অনিন্দ্য আফরোজ
বীর সম্রাট আলেকজান্ডার বিশ্ব জয়ের পর আক্ষেপ করে বলেছিলেন, জয় করার মতো পৃথিবীর আর কোনো দেশই বাকি রইল না!বিশ্বজীয় আলেকজান্ডারের শিক্ষক মহাজ্ঞানী ও আধুনিক রাষ্ট্রদর্শনের জনক মহামতি অ্যারিস্টটল সম্পর্কেও এমন কথা প্রযোজ্য। কেননা জ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই যে তিনি যেদিকে আলো ফেলেননি।‘পলিটিকস’ (Politics) তাঁর গ্রন্থ আধুনিক রাষ্ট্রনীতির সূচনা করেছিল।
বিখ্যাত এই গ্রন্থের নাট্যতত্ত্ব, কাব্যতত্ত্বেরও ভিত্তি স্থাপন করে।এজন্য আধুনিক জীবনবিজ্ঞানেও জনক হিসেবে তাঁকেই মনে করা হয়। তিনি একাধারে রাষ্টবিজ্ঞান পাশাপাশি বহু দার্শনিক তত্ত্বেরও প্রবক্তা। তাঁর চিন্তা, জ্ঞান মনীষা প্রায় দুই হাজার বছর ধরে মানব সভ্যতাকে বিকশিত করে। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সে সবের গুরুত্ব ফুরায়নি। বরং তা এখনো আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পথ দেখাচ্ছে অ্যারিস্টটলিয় দর্শন।
জন্ম
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪ অব্দে থ্রেসের অন্তর্গত স্তাজেইরা শহরে জন্ম এই মহাজ্ঞানী অ্যারিস্টটলের। বাবা নিকোমাকাস ছিলেন চিকিৎসক। শৈশবে অ্যারিস্টটলের পড়াশোনা গৃহে । ১৭ বছর বয়সে বাব-মাকে হারিয়ে গৃহত্যাগ করেন তিনি। ঘুরতে ঘুরতে তিনি আজকের গ্রিসের এথেন্স নগরে এসে উপস্থিত হন। সেই সময় এথেন্স ছিল দর্শন ও জ্ঞানের নগর। কারণ, এখানেই জন্ম নিয়েছিলেন দর্শনের আদিগুরু মহামতি সক্রেটিস। সক্রেটিসের একনিষ্ঠ শিষ্য ছিলেন আরেক মহান দার্শনিকযিাঁকে ভাববাদী দর্শনের জনক বলা হয় সেই প্লেটো। প্লেটো এখানে গড়ে তুলেছিলেন পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাত নতুন একাডেমি। অ্যারিস্টোটল এথেন্সে এসে প্লেটোর শিষ্যত্ব নিলেন এবং ভর্তি হলেন একাডেমিতে। অল্পদিনের মধ্যেই নিজের যোগ্যতায় তিনি হয়ে উঠলেন একাডেমির সেরা ছাত্র। প্লেটোও তাঁর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হলেন।
আরো পড়ুন..সত্যদ্রষ্টা দার্শনিক সক্রেটিস
শিক্ষাগ্রহণ ছাড়া এখানে নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করতেন অ্যারিস্টটল। যেমন, তর্কবিদ্যা, অধিবিদ্যা, প্রকৃতি বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও নীতিশাস্ত্র। অল্পদিনের মধ্যেই তাঁর গভীর জ্ঞান, অসাধারণ পাণ্ডিত্যের কথা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। অ্যারিস্টোটলের এই অসাধারণ প্রতিভা ও পাণ্ডিত্য সম্পর্কে ম্যাসিডনের রাজা ফিলিপও তা জেনেছিলেন। ফলে রাজার ছেলে আলেকজান্ডারের শিক্ষার ভার অর্পণ করেছিলেন তিনি অ্যারিস্টোটলের ওপর। তখন অ্যারিস্টটল অষ্টাদর্শী যুবক।
আলেকজান্ডার যখন ১৩ বছরের কিশোর, রাজা ফিলিপের আমন্ত্রণে অ্যারিস্টটল এসে তার শিক্ষার ভার গ্রহণ করেন। বলা যায়, শ্রেষ্ঠ গুরুর দিগ্বিজয়ী ছাত্র! প্রাচীন ঐতিহাসিকদের ধারণা, অ্যারিস্টোটলের শিক্ষা উপদেশই আলেকজান্ডারের অদম্য মনোবল, লৌহকঠিন দৃঢ় চরিত্র গড়ে তুলতে তাঁকে সক্ষমতা দিয়েছিল। বস্তুত, একজনের মধ্যে ছিল সমগ্র পৃথিবী জয় করে তার ওপর প্রভুত্ব করার সুতীব্র ইচ্ছা। অন্যজনের ছিল জ্ঞানের নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করে পৃথিবীকে প্রগতির পথে ধাবিত করা।
