত্মার সঙ্গে মিলনের। এভাবেই পরমের সঙ্গে তিনি প্রকাশ্যেই মিলে গেলেন।

যখন তার হাত, পা, জিহ্বা, আর সবশেষে মাথা কেটে ফেলা হয়, তখনো তিনি উচ্চারণ করছিলেন ‘আনাল হক (আমিই পরম সত্য)। ’ সবশেষে যখন মাথা কেটে ফেলা হয়। তিনি খোদার সাথে তার গভীর সম্পর্কের প্রমান দিতে চেয়েছিলেন এমনকি তাকে হত্যা করে ফেলতেও বলেছিলেন। তিনি নিজের মৃত্যুদণ্ডকে স্বেচ্ছায় বরন করে বলেছিলেন.‘সেই এক স্বত্তার সঙ্গে মিলনেই প্রকৃত আনন্দ।’

হাল্লাজকে যখন বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়, একজন সূফি তাকে জিজ্ঞেস করেন, প্রেম কি?। তিনি জবাব দেন, ‘তুমি আজ, কাল, আর পরশুদিন তা নিজ চোখেই দেখবে’। সেদিন তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তার পরের দিন তার দেহাবশেষ পুরানো হয়, আর তার পরের দিন তার দেহভস্ম বাতাসে মিলিয়ে ফেলা হয়। তৎকালীর সূফি চিন্তাবিদ আত্তার(রা.) বলেন যে, “এটাই প্রেম”। যখন উনার পা কেটে ফেলা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘এই পা দিয়ে আমি দুনিয়ায় চলাফেরা করতাম, এখন জান্নাত তো মাত্র এক কদম দুরে; পারলে সেই পা কাটো’। আর যখন হাত কেটে ফেলা হয়, তখন তিনি সেই কাঁটা বাহুর রক্ত মুখে মেখে নেন। কেন এমন করলেন- জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দেন, ‘আমার শরীর থেকে অনেক রক্ত পাত হয়েছে, তাই আমার মুখ হলুদে দেখাচ্ছে, আমি নিজের মুখ ফ্যাকাশে দেখাতে চাই না (যেন মনে হয় যে আমি ভয় পাচ্ছি)।

প্রকৃতপক্ষে হাল্লাজকে জানতে হলে সুফিতত্ত্বকে গভীরভাবে জানতে হবে। জগতের তাত্ত্বিকভেদ ও দর্শনকে সবিস্তারে জেনে উপলব্ধি করতে হবে। মহান দার্শনিক সক্রেটিস যেমন পরম, চরম সত্য উচ্চারণ করে প্রহসনের বিচারে মৃত্যুদণ্ডের শিকার হন।মনসুর হাল্লাজও তেমনই একজন  যিনি সত্য প্রকাশের  জন্য শহীদ হন।

 

মনসুর আল হাল্লাজের কবিতা কিছু কবিতা

 

আমার নয়নজুড়ে তোমার ছবি
..
তোমার আহ্বান ধ্বনিত হচ্ছে আমার ঠোঁট-মারফত,
আমার কলবে তোমার বাস
তাহলে, কোন স্থান থাকতে পারে, যেখানে অনুপস্থিত তুমি?

 

আমিই ‘সে’ যাকে ভালোবাসি

.আমিই ‘সে’ যাকে ভালোবাসি
আর যাকে ভালোবাসি, ‘সে’ই আমি:
আমরা দুটি আত্মা
বাস করছি একদেহে।
তোমরা যদি আমার দিকে তাকাও,
তাকে দেখতে পাবে,
আর যদি তার দিকে তাকাও,
দেখতে পাবে আমাদের দুজনকেই।
.
.

আমার বিশ্বস্থ বন্ধুরা, হত্যা করো আমাকে –
.
আমার বিশ্বস্থ বন্ধুরা, হত্যা করো আমাকে
কেননা, নিহত হবার ভেতরেই নিহিত আছে আমার বেঁচে থাকা।
প্রেম সেটাই যখন তুমি দাঁড়িয়ে আছো
তোমার কাঙ্ক্ষিতের সামনে
যখন বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছে তোমার সমুদয় নিজস্বতা;
তখন তার গুণাবলীই হয়ে ওঠে তোমার প্রকৃত বৈশিষ্ট্য।
তোমার আর আমার মাঝখানে, শুধু আমি আছি।
আমিটাকে সরিয়ে নাও, তাহলেই শুধু তুমি থাকবে।

 

সাঁতার থামাচ্ছি না
.
প্রণয়-সমুদ্রে আমি সাঁতার থামাচ্ছি না 
জেগে উঠছি ঢেউশীর্ষে, তারপর তলিয়ে যাচ্ছি
এক্ষুণি ঢেউ আমাকে টিকিয়ে রাখছে, আর তার পরক্ষণেই ডুবে যাচ্ছি নিচে;
প্রেম আমাকে সেখানেই বয়ে নিচ্ছে যেখানে নেই কোনও সমুদ্রসৈকত।
.
তোমার জন্যই
.
তোমার জন্যই আমি ত্বরিতে ছুটছি স্থল ও জলভাগের ওপর দিয়ে:
তোমার জন্যই, পার হচ্ছি মরুভূমি আর দুভাগ করছি পাহাড়,
আর সবকিছু থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছি মুখ,
যতক্ষণ না সেই মোকামে পৌঁছানোর সময় হচ্ছে
যেখানে তোমার সাথে আমার দিদার হবে একা।