অ্যারিস্টটলের প্রতি রাজা ফিলিপেরও ছিল গভীর শ্রদ্ধাবোধ। শুধু শিক্ষক হিসেবে নয়, যথার্থ জ্ঞানী হিসেবেও তাকে সম্মান করতেন। অ্যারিস্টোটলের জন্মস্থান স্তাজেইরা কিছু দুর্বৃত্তের হাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেখানকার মানুষ বন্দি জীবন যাপন করছিল। রাজা ফিলিপ অ্যারিস্টোটলের ইচ্ছায় কেবল শত্রুসেনার কবল থেকেই স্তাজেইরা উদ্ধার করেননি, ধ্বংসসতূপের মধ্য থেকে শহরকে নতুন করে গড়ে তুলেছিলেন।
অ্যারিস্টটল একাধারে মহাজ্ঞানী, অন্যদিকে সফল শিক্ষক ছিলেন। এ জন্য গুরুর প্রতি মাবীর আলেকজান্ডারের ছিল অগাধ শ্রদ্ধা।আলেকজান্ডার বলতেন, বাবার কাছ থেকে আমি পেয়েছি আমার জীবন আর গুরুর কাছ থেকে পেয়েছি জীবনকে সফল করার জ্ঞান।
এ জন্য মহামতি অ্যারিস্টটল যখন জীবন বিজ্ঞানসংক্রান্ত গবেষণারত ছিলেন, শিষ্য আলেকজান্ডার তাঁর সহায়তার জন্য বহু মানুষকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাদের কাজ ছিল নানা ধরনের মাছ, পশু,পাখি, জীবজন্তুদের জীবন পর্যবেক্ষণ করা, তার বিবরণ সংগ্রহ করে অ্যারিস্টটলের কাছে পাঠানো। এছাড়া আলেকজান্ডার দেশ-বিদেশের যেখানেই কোনো পুঁথি কিংবা পাণ্ডুলিপির সন্ধান পেতেন তা যে কোনো মূল্যে সংগ্রহ করে গুরুর হাতে তুলে দিতেন।
আলেকজান্ডার যখন এশিয়া জয়ের জন্য তাঁর সৈন্যদের নিয়ে বের হন, অ্যারিস্টটল তখন এথেন্সে ফিরে যান। ওই সময় এথেন্স ছিল শিল্প সংস্কৃতি শিক্ষার পাদপীঠ। এখানেই ‘লাইসিয়াম’ নামে স্কুল স্থাপন করন অ্যারিস্টটল। তখন তার বয়স ৫০। স্কুলের কাছেই ছিল গ্রিক দেবতা লাইসিয়ামের মন্দির।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ অব্দে আলেকজান্ডারের আকস্মিক মৃত্যু হলে অ্যারিস্টটল এতো বছর যে বীর ছাত্রের ছত্রছায়ায় জীবন-যাপন করতেন তাতে বিপর্যয় নেমে আসে। কয়েকজন অনুগত ছাত্রের কাছ থেকে সংবাদ পেলেন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হচ্ছে। সক্রেটিসের মর্মন্তুদ পরিণতির কথা জানা ছিল অ্যারিস্টটলের। তাই গোপনে তিনি এথেন্স ত্যাগ করে হইরিয়া দ্বীপে আশ্রয় নেন। কিন্তু এই স্বেচ্ছানির্বাসনের যন্ত্রণা বেশিদিন ভোগ করতে হয়নি অ্যারিস্টটলকে। ৩২২ খ্রিষ্টপূর্বে তার মৃত্যু হয়।
দ্য পলিটিকস
তাঁর পলিটিকস লেখা হয়েছে আজ থেকে দুই হাজার ৩০০ বছর (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৫-৩২২ অব্দে) আগে, কিন্তু এই গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা আজও শেষ হয়নি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র-শিক্ষক, স্বৈরতন্ত্র-গণতন্ত্র ইত্যাদি বাস্তবিক শাসনব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মগ্ন পণ্ডিতবর্গ এবং রাজনৈতিক দর্শনের আলোচকেরা এই একুশ শতকে এসেও অ্যারিস্টটলের পলিটিকস বাদ দিয়ে অগ্রসর হতে পারেন না। আমরা যে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সরকারের শ্রেণিবিভাগ দেখছি দার প্রবিক্তা অ্যারিস্টল।
পলিটিকস হলো তার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় লাইসিয়ামের শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা লেকচার নোটের গ্রন্থিত রূপ। এই গ্রন্থের শুরুতে অ্যারিস্টটল রাষ্ট্র কী, তার লক্ষ্য কী এসব প্রশ্রের জবাব খুঁজেছেন: বলেছেন, রাষ্ট্র হলো মানুষের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সমাজ (কমিউনিটি), তার লক্ষ্য সর্বোচ্চ মঙ্গলসাধন, কেননা মানবজাতি সর্বদা কাজ করে মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে। ওই সময় গ্রিস ছিল বিভিন্ন নগররাষ্ট্রে বিভক্ত একটি অঞ্চল। তাই রাষ্ট্র বলতে তিনি বুঝাতেন, একেকটি পলিস বা নগর। গ্রিক ভাষায় তাঁর গ্রন্থটির নাম পলিতিকা, মানে পলিস বা নগরের মানুষের জীবনের সমস্ত বিষয়ের আলোচনা। অ্যারিস্টটলের মতে, প্রতিটি নগররাষ্ট্র হলো মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনযাপনের স্বাভাবিক সভ্য রূপ এবং সর্বোত্তম ব্যবস্থা, যার মধ্য দিয়ে মানুষের মানবিক সামর্থ্যের বাস্তবায়ন ঘটবে।‘ম্যান ইজ অ্যা পলিটিক্যাল অ্যানিমেল’ মানুষ সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের এটি হলো বিখ্যাত উক্তি -এর তাৎপর্য হলো, ব্যক্তিমানুষ স্বভাবতই একটি পলিটিক্যাল কমিউনিটির অংশ হতে চায়, যে কমিউনিটির লক্ষ্য সব মানুষের সর্বোচ্চ মঙ্গলসাধন করা। অ্যারিস্টটলের বিচারে মানুষের এই বৈশিষ্ট্য স্বভাবজাত বা প্রকৃতিগত। তবে সেই পলিটিক্যাল কমিউনিটি বা রাষ্ট্রকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, মানুষ যেন তার স্বাভাবিক সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে গোটা জনগোষ্ঠীর মঙ্গলসাধনে অংশ নিতে পারে।
কিন্তু এক্ষেত্রে তাঁর প্রশ্ন ছিল রাষ্ট্র সেটা নিশ্চিত করবে কীভাবে? অ্যারিস্টটলের মত: আইন ও ন্যায়বিচারের দ্বারা। এ প্রসঙ্গে অ্যারিস্টটল বলছেন, ‘মানুষ, যদি সে খাঁটি হয়, প্রাণীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু আইন ও ন্যায়বিচার থেকে বিচ্ছিন্ন হলে সে হয় প্রাণীকুলের মধ্যে নিকৃষ্টতম, কারণ সশস্ত্র অন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক।’ অ্যারিস্টটল এখানে বলছেন, মানুষ জন্ম থেকে কয়েকটি অস্ত্র প্রাকৃতিকভাবে পেয়ে যায়: কথা বলা ও ন্যায়-অন্যায় বিচার করার ক্ষমতা। এই দুটি অস্ত্রে সজ্জিত কোনো মানুষ আইন ও বিচারের অধীন না হলে সে হয় পলিটিক্যাল কমিউনিটির জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী।
রচনাবলী
পলিটিকস-এ অ্যারিস্টটল লিখেছেন: সরকার তখনই ভালো সরকার, যখন তার লক্ষ্য হয় সমগ্র জনগোষ্ঠীর মঙ্গলসাধন। আর খারাপ সরকার হলো সেই সরকার, যে শুধু নিজের স্বার্থের কথা ভাবে। আইনের শাসনভিত্তিক সরকারের ধারণা প্রথম গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন অ্যারিস্টটল। তিনি গোষ্ঠীতন্ত্র ও গণতন্ত্রের পার্থক্য নির্দেশ করতে গিয়ে শাসকদের অর্থনৈতিক অবস্থানের ওপর জোর দিয়েছেন। বলেছেন, গোষ্ঠীতন্ত্রে ধনিক গোষ্ঠী গরিবদের স্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে শাসন করে। আর গণতন্ত্রে ক্ষমতা থাকে অভাবী লোকদের হাতে, তারা ধনীদের স্বার্থ অগ্রাহ্য করে। রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র, গণতন্ত্র ইত্যাদি শাসনব্যবস্থার তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করে অ্যারিস্টটল সাব্যস্ত করেছেন, অধিকাংশ বাস্তবিক শাসনব্যবস্থাই খারাপ, গণতন্ত্র খারাপের তালিকায় সবচেয়ে কম খারাপ, অথবা বাস্তবিক শাসনব্যবস্থাগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম।
দার্শনিক অ্যারিস্টটল সারা জীবন যে সমস্ত রচনা করেন, মৃত্যুর আগে তা তাঁর আরেক শিষ্য থিওফ্রাস্তোসের হাতে দিয়ে যান। থিওফ্রাস্তোর পর সেই সব রচনাবলীর উত্তরাধিকারী হন আরেক শিষ্য নেলেওস। নেলেওসের মৃত্যুর পর তার ছেলেরা সেই সব রচনাসমূহ লোহার সিন্দুকে ভরে অ্যারিস্টোটলের সমাধির পাশে পুঁতে রাখেন। এরপর ২০০ বছর পর রোমের সেনারা গ্রিস দখল করার পর সেই পুঁথি উদ্ধার করে রোমে নিয়ে আনে। তখন সমস্ত পাণ্ডুলিপি জীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। বহু চেষ্টায় সে সব পাণ্ডুলিপির অনুলিপি তৈরি করা হয় এবং তার ভিত্তিতেই অ্যারিন্টটলের রচনাবলী প্রকাশিত হয়। বিষয়বস্তু অনুযায়ী তাঁন র রচনাবলীকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে তর্কবিদ্যা, অধিবিদ্যা (Metaphysics), প্রকৃতিবিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র, অলংকারতত্ত্ব ও কাব্যতত্ত্ব।
তাঁর রচনার সংখ্যা প্রায় এক হাজার। তবে এর বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে যায়। সামান্য যা কিছু উদ্ধার করা গেছে তা থেকে নহজেই অনুমান করা যায় কত বড় প্রতিভাবান ছিণের তিনি।
তার রচনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মেটাফিজিকস (অধিবিদ্যা) এবং এথিক্স (নীতিশাস্ত্র) এই দুটি বিষয়। এরমধ্যে তিনি মত দিয়েছেন, জীবন গতিশীল এবং ক্রমাগত তার বিকাশ ঘটছে। এই সমস্ত রচনার মধ্যে অনেক নির্ভুল তত্ত্ব থাকলেও জ্যোতির্বিজ্ঞান ও পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে যুক্তির চেয়ে কল্পনার ও অযৌক্তিক ধারণার প্রভাবই বেশি। এর কারণ কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছিলেন তিনি। যেমন তিনি বলেছিলেন, যদি একই সঙ্গে একটি ভারী ও একটি হালকা বস্তুকে ওপর থেকে একসঙ্গে ফেলা হয় তবে ভারী বস্তুটি আগে ভূমিতে পড়বে। কিন্তু কয়েকশ বছর পর বিজ্ঞানী গ্যালিলিও প্রমাণ করলেন যে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে দুটি বস্তুই একই সঙ্গে মাটিতে পড়বে।
এছাড়া অ্যারিস্টোটল বিশ্বাস করতেন, পৃথিবীর প্রত্যেক বস্তুই স্থির। তাই তাকে গতিশীল করার জন্য বল প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রেও অ্যারিস্টোটলের অধিকাংশ মতামত ছিল নিয়ে মতবিরোধ আছে।আবার তিনি লিখেছিলেন পৃথিবী স্থির। তাকে কেন্দ্র করে সৌরজগতের চাঁদ তারা সূর্য জ্যামিতিক পথে ঘুরছে। গ্যালিলি প্রথম এই ধারণাকে ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করেন। তাঁর অভিমত ছিল চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। পরে প্রমাণিত হয়েছে চাঁদের কোনো আলো নেই।
অ্যারিস্টোটলের এসব মতামত ভ্রান্ত হলেও কয়েক শতাব্দী ধরে এসব বক্তব্য সমাজকে চালিত করেছে। এ জন্য তাঁকে কোনোভাবেই অভিযুক্ত করা যায় না। পরবর্তীকালের মানুষের দায়িত্ব ছিল তাঁর গবেষণার যথাযথ মূল্যায়ন করা। কিন্তু সেটা করতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল।
সমস্ত ভ্রান্তি থাকা সত্ত্বেও অ্যারিস্টটল মানব ইতিহাসের এক শ্রেষ্ঠতম প্রজ্ঞাময় ব্যক্তি। যার উদ্ভাবিত জ্ঞানের আলোয় রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, যুক্তিবিদ্যা, অধিবিদ্যা সমৃদ্ধ হয়েছে। মানুষ নিজেকে সমৃদ্ধ করার পখ পেয়েছে এবং মহত্তর পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে ।